কুম্ভস্নান সেরে দলিতের পা ধুয়ে দিলেন নরেন্দ্র মোদী

আজ থেকে তাঁদের দিনটাই বদলে গেল! এ দিন কুম্ভে স্নান সেরে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী তাঁদের পা ধুইয়ে দিলেন যে! প্রথমে ঝকঝকে নতুন পাত্রে রাখা জল ঢেলে পা ধুইয়ে দিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:৫৫
Share:

কুম্ভে গিয়ে সা‌ফাইকর্মীদের পা ধুইয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী। রবিবার ইলাহাবাদে (প্রয়াগরাজ)। ছবি ফেসবুক থেকে।

কিছু ক্ষণ আগেই কুম্ভের সঙ্গমে ডুব দিয়ে এসেছেন। মাথায় সাদা চন্দন লেপা। পরনে গেরুয়া কুর্তা। একটা নিচু টুলে বসেছেন নরেন্দ্র মোদী। সামনে চেয়ারে বসে পেয়ারে লাল, ছবি, হোরি লাল, নরেশ কুমার, জ্যোতি। পাঁচ জনেই সাফাই কর্মচারী। কুম্ভে ঝাড়ু হাতে, আবর্জনা সাফাইয়ে ব্যস্ত ছিলেন এ ক’দিন। এ তাঁদের নিত্যদিনের কাজ।

Advertisement

আজ থেকে তাঁদের দিনটাই বদলে গেল! এ দিন কুম্ভে স্নান সেরে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী তাঁদের পা ধুইয়ে দিলেন যে! প্রথমে ঝকঝকে নতুন পাত্রে রাখা জল ঢেলে পা ধুইয়ে দিলেন। তার পর নতুন তোয়ালে দিয়ে সকলের পা মুছিয়ে দিলেন অতি যত্নে। তার পরে গলায় পরিয়ে দিলেন অঙ্গবস্ত্র।

পুরোটাই টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার হল। ‘ফ্ল্যাশব্যাক’-এ অনেকের স্মৃতিতে ফিরে এল, এক সময় মহাত্মা গাঁধীও এ ভাবেই সাফাই কর্মচারীদের সম্মান জানাতেন। গাঁধীর নামে ভর দিয়েই মোদী ক্ষমতায় এসে শুরু করেছিলেন স্বচ্ছতা অভিযান। নিজে হাতে ঝাড়ু দিয়েছিলেন রাজপথে। আজ সাফাইকর্মীদের পা ধুইয়ে তিনি একটি বৃত্ত সম্পূর্ণ করলেন। অনেকে বলছেন, কখনও গাঁধী, কখনও পটেল, কখনও নেতাজি— নানা রূপে মোদী নিজেকে মনীষী প্রতিপন্ন করারই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

Advertisement

আরও পড়ুন: নমো-র নানা দিক

এ দিনের পরে মোদীর ভক্তেরা যে তাঁকে মহাত্মা গাঁধীর পরের আসনেই বসাবেন, তাতে সংশয় ছিল না। হয়েছেও তাই। খোদ বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের দাবি, ‘‘এ দেশে গাঁধীজির পরে প্রথম বার কোনও জননেতার মধ্যে এই ধরনের সমর্পণের ভাব দেখলাম। এক নতুন যুগের শুরু।’’

আরও পড়ুন: কৃষি ঋণ নিয়ে বিরোধীদের নিশানা মোদীর

মোদী নিজে বলেন, ‘‘আজ জীবনে এমন এক মুহূর্ত এসেছে, যা জীবনভর আমার সঙ্গে থাকবে।’’ কিন্তু তাঁর সমালোচকেরা বলেছেন, লোকসভা ভোটকে পাখির চোখ করে প্রয়াগরাজে গিয়ে একই সঙ্গে উচ্চবর্ণের হিন্দু এবং দলিত— দু’পক্ষেরই মন জয়ের চেষ্টা করলেন মোদী। এক দিকে তিনি ত্রিবেণী সঙ্গমে ডুব দিয়েছেন। কমলা জ্যাকেটের উপর গেরুয়া চাদর জড়িয়ে মন্ত্রোচ্চারণ করে পুজো করেছেন। ত্রিবেণী সঙ্গমে ‘দুগ্ধাভিষেক’ করেছেন। নিজেকে ধর্মপ্রাণ হিন্দু হিসেবে তুলে ধরেছেন। তার পরেই সাফাই কর্মচারীদের পা ধুইয়ে দলিত মন জয়ের চেষ্টা করেছেন। গত পাঁচ বছরে মোদী জমানায় যে দলিতদের উপর গেরুয়াপন্থীদের নেতৃত্বে অত্যাচার বেড়েছে বলেই অভিযোগ।

মোদীর এ দিনের কাজের নিন্দা করে সাফাই কর্মচারী আন্দোলনের নেতা বেজওয়ারা উইলসন বলেন, ‘‘শুধু ২০১৮-য় নর্দমা এবং সেপটিক ট্যাঙ্ক সাফ করতে গিয়ে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। উনি চুপ ছিলেন! এখন পা ধুচ্ছেন!’’

মোদী যাঁদের পা ধুইয়ে দিয়েছেন, সেই নরেশ কুমারদের বক্তব্য, এমন যে কিছু হবে, তা তাঁরা জানতেনই না। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী তাঁদের পা ধুইয়ে দেওয়ায় তাঁরা স্তম্ভিত। নরেশ কুমারদের জানা না থাকলেও বাস্তবে দেখা গিয়েছে, সমস্ত ব্যবস্থা আগে থেকেই তৈরি ছিল। পায়ের পাশে ঝকঝকে ধাতুর পাত্র, জল, তোয়ালে— সব। সাফাই কর্মচারী জ্যোতি বলেন, ‘‘এত সম্মান মিলবে, কোনও দিন ভাবিনি। কত দিন কুম্ভে কাজ করছি, তা-ও জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।’’ আর মুগ্ধ পেয়ারে লাল বলেন, ‘‘উনি ফের প্রধানমন্ত্রী হোন।’’

গোটাটাই ভোটের দিকে তাকিয়ে সাজানো নাটক বলে বিরোধীরা সরব হলেও অমিত শাহের দাবি, ‘‘সাফাই কর্মচারীদের পা ধোয়া শুধু প্রধানমন্ত্রীর সংবেদনশীল মনের প্রমাণ নয়। তার সঙ্গে সামাজিক ঐক্যের প্রতি ওঁর সমর্পণেরও প্রতিবিম্ব।’’ যদিও বিরোধীদের বক্তব্য, এই ঐক্য ভাবনা মোদীর কাজে প্রতিফলিত হয় না। কংগ্রেসের পবন খেরা বলেন, ‘‘যে কাজের জন্য ওঁকে প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসানো হয়েছে, সেটা উনি করেন না। দাদরির পরে চুপ থাকেন। পুলওয়ামার পরে কোথায় ছিলেন, তা বলেন না! কাশ্মীরি ছাত্রদের উপর হামলার পরে সমাজে বিষ ছড়িয়ে যেতে দেখেও উনি চুপ করেই থাকেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন