(বাঁ দিকে) সুশীলা কার্কি এবং নরেন্দ্র মোদী (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।
আন্দোলন করে নেপালের কেপি শর্মা ওলি সরকারকে গদিচ্যুত করা ছাত্র-যুবদের একাংশ চান তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের হাল ধরুন। নেপালের সেই প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি জানালেন, পড়শি দেশ ভারতের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা রয়েছে। ‘সিএনএন-নিউজ়১৮’-কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে নয়াদিল্লির প্রশংসা করে তিনি বলেন, “ভারত সর্বদা নেপালকে সাহায্য করেছে।” প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীরও প্রশংসা শোনা গিয়েছে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রাক্তনীর গলায়। প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করে তিনি বলেন, “মোদীজি সম্পর্কে আমার খুব ভাল ধারণা রয়েছে। আমি তাঁকে নমস্কার জানাচ্ছি।”
অস্থির সময়ে নেপালের হাল ধরবেন কে, তা নিয়ে জল্পনা ছিলই। বুধবার ছাত্র-যুব নেতৃত্বের তরফ থেকেই সুশীলার নাম উঠে আসে। একটি সূত্রের খবর, খুব শীঘ্রই নেপালের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসাবে সুশীলার নাম ঘোষণা করতে পারে সে দেশের সেনা। অন্তর্বর্তী সরকারের পরবর্তী প্রধানকে বেছে নিতে বুধবার আন্দোলনকারী পড়ুয়ারা কাঠমান্ডুতে আলোচনায় বসেছিলেন। অনলাইনে বিভিন্ন জেলা থেকে আন্দোলনকারী নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিরা ওই আলোচনাসভায় যোগ দিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত কয়েক ঘণ্টার আলোচনার পরে পাঁচ হাজারেরও বেশি আন্দোলনকারী বেছে নেন সুশীলাকে। তবে বৃহস্পতিবার দুপুরে নেপালের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসাবে উঠে এসেছে কুলমান ঘিসিংয়ের নাম।
সাক্ষাৎকারে সুশীলা জানিয়েছেন, তিনি নতুন দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত। একই সঙ্গে তাঁর সরকার কোন কাজ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে করবে, তা-ও স্পষ্ট করেছেন সুশীলা। তিনি জানিয়েছেন, আন্দোলনের জেরে যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁদের সম্মানিত করবে অন্তর্বর্তী সরকার। তিনি বলেন, “আমাদের প্রথম কাজ হবে সেই তরুণদের জন্য কিছু করা, যাঁরা প্রতিবাদে শামিল হয়ে মারা গিয়েছেন।”
দেশের সমস্যা নিয়েও মুখ খুলেছেন সুশীলা। তিনি বলেন, “অতীতের দিনগুলি থেকেই নেপালের কিছু সমস্যা রয়েছে। এখন তো পরিস্থিতি খুবই কঠিন। তবে নেপালের উন্নতির জন্য আমরা একসঙ্গে কাজ করব। দেশের জন্য নতুন কিছুর সূচনা করার চেষ্টা করব আমরা।”
১৯৫২ সালে নেপালের বিরাটনগরে জন্ম সুশীলার। রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে প্রথমে ত্রিভুবনদাস বিশ্ববিদ্যালয়ে, পরে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। শিক্ষিকা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। ২০০৬ সালে সাংবিধানিক খসড়া কমিটির সদস্য হন স্বচ্ছ ভাবমূর্তির সুশীলা। ২০০৯ সালে নেপালের শীর্ষ আদালতের অ্যাড-হক বিচারপতি হন। ২০১৬ সালে হন নেপালের প্রথম মহিলা প্রধান বিচারপতি। দীর্ঘ দিন মহিলাদের অধিকারের জন্য লড়েছেন সুশীলা। নেপালি শিশুদের মায়ের নাগরিকত্ব লাভের আইন পাশ, নেপাল রাজপরিবারে ‘সারোগেসি’ এবং সম্পত্তির উত্তরাধিকার নিয়ে যুগান্তকারী রায় দিয়েছেন তিনি।