বছরখানেকের মাথায় পঠানকোট বায়ুসেনা ঘাঁটিতে জঙ্গি হামলার ঘটনায় জইশ-ই-মহম্মদ জঙ্গি গোষ্ঠীর প্রধান মাসুদ আজহার-সহ মোট চার জনের নামে চার্জশিট দিল জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। এর ফলে রাষ্ট্রপুঞ্জে মাসুদকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে সওয়াল করায় সুবিধে হবে বলে আশা দিল্লির।
কন্দহর বিমান ছিনতাই কাণ্ডে মুক্তি পাওয়া মাসুদ আজহারকে নিষিদ্ধ জঙ্গি হিসেবে ঘোষণা করার জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে ভারত। পঠানকোট হামলার পরে এ নিয়ে সুর চড়ায় দিল্লি। কিন্তু যথেষ্ট প্রমাণ না থাকার যুক্তি দেখিয়ে গত এক বছরে দু’বার মাসুদকে নিষিদ্ধ করার আর্জি স্থগিত করে দিয়েছে চিন। এনআইএ পঠানকোট হামলার পিছনে আজহারের ভূমিকা প্রমাণ-সহ তুলে ধরায় নতুন ভাবে লড়াইয়ে নামতে চলছে সাউথ ব্লক। ভারতের যুক্তি, মাসুদকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলে পাকিস্তান প্রশাসন প্রকাশ্যে তার পাশে দাঁড়ানো বন্ধ করতে বাধ্য হবে।
এনআইএ-র চার্জশিটে মাসুদ ছাড়াও নাম আছে তার ভাই রউফ আসগরের। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, হামলার পরেই সেটির দায় নিয়ে একটি ভিডিও পোস্ট করে রউফ। তাতে ওই ঘটনায় মাসুদের ভূমিকার কথা বিস্তারিত জানানো হয়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য, ভিডিও থেকেই স্পষ্ট পঠানকোট হামলার মাথা ছিল মাসুদ। চার্জশিটে নাম রয়েছে হামলাকারী চার জঙ্গি ও তাদের দুই হ্যান্ডলারেরও। মাসুদের নির্দেশে হামলা রূপায়ণের নির্দেশ দেওয়া হয় দুই হ্যান্ডলারের হাতে। কাসিফ জান ও শাহিদ লতিফ নামে দুই হ্যান্ডলার বেছে নেয় নাসির হুসেন, হাফিজ আবু বকর, উমর ফারুক, আব্দুল কাউমকে। নিহত চার জঙ্গিই পাকিস্তানের বাসিন্দা। এদের পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের জঙ্গি শিবিরে জেহাদি হিসেবে গড়ে তোলা হয়।
চার্জশিটে বলা হয়েছে, শুরু থেকে হামলার উপরে কাসিফ তীক্ষ্ণ নজর রাখছিল। সেই বিষয়টি কাসিফের সঙ্গে হাজমা মেহবুব শাকির বলে এক ব্যক্তির ফেসবুক চ্যাট থেকেই স্পষ্ট। চ্যাটে হাজমা জানতে চায়-‘‘হামলা কি শেষ?’’ কাসিফ জানায়, ‘‘না।’’ হাজমা এর পর সাঙ্কেতিক ভাষায় জানতে চায়, ‘‘কত জন মুজাহিদিন জঙ্গি বিয়ে করতে গিয়েছে?’’ কাসিফ অবশ্য এই উত্তর এড়িয়ে যায়। এনআইএ আরও জানিয়েছে, হামলার আগে বায়ুসেনা ঘাঁটির ভিতরে লুকিয়ে থাকা অবস্থায় পাকিস্তানের একটি নম্বরে ফোন করে প্রায় ১৮ মিনিট মায়ের সঙ্গে কথা বলে এক জঙ্গি নাসির হুসেন। কী ভাবে, কত জনকে হত্যা করে তারা বায়ু ঘাঁটিতে ঢুকেছে তা-ও মাকে জানায় নাসির। জানায়, তার মৃত্যুর পরে ওস্তাদ বলে এক জন আসবে তার উইল নিয়ে। মা-কে নিজের মৃত্যু উপলক্ষে একটি ভোজের আয়োজন করতে বলে নাসির। তাতে আত্মীয়-বন্ধুদের আমন্ত্রণ করতে বলে।
চক্রান্তকারী হিসাবে আজহার, রউফ, শাহিদ লতিফের বিরুদ্ধে রেড কর্নার নোটিস জারি করেছে ইন্টারপোল। চতুর্থ ব্যক্তি কাসিফ জানের বিরুদ্ধে রেড কর্নার নোটিস জারির প্রক্রিয়া চালু রয়েছে বলে চার্জশিটে জানানো হয়েছে।