ডিএনএ বিল ঘিরে নয়া বিতর্ক

সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলার জেরে কোআর্ডিনেটর প্রতীক হাজেলাকে সুপ্রিম কোর্ট ভর্ৎসনা করায় ও শাস্তির হুমকি দেওয়ায় রাজ্য এনআরসি দফতর জানিয়েছে, তারা আর কোনও বিষয়েই সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খুলবে না। যা বলার সুপ্রিম কোর্টই জানাবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৮ ০২:৩২
Share:

ফাইল চিত্র

তথ্য ফাঁস রুখতে সদ্য তথ্য সুরক্ষা বিলের খসড়া এনেছে সরকার। সেই বিল পাশ হওয়ার আগেই আজ লোকসভায় ডিএনএ টেকনোলজি (ব্যবহার ও প্রয়োগ) বিল পেশ করে নতুন করে বিতর্ক তৈরি করল নরেন্দ্র মোদী সরকার। অপরাধের কিনারা করতেই ওই বিল আনা হচ্ছে বলে দাবি কেন্দ্রের। তবে বিরোধীদের যুক্তি, তথ্য সুরক্ষা নিশ্চিত না করে ওই আইন তৈরি করা অর্থহীন। এতে সরকার ওই আইনের অপব্যবহার করতে পারে বলে আশঙ্কা থাকছে। বিশেষ করে অনিচ্ছার বিরুদ্ধে ডিএনএ নমুনা নেওয়া সংবিধান বিরোধী বলেও দাবি করেন বিরোধীরা।
গত ক’দিন ধরে রাজ্যসভায় ব্যর্থ হয়ে আজ লোকসভায় ডিএনএ বিলটি পেশ করেন কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী হর্ষবর্ধন। তাঁর দাবি, অপরাধ সংক্রান্ত মামলা যেমন ধর্ষণ, খুন, মানবপাচার, কোনও নিখোঁজ বা মৃত ব্যক্তির পরিচয় জানার ক্ষেত্রে বিলর প্রস্তাবগুলি খুবই কার্যকরী হবে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মতো ঘটনায় যেখানে প্রচুর লোক মারা গিয়েছেন সেখানে দেহগুলির পরিচয় খুঁজতে ডিএনএ-র নমুনা ব্যবহার করা হবে। জাতীয় ও আঞ্চলিক তথ্য ব্যাঙ্কে সংগৃহীত ডিএনএ নমুনা রাখা থাকবে বলে তিনি জানান।
তবে তথ্য সুরক্ষার সঙ্গে যুক্ত একাধিক সংস্থা আজ ওই বিলের প্রতিবাদে সরব হয়েছে। ইন্টারনেট ফ্রিডম ফাউন্ডেশনের মতো সংস্থার মতে, আধারের তথ্য সুরক্ষিত নয়। বিভিন্ন সময়ে আধারের তথ্য ফাঁসের অভিযোগ সামনে এসেছে। ডিএনএ নমুনাও যে ফাঁস হবে না— সেই নিশ্চয়তা কোথায়! তাই তথ্য সুরক্ষা বিল পাশ না হওয়া পর্যন্ত ডিএনএ প্রযুক্তি আইন আনা উদ্বেগজনক বলেই মনে করছে ওই সংস্থা। বিলের বিরোধিতায় কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘সরকারের নির্দেশে তদন্তকারী সংস্থা ডিএনএ নমুনা অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে পারে।’’
তাই তথ্যভাণ্ডারের সুরক্ষায় একাধিক পদক্ষেপের দাবি করেন বিরোধীরা। যেমন, ১) তথ্য সুরক্ষা বিল পাশ করাতে হবে। ২) অপরাধী ও আম নাগরিকের আলাদা তথ্যভাণ্ডার বানাতে হবে। ৩) ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ ও সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক মানের প্রযুক্তির ব্যবহার। ৪) ন্যায়সঙ্গত ভাবে নমুনা সংগ্রহ। ৫) তদন্তকারী অফিসার, টেকনিশিয়ান, পুলিশ ও বিচারব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
বিলে বলা হয়েছে, কোনও অপরাধী, সন্দেহভাজন, বিচারাধীন ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করার ক্ষমতা থাকবে তদন্তকারী সংস্থার। কিন্তু অধীরবাবুর প্রশ্ন, ‘‘কেউ বিচারাধীন কিংবা সন্দেহভাজন হলেই সে দোষী নয়। তা হলে কেন তাঁর নমুনা সংগ্রহ করা হবে। কাউকে ডিএনএ নমুনা দিতে বাধ্য করা হবে কেন?’’ তাঁর মতে, এ ভাবে নমুনা সংগ্রহ করা ব্যক্তি পরিসরের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ। আমেরিকা, ব্রিটেনে অপরাধের ঘটনার তদন্তে ওই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, নির্ভরযোগ্য হলেও সব সময়েই যে ওই প্রযুক্তি একশো শতাংশ নিখুঁত তা-ও নয়। অপরাধের জায়গায় সব সময়ে ডিএনএ নমুনা পাওয়াও যায় না। আর নমুনা মিশে গেলে অনেক ক্ষেত্রে ফল পাল্টে যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন