কাশ্মীর নিয়ে রাওয়তের সুরেই সুর রাজনাথের

সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়ত রবিবার বলে দিয়েছিলেন, বিক্ষোভকারীরা পাথরের বদলে গুলি ছুড়লে ভাল হয়। তা হলে সেনারও গুলি ছুড়তে সুবিধে হবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৭ ০৪:৫৩
Share:

সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়ত ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। ছবি: সংগৃহীত।

সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়ত রবিবার বলে দিয়েছিলেন, বিক্ষোভকারীরা পাথরের বদলে গুলি ছুড়লে ভাল হয়। তা হলে সেনারও গুলি ছুড়তে সুবিধে হবে।

Advertisement

আজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ জানালেন, কাশ্মীরে ‘স্থায়ী’ সমাধানের পথে এগোচ্ছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। স্থায়ী সমাধান কী, তা অবশ্য স্পষ্ট করেননি রাজনাথ। কিন্তু সরকারি সূত্রের মতে, সেনাপ্রধানের কথাতেই সিলমোহর দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বিরোধীরা যতই আলোচনার দাবি করুন, আপাতত অশান্ত উপত্যকাকে সেনা অভিযান চালিয়েই ঠান্ডা করতে চাইছে কেন্দ্র। বিপিনকে সমর্থন করে মুখ খোলেন বেঙ্কাইয়া নায়ডুও।

সেনাপ্রধানের সুরেই আজ কাশ্মীরে ছায়াযুদ্ধের পিছনে পাকিস্তানকে দায়ী করে রাজনাথ বলেন, ‘‘কাশ্মীরের পাশাপাশি পাকিস্তান গোটা দেশে অশান্তি ছড়াতে তৎপর রয়েছে। কিন্তু সরকার স্থায়ী সমাধান নিয়ে আসার প্রশ্নে বদ্ধপরিকর।’’ সরকারি সূত্রের মতে, অশান্ত কাশ্মীরকে বাগে আনতে খতম লাইনই একমাত্র রাস্তা বলে মনে করছেন সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়ত। সেনার এই অবস্থান নতুন নয়। ইউপিএ আমলেও সেনা এই নীতিতে বিশ্বাস করত। ইতিমধ্যেই হিজবুল মুজাহিদিনের দুই নেতাকে খতম করেছে বাহিনী।

Advertisement

আরও পড়ুন: ফলের আশা না-করেই অনন্য ফল

সরকারি সূত্রে খবর, সম্প্রতি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির বৈঠকে কাশ্মীরে শান্তি ফেরাতে কঠোর লাইন নেওয়ার পক্ষে সওয়াল করা হয়। তার পরেই ক্রমশ সেনা অভিযান তীব্র করা হয় কাশ্মীর জুড়ে। বিশেষ করে দক্ষিণ কাশ্মীরে হারানো জমি দখলে এখন মরিয়া সেনা। দু’দশক পরে ফের শুরু হয়েছে ঘরে-ঘরে তল্লাশি অভিযান।


থমথমে: সেনার সামনে শ্রীনগরে। ছবি: এএফপি।

অর্থাৎ কাশ্মীরে শান্তি ফেরাতে এই মুহূর্তে সেনার উপরেই নির্ভর করছে সরকার। তাই ভোটের সময়ে পাথর ছোড়া আটকাতে ফারুক দারকে জিপের সঙ্গে বেঁধে মানব-ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার পক্ষে জোর গলায় সওয়াল করেছেন সেনাপ্রধান। পাশে পেয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী অরুণ জেটলিকেও। আজ রাজনাথও বুঝিয়ে দিলেন, আপাতত আপসের কোনও পথ খোলা নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, ফের নব্বইয়ের দশকের চিত্র ফিরে আসতে চলেছে কাশ্মীরে। শ্রীনগরের পদে পদে তখন দেখা যেত বাঙ্কার।

কেবল সেনা অভিযান নয়, কাশ্মীরে পাকিস্তানের পাঠানো টাকায় অশান্তি ছড়ানোও বন্ধ করতে চাইছে কেন্দ্র। পাক আর্থিক মদতে অশান্তি ছড়ানোর অভিযোগের তদন্তে তিন জন হুরিয়ত নেতাকে ডেকে পাঠায় এনআইএ। দিল্লিতে আজ ফারুক আহমেদ দার, নইম খান ও জাভেদ আহমেদ বাবা এনআইএ গোয়েন্দাদের সামনে হাজিরা দিয়েছেন। সূত্রের খবর, তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, সম্পত্তির বেশ কিছু নথি নিয়ে ফের দেখা করতে বলা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রয়াত মুফতি মহম্মদ সইদের কাশ্মীরের ক্ষতে মলম লাগানোর নীতি দ্রুত ইতিহাস হয়ে যাচ্ছে। তাই কড়া নীতির ‘ভয়ঙ্কর পরিণাম’ নিয়ে বিজেপিকে সতর্ক করার পাশাপাশি পিডিপিকেও খোঁচা দিয়েছে কংগ্রেস। প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমের মতে, ‘‘সরকার দেশের মানুষের সঙ্গেই যুদ্ধে নেমেছে।’’ হুরিয়ত নেতা মিরওয়াইজ ওমর ফারুক এ দিন বলেন, ‘‘দিল্লি যে ভাবে কথা বলছে, তাতে তো বোঝাই যাচ্ছে, সরকার কাশ্মীর এবং কাশ্মীরিদের সেনার হাতে তুলে দিয়েছে!’’

কংগ্রেস নেতারা মনে করাচ্ছেন, এক বছর আগেও কাশ্মীর গিয়ে রাজনাথ ‘ইনসানিয়ত, জামুরিয়ত ও কাশ্মীরিয়তের’ (মানবতা, গণতন্ত্র ও কাশ্মীরি মূল্যবোধ) মাধ্যমে অটলবিহারী বাজপেয়ীর পথে সঙ্কট মেটানোর কথা বলেছিলেন। এখন তিনিই কড়া পথে ‘স্থায়ী সমাধানে’র কথা বলছেন। কংগ্রেসের প্রশ্ন, পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি এই নীতি সমর্থন না করলে বিজেপির সঙ্গে জোট ভাঙছেন না কেন? জবাবে রাজনাথ বলেন, ‘‘কংগ্রেস হাসি-তামাশার পাত্রে পরিণত হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন