দারুব্রহ্ম জগন্নাথ আর সমুদ্রসৈকত। পুণ্যার্জন আর বিনোদনের সুবাদে পুরীর সঙ্গে হৃদয়ের সম্পর্ক কলকাতার। পরিবেশ আদালত বলছে, শ্মশানের সূত্রেও কাছাকাছি আসতে পারে এই দুই শহর। নির্দিষ্ট করে বললে কলকাতার কাছ থেকে শিখতে পারে পুরী!
পুরীর স্বর্গদ্বার শ্মশানের দূষণ ঠেকাতে কলকাতার নিমতলা শ্মশানের পথ নেওয়া যেতে পারে বলে মন্তব্য করেছে ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল বা জাতীয় পরিবেশ আদালত। ট্রাইব্যুনালের পূর্বাঞ্চলীয় ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, দূষণ রোধে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার করে নিমতলায় নতুন কাঠের চুল্লি গড়েছে কলকাতা পুরসভা। কলকাতায় এসে সেই নতুন চুল্লি দেখে স্বর্গদ্বারের দূষণ মোকাবিলায় সেই পদ্ধতি প্রয়োগ করা উচিত পুরী পুরসভার।
পুরীতে সৈকত-বিধি ভেঙে দেদার হোটেল এবং খোলা খাবারের দোকান গড়ে উঠেছে। ভিড়ের স্বাভাবিক দূষণ তো আছেই। সেই সঙ্গে স্বর্গদ্বার শ্মশান এলাকায়, বিশেষত ওই সব হোটেল ও খাবারের দোকানে মাত্রা বাড়িয়ে চলেছে দূষণের। কাঠের চুল্লি থেকে বেরোনো ধোঁয়া ও ছাই এলাকা দূষিত করে তোলে। কয়েক বছর আগে নিমতলাতেও একই অবস্থা হতো। গত বছর কলকাতা পুরসভা ওই শ্মশানঘাটে যে-চিমনি বসিয়েছে, তাতে কাঠের চুল্লির দূষণ কমেছে। কলকাতার মেয়র-পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ জানান, কাশীপুর শ্মশানঘাটের কাঠের চুল্লি সরাতে গিয়ে এলাকাবাসীর আপত্তির মুখে পড়তে হয়েছিল। নতুন প্রযুক্তির কথা ভাবতে শুরু করেন তাঁরা। কাশীপুর শ্মশানের সাফল্যের পরে নিমতলায় চারটি, কেওড়াতলায় দু’টি চুল্লিতে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।
পুরীর দূষণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে হইচই চলছে। পরিবেশ আদালতের নির্দেশে স্বর্গদ্বারে চিমনি বসানো হলেও তা সফল হয়নি। পুরীর দূষণ মামলার শুনানিতে আবেদনকারী পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলেন, চলতি বছরে এ-পর্যন্ত মাত্র চারটি দেহ নয়া প্রযুক্তির চুল্লিতে দাহ করা হয়েছে। তখনই নিমতলার কথা ওঠে। আদালতের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে অতীনবাবু বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই শ্মশানের উন্নতি করেছি আমরা। আদালতের প্রশংসা নতুন পালক জুড়ল আমাদের মুকুটে।’’
দূষণ রুখতে জনসচেতনতা বাড়ানোর নির্দেশও দিয়েছে পরিবেশ আদালত। ডিভিশন বেঞ্চের মন্তব্য, ধর্মীয় ভাবাবেগ রয়েছে ঠিকই। কিন্তু দূষণও তো ঠেকাতে হবে। পুরী পুরসভা আদালতে জানিয়েছে, শ্মশানটি অন্যত্র সরানো যায় কি না, সেই বিষয়েও ভাবনাচিন্তা চলছে।
পুরীর হোটেল নিয়েও কড়া নির্দেশ দিয়েছে পরিবেশ আদালত। একটি নালা দিয়ে পুরীর কিছু হোটেল বর্জ্য ফেলছে সমুদ্রে। আদালতের নির্দেশ, ওই সব হোটেলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। উপকূল বিধি ভেঙে পূর্ব-উপকূল রেলওয়ে একটি গেস্ট হাউস নির্মাণ করছে, এই অভিযোগ পেয়ে তাদেরও মামলায় যুক্ত করতে বলেছে আদালত। এ ব্যাপারে পুরী-কোণার্ক উন্নয়ন পর্ষদের কাছ থেকে হলফনামা চাওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে বলা হয়েছে, সমুদ্রসৈকতের হকারদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ব্যাপারে ওড়িশা প্রশাসনের কাছ থেকে হলফনামা চাওয়া হয়েছে। মামলার পরবর্তী শুনানি ২২ সেপ্টেম্বর। সে-দিন ওড়িশার অ্যাডভোকেট জেনারেলকে হাজির থাকতে বলেছে ডিভিশন বেঞ্চ।