বাংলাদেশের ছায়ানট ভবনে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, তাণ্ডব বিক্ষুব্ধদের। বৃহস্পতিবার রাতে। ছবি: এক্স।
বাংলাদেশে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যু এবং তৎপরবর্তী অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিকে সে দেশে নির্বাচনের প্রশ্নে অশুভ সঙ্কেত হিসেবে দেখছে নয়াদিল্লি। সে দেশে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের দু’মাসও বাকি নেই। কেন্দ্রের কাছে খবর, গত বছর ইসলামি সন্ত্রাসবাদীদের লাগাতার মুক্তি দেওয়ার পরিণাম যা হওয়ার, তা-ই হচ্ছে। ঘটনাচক্রে, ভারতীয় সেনার ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান আর সি তিওয়ারি আজই ত্রিপুরার দক্ষিণ জেলার বিলোনিয়ায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফ ছাউনিতে গিয়ে সামগ্রিক পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছেন।
গত সেপ্টেম্বরে করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সমীক্ষা রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে এখন প্রায় ৪ লক্ষ বেআইনি অস্ত্র ঘুরছে। সমাজে সার্বিক অরাজকতায় ফেব্রুয়ারি মাসে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন কত দূর সম্ভব, তা নিয়ে দ্বিধা রয়েছে। বাংলাদেশ সূত্রে পাওয়া খবর অনুসারে, সেখানকার ৪২,৭৬১টি বুথের মধ্যে ৮৭৪৬টিকে বাংলাদেশ পুলিশই চিহ্নিত করেছে ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক’ হিসেবে। ১৬,৩৫৯টি বুথকে ‘বিপজ্জনক’ এবং ১৭,৬৫৬টি বুথকে ‘স্বাভাবিক’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই হিসাবের বাইরে রয়েছে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত ৯৭টি নির্বাচনী এলাকা এবং চট্টগ্রাম পার্বত্য অঞ্চলের জনজাতি অধ্যুষিত অন্তত ৩টি নির্বাচনী এলাকা। সেগুলি খুবই স্পর্শকাতর।
রাজনৈতিক হিংসা যে ভোটের বেশ কিছু দিন আগে থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে, তা লক্ষ করছে ভারত। তুলে ধরা হচ্ছে গত ৫ নভেম্বর বিএনপি-র জনসভায় গুলি চলার ঘটনা। সেই রাজনৈতিক হিংসা অব্যাহত, যা হাদির মৃত্যুতে বেড়েছে। গোয়েন্দারা মনে করছেন, এই পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু এবং অবাধ নির্বাচনের জন্য আন্তর্জাতিক নির্বাচনী পর্যবেক্ষক থাকাটা অত্যন্ত জরুরি এবং সেই ব্যবস্থা ২২ জানুয়ারি প্রচার শুরু হওয়ার সময় থেকেই থাকলে ভাল।
সমীক্ষা-রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, গত বছরের অগস্ট থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে রাজনৈতিক হিংসায় মারা গিয়েছেন ২৮১ জন। আহত হয়েছেন ৭৬৮৯ জন। অবাধ নির্বাচনের অন্যতম শর্ত সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা। ওই সময়সীমাতেই দেখা যাচ্ছে, ১১২৬ জন সাংবাদিক হয় গ্রেফতার নয়তো মামলা বা হামলার মুখে পড়েছেন। গত ৭ ডিসেম্বর সুইডেনের ‘ফোজো মিডিয়া ইনস্টিটিউট’ যে রিপোর্ট পেশ করেছে, তাতে বলা হচ্ছে, ছাব্বিশের ভোটে হামলার মুখে পড়ার ভয়ে রয়েছেন দেশের ৮৯ শতাংশ সাংবাদিকই। সদ্য দু’টি সংবাদপত্রের অফিস যে ভাবে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তাতে এই আশঙ্কা আরও বেড়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ন্ত্রণের অভাবে বাংলাদেশের পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
সে দেশের নির্বাচন কমিশনও শান্তিপূর্ণ ও অবাধ নির্বাচনের লক্ষ্যে আইনরক্ষাকারী কর্তৃপক্ষের হাতে ভোটের দায়িত্ব তুলে দেওয়া নিয়ে কিছু বলেনি। বিচারকরাও ত্রাসে রয়েছেন, কারণ প্রধান বিচারপতি–সহ হাই কোর্টের অন্তত ২১ জন বিচারককে রাতারাতি সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। যদিও বাংলাদেশের সংবিধানে বলা রয়েছে, সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থিত প্রস্তাবে রাষ্ট্রপতির সই ছাড়া বিচারকদের পদচ্যুত করা যায় না।
সন্ত্রাস এবং ভারত-বিরোধিতার প্রশ্নে ঢাকাকে দু’দিন আগেই কড়া ভাষায় বার্তা দিয়েছে সাউথ ব্লক। নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহকে ডেকে পাঠিয়ে যে উদ্বেগগুলির কথা বলা হয়েছে, তার মধ্যে সে দেশে সংখ্যালঘু পীড়নের বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে বলে জানা গিয়েছে। হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২০২৪ সালের ৪ অগস্ট থেকে ২০২৫-এর জুলাই পর্যন্ত সংখ্যালঘু ও জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষের উপরে ২৪৮৫টি হিংসাত্মক হামলা হয়েছে। এই মুহূর্তে সে দেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনটি অচল, কারণ গত বছরের ৭ নভেম্বর অন্তর্বর্তী সরকার কমিশনের সব সদস্যকে পদত্যাগ করায়। এখনও পর্যন্ত কোনও নতুন সদস্যের অন্তর্ভুক্তি হয়নি।
আজ ভারতীয় সেনার ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান আর সি তিওয়ারি, স্পেশাল কোরের কমান্ডার এ এস পেনঢারকর, আসাম রাইফেলসের আইজি সুরেশ ভাম্ভু এবং ২১ সেক্টরের কমান্ডার মণীশ রানা হেলিকপ্টারে এসে ত্রিপুরার দক্ষিণ জেলার বিলোনিয়াতে বিদ্যাপীঠ স্কুলের মাঠে নামেন। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন বিএসএফের গোকুলনগর সেক্টরের ডিআইজি। বিলোনিয়াতে বিএসএফের ছাউনি পরিদর্শন করে সামগ্রিক পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজখবর নেন সামরিক কর্তারা। মুহুরি চর এলাকাও ঘুরে দেখেন। ইস্টার্ন কমান্ড জানিয়েছে, সেনা, আসাম রাইফেলস ও বিএসএফের সব স্তরের অফিসারদের পেশাদারিত্ব এবং সদাপ্রস্তুত মনোভাবের প্রশংসা করেছেন তিওয়ারি।
প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর
সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ
সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে