Narendra Modi

স্বাধীনতার ইতিহাস ‘নতুন করে লিখতে’ ডাক মোদীর

রাজনৈতিক সূত্রের মতে, স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের গুরুত্ব ‘কমিয়ে’ নতুন এক অধ্যায়ের জন্ম দিতে চান মোদী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০২১ ০৭:৪২
Share:

সাবরমতী আশ্রমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শুক্রবার আমদাবাদে। পিটিআই।

স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের পুনর্নিমাণ চান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মূলত সেই ডাক দিয়েই শুক্রবার স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উৎসবের (আজ়াদি কা অমৃত মহোৎসব) সূচনা করলেন তিনি। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, এর মাধ্যমে স্বাধীনতার ‘কংগ্রেসময়’ ইতিহাস পাল্টাতে চান তিনি। নেহরু-গাঁধী পরিবারের উপর থেকে অন্তত কিছুটা আলো সরিয়ে তুলে ধরতে চান ‘ইতিহাসে উপেক্ষিতদের’ অবদান। তেমনই স্বাধীনতার মূল লক্ষ্যের সঙ্গে কৌশলে মেশাতে চান নিজের সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পকেও। যাকে স্বাধীনতা সংগ্রামে সঙ্ঘের তেমন ভূমিকা না-থাকার অভিযোগ মোছার চেষ্টা হিসেবে দেখছেন অনেকে।

Advertisement

এ দিন সাবরমতী আশ্রমে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “(গাঁধীর) ডান্ডি-যাত্রার দিনেই এই মহোৎসবের সূচনা করা হল।... স্বাধীনতার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তে, প্রত্যন্ত কোণায় যত আন্দোলন হয়েছে, তা দেশের সামনে সে ভাবে আসেনি। কিন্তু আসা উচিত ছিল।” এই প্রসঙ্গে কুকা, ভিল, মুন্ডা, চম্পারণ, চুয়ার, বিরসা মুন্ডার সংঘর্ষের প্রভূত প্রশংসা করেছেন মোদী। শুনিয়েছেন, তামিলনাড়ু থেকে মিজোরাম, গুজরাত থেকে ওড়িশা— বিভিন্ন প্রান্তে নানা দলিত, আদিবাসী নেতা ও গোষ্ঠীর আন্দোলনের কথা।

অন্যান্য বহু নেতার সঙ্গে এ দিন মাত্র এক বার জওহরলাল নেহরুর নাম উল্লেখ করতে শোনা গিয়েছে মোদীকে। বারবার বলেছেন বল্লভভাই পটেল, মোহনদাস গাঁধী, সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বের কথা। এর আগে খাস সংসদে দাঁড়িয়েও মোদী বলেছেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের যাবতীয় কৃতিত্ব দাবি করে একটিমাত্র দল, একটি পরিবার।

Advertisement

তির কংগ্রেস ও নেহরু-গাঁধী পরিবারের দিকে। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, সেই ‘একাধিপত্য’ নতুন করে লেখা ইতিহাসে মুছে দিতে চান তিনি।

কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলিও তেমনই বারবার মনে করিয়ে দেয়, স্বাধীনতার লড়াইয়ের সঙ্গে আরএসএস কিংবা জনসঙ্ঘের যোগ ক্ষীণ। সেই অভিযোগ মুছে স্বাধীনতার উৎসবকে মোদী তাঁর নিজের ভাবমূর্তির সঙ্গে একাত্ম করতে চাইছেন বলে ধারণা অনেকের।

মোদীর দাবি, স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল ভরকেন্দ্র আত্মনির্ভরতা। যা তাঁর সরকারেরও লক্ষ্য। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, এই উৎসবের মাধ্যমে তিনি সরকারের সঙ্গে প্রান্তিক, দলিত, পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীকে যুক্ত করতে চান। তেমনই আবার এই ‘মেগা উৎসবের’ মাধ্যমে কেন্দ্রের নীতিগুলির সঙ্গে কার্যত একাত্ম করতে চান স্বাধীনতা সংগ্রামকে।

যদিও কৃষক আন্দোলনের কথা স্মরণ করিয়ে কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধীর খোঁচা, “বাপুর ডান্ডি-মিছিলের পরম্পরা অন্নদাতারা রক্ষা করছেন। কৃষক-বিরোধী মোদী সরকার ইংরেজদের মতো সত্যাগ্রহ দমন করতে চাইছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সত্যাগ্রহই জিতবে। অহংকার নয়।”

রাজনৈতিক সূত্রের মতে, স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের গুরুত্ব ‘কমিয়ে’ নতুন এক অধ্যায়ের জন্ম দিতে চান মোদী। সেই কারণে দেশের অকথিত সংগ্রামের কাহিনীগুলির ডিজিটাল সংস্করণ তৈরির প্রকল্পে ছাত্র-যুব সমাজকে শামিল হওয়ার ডাক দিয়েছেন তিনি। জানিয়েছেন, আদিবাসীদের সংগ্রামের ইতিহাস নিয়ে আলাদা সংরক্ষণাগার হবে। তাঁর কথায়, “দেশের প্রত্যেকটি স্কুল, কলেজের পড়ুয়ারা ‘স্বাধীনতা-৭৫’ সঙ্কলন তৈরি করুক। নাটক লেখা হোক, গান রচনা হোক, ছবি আঁকা হোক। সমস্ত আইন কলেজের ছাত্রছাত্রীরা স্বাধীনতার সময়ের আইনি লড়াই নিয়ে লিখুক।...স্বাধীনতার সমস্ত কাহিনীকে জীবন্ত করা হবে।”

আজ আমদাবাদের সাবরমতী আশ্রম থেকে নভসারি জেলার ডান্ডি পর্যন্ত ৩৮৬ কিলোমিটার প্রতীকী পদযাত্রায় শামিল হয়েছেন কয়েকশো মানুষ। ১৯৩০ সালে গাঁধী যে পথে হেঁটেছিলেন, সেই রাস্তা ধরেই প্রায় এক মাস যাত্রার শেষে ৫ এপ্রিল ডান্ডি পৌঁছনোর কথা তাঁদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন