স্কুলপড়ুয়াদের হাতে অস্ত্র তুলে দিত জঙ্গি নিজিরা

জঙ্গিদের খোঁজে উত্তর-পূর্বে সেনা অভিযানের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছিল অসমের ওই তরুণী। গড়েছিল প্রতিরোধও।

Advertisement

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৫ ০৩:৩৩
Share:

নিজিরার মোবাইল থেকে উদ্ধার হওয়া ছবি।

জঙ্গিদের খোঁজে উত্তর-পূর্বে সেনা অভিযানের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছিল অসমের ওই তরুণী। গড়েছিল প্রতিরোধও।

Advertisement

শেষে জানা গেল, মানবাধিকার বাঁচানোর লড়াইয়ে সামিল নিজিরা বসুমাতারি নিজেই মায়ানমারে প্রশিক্ষিত জঙ্গি! বড়োভূমি থেকে কিশোরীদের দলে টেনে তাদের হাতে কালাশনিকভ রাইফেল তুলে দেওয়াই ছিল তার কাজ। সেনার দাবি, গত বছর কোকরাঝাড় গণহত্যা-কাণ্ডেও নিজিরার সক্রিয় ভূমিকা ছিল।

যৌথ বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়া নিজিরা জেরায় জানিয়েছে, অসমের পাশাপাশি নাগাল্যান্ডেও জঙ্গি বাহিনী তৈরির জাল ছড়িয়েছিল সে। তার মোবাইল ফোন থেকে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র হাতে ৫ কিশোরীর ছবিও মিলেছে। পুলিশ সূত্রে খবর, চিরাংয়ের রুণিখাটা বেংতল এলাকার জিয়াগুড়ি গ্রামের বাসিন্দা নিজিরা। জঙ্গি দলে তার পরিচিতি বি নেইনা নামে। এনডিএফবি নেতা বি বিদাইয়ের নির্দেশে সে বড়োভূমির স্কুলপড়ুয়া মেয়েদের ফুঁসলিয়ে জঙ্গি দলের সদস্য করছিল। তেমন ১০-১২ জন কিশোরী এখন প্রশিক্ষণ নিচ্ছে বড়োভূমির কোনও গোপন জঙ্গিঘাঁটিতে।

Advertisement

জেলার এসপি রঞ্জন ভুঁইঞা জানান, ২৪ বছরের নিজিরা ২০১১ সালে এনডিএফবি জঙ্গি বাহিনীতে যোগ দেয়। ২০১২ সালে মায়ানমারে প্রশিক্ষণ নিয়েছিল সে। এক বছর ধরে গেরিলা যুদ্ধের খুঁটিনাটি তাকে জানানো হয়। শেখানো হয় এ কে রাইফেল, এম ১৬, হরেক কিসিমের পিস্তল চালানো। গ্রেনেড ছুড়তেও সে সমান পারদর্শী। এর পর তার উপরে এনডিএফবি-র মহিলা বাহিনীকে শক্তিশালী করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। অসমে ফিরে সে স্কুলের দরিদ্র মেয়েদের নিশানা করে। টাকার লোভ দেখিয়ে তাদের দলে টানত। পরে কিশোরীদের বাড়িতে জানানো হত, কাজ খুঁজতে কয়েক দিনের জন্য তাদের বাইরে নিয়ে যাওয়া হবে। সে জন্য তাদের বাড়ির লোকদের টাকাও দিত নিজিরা। স্কুলপড়ুয়া ওই কিশোরীদের এর পর মায়ানমার, অরুণাচল, নাগাল্যান্ডের জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবিরে নিয়ে যাওয়া হতো।

পুলিশ জানায়, যৌথ বাহিনীর ‘অপারেশন অল আউট’-এর আগে উল্টাপানিতে জঙ্গিনেতা বি বিদাই, বি বাথাদের সঙ্গে একই শিবিরে ছিল নিজিরা। পরে সে চিরাংয়ের গ্রামে আত্মগোপন করে। সেনাবাহিনী, পুলিশ ও কোবরা বাহিনী গত কাল সেখান থেকেই তাকে গ্রেফতার করে।

সেনা মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল সুনীত নিউটন জানান, গত বছর ডিসেম্বরে কোকরাঝাড় গণহত্যায় সামিল ছিল নিজিরা। কিন্তু উল্টে সে জঙ্গি বিরোধী অভিযানের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করে। গ্রামবাসীদের সঙ্গে নিয়ে প্রতিবাদ মিছিল বের করত। জেরায় নিজিরা জানিয়েছে, জঙ্গিঘাঁটির খোঁজে যাতে জঙ্গলে যৌথ বাহিনীর অভিযান বন্ধ করা যায়, সেই লক্ষ্যেই জনসমর্থন জোগাড় করছিল।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, জঙ্গিদের প্রমীলা-বাহিনী গড়তে কোকরাঝাড়, চিরাং, বাক্সা জেলার কিশোরী, তরুণীরা নিজিরার ‘টার্গেট’ ছিল। মায়ানমারে থাকা সংগ্রামপন্থী এনডিএফবির স্বরাষ্ট্র সচিব বি রেবগন ওই কিশোরীদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ দিত। নিজিরার মোবাইল ফোন থেকে এমনই একটি প্রশিক্ষণ শিবিরে এ কে ৪৭ ও এ কে ৫৬ রাইফেল হাতে পাঁচ কিশোরীর ছবি পাওয়া গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন