হুঙ্কার-পাল্টা হুঙ্কারে এখন তাল ঠোকাঠুকির খেলা

সপ্তাহান্তে অচল সংসদের লড়াই এ বারে বাইরে নিয়ে এল সব পক্ষ। কাল রাহুল গাঁধী সংসদের বাইরেই বলেছিলেন, একজন ফেরার অভিযু্ক্তকে সাহায্য করে ফৌজদারি অপরাধ করেছেন সুষমা স্বরাজ। ফলে তাঁর জেলে যাওয়া উচিত। রাজ্য সফরে বেরিয়েও সরকারকে বিঁধছেন তিনি। আজ সংসদের বাইরেই নরেন্দ্র মোদী সরকারের মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী পাল্টা হুঙ্কার ছেড়ে বললেন, রাহুল গাঁধী ক্ষমা চান।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৫ ১৯:১৯
Share:

সপ্তাহান্তে অচল সংসদের লড়াই এ বারে বাইরে নিয়ে এল সব পক্ষ।

Advertisement

কাল রাহুল গাঁধী সংসদের বাইরেই বলেছিলেন, একজন ফেরার অভিযু্ক্তকে সাহায্য করে ফৌজদারি অপরাধ করেছেন সুষমা স্বরাজ। ফলে তাঁর জেলে যাওয়া উচিত। রাজ্য সফরে বেরিয়েও সরকারকে বিঁধছেন তিনি। আজ সংসদের বাইরেই নরেন্দ্র মোদী সরকারের মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী পাল্টা হুঙ্কার ছেড়ে বললেন, রাহুল গাঁধী ক্ষমা চান। তা না হলে মানহানির মামলা করা হবে। তার আগেই আজ সকালে বেনজির ভাবে সকালে সংসদের গাঁধী মূর্তির পাদদেশে কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রীদের ইস্তফার দাবিতে ধর্নায় বসলেন খোদ শাসক বিজেপি দলের সাংসদরা।

সংসদের রফাদফা। আগামী সপ্তাহেও চলার কোনও ইঙ্গিত নেই। কিন্তু লড়াইটা এখন স্তব্ধ সংসদের বাইরে নিয়ে চলে এল বিবাদমান দুই গোষ্ঠী।

Advertisement

বিজেপি মানহানির মামলা করতে যে খুব আগ্রহী এমন নয়। আবার রাহুল গাঁধীর বিরুদ্ধে মানহানির মামলায় কংগ্রেস যে বিচলিত তা-ও নয়। কংগ্রেস অবশ্য পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে বলছে না, রাহুলের বিরুদ্ধে বিজেপি মামলা করলে করুক। কিন্তু হাবেভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে, বিজেপির ভয়ে তারা আদৌ পিছ পা হচ্ছে না। কংগ্রেসের মুখপাত্র দুঁদে আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, রাহুল গাঁধী যেটি বলেছেন, সেটি সঠিক প্রেক্ষাপটে বুঝতে হবে। তিনি বলেছেন, একজন ফেরার অভিযুক্তকে বিদেশমন্ত্রী সাহায্য করেছেন। ফলে সেটি প্রিভেনশন অফ কোরাপশন আইনের ১৩ (১) (ডি) ধারায় অপরাধ। সরকারি পদে থেকে কোনও অপরাধীকে সাহায্য করতে পারেন না কেউ, তার সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি জড়িত থাকুক বা না থাকুক।

প্রশ্ন হল, সামনের সপ্তাহ থেকে সংসদের কী হবে?

কোনও পক্ষ থেকেই সংসদ চলার কোনও ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না। বিজেপির শীর্ষ সূত্রের মতে, নরেন্দ্র মোদী কিংবা তাঁর সেনাপতি অরুণ জেটলির মত নেতারা যে সুষমা স্বরাজ, বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া কিংবা শিবরাজ সিংহ চৌহানকে বাঁচানোর জন্য আন্তরিক, এমন নয়। তবে তাই বলে তাঁদের ইস্তফা দেওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই। কারণ, একবার তাঁদের ইস্তফা নেওয়া হলে তার আঁচ পড়বে সরাসরি নরেন্দ্র মোদীর উপরে। কিন্তু এই নেতাদের ইস্তফার দাবিতে সংসদ যদি অচল থাকে, তাহলে বিজেপির অভ্যন্তরে নরেন্দ্র মোদী-বিরোধী গোষ্ঠীর উপর চাপ বজায় থাকবে।

তাহলে সংস্কারের বিলগুলির কী হবে?

বিজেপির এক শীর্ষ নেতা আজ বলেন, ‘‘আমরা মানসিক ভাবে প্রস্তুত, সংসদের অধিবেশন চলবে না। কারণ, মন্ত্রীরা ইস্তফা দেবেন না। আর বিহার নির্বাচনের আগে জমি বিল আমরা নিজেরাই আর পাশ করাতে আগ্রহী নই। কারণ, তাতে বিবাদ আরও বাড়বে। বাকি রইল পণ্য ও পরিষেবা কর। সেটিকে বরং পাশ করানোর জন্য সংসদের শেষ লগ্নে চেষ্টা করা হবে। তারজন্য সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি, তৃণমূল কংগ্রেসের মত দলের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আশা করা যাচ্ছে, আগামী সপ্তাহ থেকে বিরোধীদের আক্রমণের ধার আরও কমবে।’’

কিন্তু এতদিন ধরে সংসদ অচল করে সেটি স্বাভাবিক করার জন্য বিরোধীদের মুখরক্ষার জন্য কিছু দেওয়া হচ্ছে কি? বিজেপি নেতাদের কাছে তার কোনও জবাব নেই। তবে বিজেপি নেতা প্রকাশ জাভড়েকর আজ বলেন, ‘‘আমরা আজ গাঁধী মূর্তির পাদদেশে ধর্না দিয়েছি, যাতে বিরোধীদের সুমতি হয়। আশা করি, সোমবার থেকে বিরোধীরা আলোচনায় সামিল হয়ে সংসদ চলতে দেবে।’’ কিন্তু শাসক দল হিসেবে সংসদের বাইরে বিজেপির এই ধর্না নিয়েই আজ কটাক্ষ করেন বিরোধীরা। জেডি(ইউ) নেতা শরদ যাদব বলেন, ‘‘সরকারে যে দল বসে রয়েছে, তারা সর্বশক্তিমান। তাদের হাতে সব ক্ষমতা রয়েছে। তারপরে তারা ধর্না করে কার কাছে আবেদন করছে? ভগবানের কাছে?’’ আম আদমি পার্টি নেতা কুমার বিশ্বাস টুইট করে বলেন, বোধহয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কাছে দাবি করছে সরকার। মায়াবতীর বক্তব্য: সরকার ধর্না না দিয়ে বরং নিজের মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক। কিন্তু অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির বক্তব্য, সরকার যাই করুক, ইস্তফা না দিলে কোনও আলোচনা নয়। আর বিজেপি বলছে, ইস্তফার প্রশ্নই নেই। ইস্তফা দিলেও বিরোধীরা সংসদ চলতে দেবে না।

ফলে সপ্তাহান্তে যে যার নিজের অবস্থানে অনড়। অপেক্ষা কি আরও এক অচল সপ্তাহের?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন