মৌলবাদের বিরুদ্ধে কঠোর মোদী

বাংলাদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে ধর্মীয় মৌলবাদ, অসহিষ্ণুতা এবং হিংসার বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দেবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর একান্ত আলোচনাতেও অগ্রাধিকার পেতে চলেছে এই প্রসঙ্গটি। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বাংলাদেশ যাওয়ার প্রাক্কালে ভারতের সংখ্যালঘু ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে নয়াদিল্লিতে বৈঠক করে মোদী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন— সাম্প্রদায়িকতাকে কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। উন্নয়নের মাধ্যমে উগ্র মৌলবাদীদের বিচ্ছিন্ন করতে হবে। সীমান্তের ও পারের জন্যেও সেই একই বার্তা নিয়ে তিনি শনিবার ঢাকার বিমানে উঠতে চলেছেন। শীর্ষ সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকেই বাংলাদেশের তরুণ সমাজের কাছে এই জরুরি বার্তা দিতে চান মোদী।

Advertisement

অগ্নি রায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৫ ০৪:২১
Share:

বাংলাদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে ধর্মীয় মৌলবাদ, অসহিষ্ণুতা এবং হিংসার বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দেবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর একান্ত আলোচনাতেও অগ্রাধিকার পেতে চলেছে এই প্রসঙ্গটি।

Advertisement

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বাংলাদেশ যাওয়ার প্রাক্কালে ভারতের সংখ্যালঘু ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে নয়াদিল্লিতে বৈঠক করে মোদী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন— সাম্প্রদায়িকতাকে কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। উন্নয়নের মাধ্যমে উগ্র মৌলবাদীদের বিচ্ছিন্ন করতে হবে। সীমান্তের ও পারের জন্যেও সেই একই বার্তা নিয়ে তিনি শনিবার ঢাকার বিমানে উঠতে চলেছেন। শীর্ষ সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকেই বাংলাদেশের তরুণ সমাজের কাছে এই জরুরি বার্তা দিতে চান মোদী।

এমন একটা সময়ে প্রধানমন্ত্রীর বিমান ঢাকার টারম্যাক ছুঁতে চলেছে, যখন অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান বাবু ও অনন্তবিজয় দাশ— এই তিন মুক্তমনা বাংলাদেশি ব্লগারের রক্তের দাগ সে দেশের মাটিতে টাটকা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন যখন তুঙ্গে, সেই ২০১৩ সাল থেকেই ইসলামি জঙ্গিদের আক্রমণের নিশানায় থেকেছেন এই মৌলবাদ-বিরোধী ব্লগাররা। পাশাপাশি গত কয়েক বছর ধরে দফায় দফায় চলছে বিনএপি ও তার জোটসঙ্গী জামাতে ইসলামির তাণ্ডব এবং পেট্রোল বোমা হামলা।

Advertisement

এই রুদ্ধশ্বাস আবহে মৌলবাদের বিরুদ্ধে বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর আলোচনায় নিরাপত্তা পরিস্থিতিও বিশেষ গুরুত্ব পেতে চলেছে বলে জানা গিয়েছে। কেন্দ্রের এক উচ্চপদস্থ সূত্রের কথায়, ‘‘ভারতের এই প্রতিবেশী রাষ্ট্রে ধর্মীয় মৌলবাদের উপস্থিতি ঘোর বাস্তব। তার জেরে চলছে ধারাবাহিক হিংসা। গোটা বিষয়টি ভারতের কাছে অত্যন্ত উদ্বেগের। বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘতম (৪০৯৮ কিলোমিটার) সীমান্ত রয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই সীমান্তের ও পারের যে কোনও হিংসা বা ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার ঘটনা আমাদের কাছে যথেষ্ট অস্বস্তির কারণ।’’ তাঁর কথায়, পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঢাকার সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতে চায় নয়াদিল্লি। এ ব্যাপারে ভারতের স্বার্থও জড়িয়ে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এই প্রথম বাংলাদেশ সফরে এ বিষয়ে বেশ কিছু নতুন উদ্যোগ চোখে পড়তে পারে।

নয়াদিল্লি বরাবর স্বীকার করেছে— শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশের পরিস্থিতি অনেকটাই বদলেছে। বাংলাদেশের মাটিতে ভারত-বিরোধী সন্ত্রাসের ঘাঁটিগুলি একে একে নির্মূল করেছে ঢাকা। এ ব্যাপারে হাত ধরাধরি করে চলে যে লাভ হয়েছে, তাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চায় দিল্লি।

কূটনৈতিক সূত্র বলছে, ধর্মভিত্তিক জঙ্গি রাজনীতি বাংলাদেশের কতটা গভীরে চারিয়ে গিয়েছে তা বুঝে নেওয়া এবং সম্ভাব্য প্রতিষেধক খোঁজার চেষ্টা যেমন হবে, পাশাপাশি অনুপ্রবেশ ও চোরাচালান বন্ধে বাংলাদেশের সঙ্গে কিছু চুক্তিও করবে ভারত। নিছক কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ না রেখে চুক্তিগুলি যাতে দ্রুত রূপায়ণ করা যায়, সেটি নিশ্চিত করতে শেষ মুহূর্তের হোমওয়ার্ক চলছে কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকগুলিতে। প্রধানমন্ত্রীর সফরে ঢাকার সঙ্গে ‘সন্ত্রাস-বিরোধী চুক্তি’ সই হওয়ার কথা। ভারতের জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) এবং বাংলাদেশের গোয়েন্দা বিভাগের কর্তারা এই চুক্তি করবেন। একই সঙ্গে দু’দেশের উপকূলবর্তী এলাকায় অপরাধ দমনেও দু’দেশের কর্তারা বেশ কিছু পদক্ষেপ করবেন। এ ছাড়া পাকিস্তান থেকে আসা জাল নোট পাচার ঠেকাতেও ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সমঝোতাপত্র সই হওয়ার কথা।

মোদীর ঢাকা সফরের আগে ভারতীয় গোয়েন্দারা যে রিপোর্ট তৈরি করেছেন, তাতে বলা হয়েছে— জঙ্গিরা নতুন ভাবে সংগঠিত হওয়ায় বাংলাদেশও এখন বড়সড় ঝুঁকির মুখে দাঁড়িয়ে। ২০০৯ সালে হাসিনা সরকার ক্ষমতায় আসার পর জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) এবং হুজি-কে অনেকটা ভোঁতা করেদেওয়া গিয়েছিল। এর পর বাংলাদেশে ইসলামি জঙ্গিবাদের সমাপ্তি ঘটতে পারত। কিন্তু এর পর ইয়েমেনে ঘাঁটি বাঁধা জঙ্গি নেতা আনওয়ার–আল-আওলাকির নেতৃত্বে শিক্ষিত এবং নাগরিক সম্প্রদায়ের মধ্যে জঙ্গিবাদ, নাস্তিক নিধনের বার্তা ছড়ানো শুরু হয়। ২০১১ সালে ৩০ সেপ্টেম্বর মার্কিন ড্রোন হামলায় আওলাকি নিহত হলেও তার অনুসারীরা ফেসবুক এবং টুইটারের মাধ্যমে জাল ছড়িয়েছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশে সম্প্রতি নিষিদ্ধ জঙ্গিগোষ্ঠী আনসারুল্লা বাংলা টিম তারই ফসল, ব্লগারদের হত্যায় যাদের হাত থাকার তথ্য তদন্তে উঠে আসছে। এই জঙ্গি নেটওয়ার্কের সঙ্গে আল কায়দা ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে চলে বলেও দু’দেশের গোয়েন্দাদের ধারণা।

এমন এক সঙ্কটকালীন আবহে মোদী তাঁর বক্তৃতায় মৌলবাদ নির্মূল করা এবং সহনশীলতা ও উন্নয়নের বার্তা দিতে চাইছেন। এক ভারতীয় কূটনীতিকের কথায়, ‘‘শুধুমাত্র দু’দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যই আমরা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতি চাইছি, তা নয়। আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও সুস্থিতির জন্যও এটা জরুরি।’’ দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতিতে এই সামগ্রিক বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্ব পেতে চলেছে বলে খবর।

ইসলামিক মৌলবাদের পাশাপাশি উত্তর-পূর্ব ভারতের জঙ্গি সমস্যার বিষয়টিও মোদী ও হাসিনার আলোচনায় থাকছে। আলফা নেতা অনুপ চেটিয়ার হস্তান্তরের প্রসঙ্গটি উঠছে বলেও জানা গিয়েছে। নয়াদিল্লি আশা করছে, চেটিয়াকে ভারতে পাঠানোর বিষয়ে একটি ঘোষণা মোদীর সঙ্গে বৈঠকের পর করতে পারে ঢাকা। ভারত বাংলাদেশ স্থলসীমান্ত চুক্তির পর দু’দেশের মধ্যে যে উষ্ণতা তৈরি হয়েছে, তার ফলশ্রুতি হিসাবে চেটিয়াকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হতে পারে।

সূত্রের খবর, সম্প্রতি আলফার কিছু নরমপন্থী নেতা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গে দেখা করে কথা বলেছেন। কেন্দ্রের এক প্রশাসনিক কর্তার কথায়, ‘‘চেটিয়াকে হাতে পাওয়ার জন্য বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তির জটিল প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে চাই না আমরা। ভারত চাইছে সরাসরি তাকে নয়াদিল্লির হাতে তুলে দেওয়া হোক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন