নতুন শিক্ষানীতি: নজরে সেপ্টেম্বর

কিন্তু বিরোধীদের প্রশ্ন, দ্রুত নীতি রূপায়ণে যে সরকার এত সক্রিয়, তারা শিক্ষাক্ষেত্রে বরাদ্দকে জিডিপির ৬ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে কেন সময়সীমা নির্দিষ্ট করছে না?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০২০ ০৪:৪৯
Share:

ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে নয়া শিক্ষানীতি নিয়ে আলোচনা প্রধানমন্ত্রী। ছবি: পিটিআই।

নতুন জাতীয় শিক্ষানীতিকে দ্রুত বাস্তবায়িত করতে কোমর বেঁধে মাঠে নামার ডাক দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই অনুযায়ী, শুক্রবার থেকেই ‘মিশন মোডে’ (সময় ও লক্ষ্য বেঁধে) কাজ করার কথা বললেন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল নিশঙ্ক। কী ভাবে নয়া নীতি বাস্তবায়িত হবে, সেই পরিকল্পনার প্রাথমিক খসড়া তুলে ধরলেন কেন্দ্রীয় শিক্ষাসচিব অমিত খারে। তাঁর আশা, এই পথে এগোলে, সেপ্টেম্বরের মধ্যেই পথনির্দেশ পাওয়া যাবে।

Advertisement

কিন্তু বিরোধীদের প্রশ্ন, দ্রুত নীতি রূপায়ণে যে সরকার এত সক্রিয়, তারা শিক্ষাক্ষেত্রে বরাদ্দকে জিডিপির ৬ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে কেন সময়সীমা নির্দিষ্ট করছে না? একই সঙ্গে আশঙ্কা, তড়িঘড়ি নীতি কার্যকর করার অজুহাতে শেষ পর্যন্ত সব রাজ্য এবং বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনা ও বিতর্কের পরিসরই না কমিয়ে আনে কেন্দ্র।

এ দিন উচ্চশিক্ষা সংক্রান্ত আলোচনার উদ্বোধনী ভিডিয়ো-বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষানীতি ঘোষণার পর থেকেই অনেকের জিজ্ঞাসা, কাগজে-কলমে এত বড় সংস্কার না-হয় হল। কিন্তু এই বিপুল কর্মসূচিকে বাস্তবায়িত করা হবে কী ভাবে? নিজেই এই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে মোদীর মন্তব্য, “এর জন্য সম্পূর্ণ ব্যবস্থায় যে বদল জরুরি, তা করতে হবে। করতেই হবে। এর জন্য যে রাজনৈতিক সদিচ্ছা (ও সমর্থন) প্রয়োজন, তা জোগাতে আমি দায়বদ্ধ।”

Advertisement

আরও পড়ুন: সবার সঙ্গে কথা হয়েছে, মোদীর দাবি ঘিরে প্রশ্ন​

মোদীর মতে, এ দেশে দীর্ঘদিন শিক্ষায় বড় বদল হয়নি। অথচ সময়, প্রযুক্তি, বাজার-- পাল্টে গিয়েছে সমস্ত কিছু। তাই নতুন প্রজন্মকে ভবিষ্যতের পৃথিবীর জন্য তৈরি করতে এই নীতির দ্রুত বাস্তবায়ন জরুরি। কী ভাবে, তার প্রাথমিক নকশাও এঁকে দিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর কথায়, “প্রথমে নীতি কার্যকর করতে রণনীতি তৈরি হোক। তার পরে সেই অনুসারে ঠিক করা হোক পথ-নির্দেশিকা। প্রতিটি লক্ষ্যের জন্য বাঁধা হোক নির্দিষ্ট সময়। দেখা হোক, কীসে কত টাকা লাগবে। যাতে এই সমস্ত কিছু হাতের নাগালে এনে দ্রুত বাস্তবায়িত করা যায় শিক্ষানীতিকে।” তাঁর প্রস্তাব, সমস্ত রাজ্য-সহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে তাড়াতাড়ি আলোচনা শুরু হোক। সকলে একে দেখুন ‘মহাযজ্ঞ’ হিসেবে।

খারের প্রস্তাব, “শিক্ষানীতির এক-একটি বিষয় নিয়ে রাজ্যে-রাজ্যে আলোচনা হোক। পুরো প্রক্রিয়া যাতে কেন্দ্রের উপরে নির্ভরশীল না-হয়, সেই লক্ষ্যে এ বিষয়ে ‘লিড’ প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিহ্নিত করা হোক প্রত্যেক রাজ্যের একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় অথবা আইআইটি-র মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে।” উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গে আগামী রবিবার এমন একটি আলোচনা আয়োজনের কথা ঘোষণা করা হয়েছে এ দিনই।

কেন্দ্রের এমন তাড়াহুড়োয় বিস্মিত বিরোধী এবং প্রতিবাদী পড়ুয়ারা বলছেন, শিক্ষাসচিব এ দিনও সকালে বলেছেন, এই পরিবর্তন রাতারাতি হওয়ার নয়। তা করা হবে ধীরেসুস্থে। অথচ প্রধানমন্ত্রী বলছেন, নীতি বাস্তবায়িত করার কাজে নেমে পড়তে হবে এখনই! তাঁদের প্রশ্ন, মোদী সরকার যদি দেশে শিক্ষার ছবি পাল্টাতে এতই দায়বদ্ধ হয়, তা হলে তাদের জমানায় এই খাতে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ জিডিপির অনুপাতে কমেছে কেন? শুধু তা-ই নয়, সমস্ত রাজ্যের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ওই অনুপাতকে ৬ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে নয়া শিক্ষানীতিতে। কেন্দ্রের দাবি, এখন তা ৪.৪৩ শতাংশ। কিন্তু বাড়তি বরাদ্দের মধ্যে কেন্দ্রের ভাগ কত হবে, তা স্পষ্ট নয়। কোন বছরের মধ্যে ওই ৬ শতাংশের লক্ষ্য ছোঁয়া হবে, বলা হয়নি তা-ও। অথচ এই লক্ষ্য ৫২ বছরের পুরনো!

আরও পড়ুন: ড্রপ আউটের প্রবণতা কি বাড়বে?​

সরকারি বরাদ্দ না-বাড়িয়ে শিক্ষানীতির খোলনলচে বদলের মাধ্যমে মোদী সরকার আসলে এই ক্ষেত্রে বেসরকারিকরণ ও বাণিজ্যকরণের রাস্তা প্রশস্ত করতে চাইছে বলে অভিযোগ বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলির। যদিও খারের দাবি, না-জেনে অনেকে এই অভিযোগ তুলছেন। কিন্তু ঠিক এর উল্টো কথাই লেখা রয়েছে শিক্ষানীতিতে। বলা হয়েছে, বেসরকারি উদ্যোগ স্বাগত, কিন্তু বাণিজ্যকরণ চলবে না। উদ্বৃত্ত বা মুনাফা ফের লগ্নি করতে হবে শিক্ষাতেই। তাতে বড় একটা আশ্বস্ত নন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাঁদের মতে, অছি পরিষদ গড়ে কিংবা বিপুল বেতন নিয়ে, এমনকি নাম-কা-ওয়াস্তে আর একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করে সেখানে মুনাফার টাকা সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কৌশল নতুন নয়।

নীতি প্রণয়নের পরিকল্পনা প্রসঙ্গে খারে বলেছেন, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে আরও বেশি স্বাধীনতা দেওয়া, তাদের অন্তত আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী করার মতো বিষয়গুলিতে তাঁরা দ্রুত নজর দিতে চান। কিন্তু মোদী জানেন, উচ্চশিক্ষায় একটিই নিয়ন্ত্রক, স্কুলের পাঠ্যক্রম, রাজ্যের এক্তিয়ারে হস্তক্ষেপের মতো বিভিন্ন বিষয়ে মতভেদ হবে পায়ে পায়ে। সম্ভবত সেই কারণেই নিজের রাজনৈতিক দায়বদ্ধতার কথা বলেছেন তিনি। দাবি করেছেন, নীতি ঘোষণার পর থেকে এর বিরুদ্ধে অন্তত পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তোলেননি কেউ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন