সম্প্রতি ইফতার পার্টিতে লালু প্রসাদ এবং নীতীশ কুমার।— ফাইল চিত্র।
মুখে বলা হচ্ছে, সোমবারের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়েই বৈঠকে বসছেন জেডিইউ পরিষদীয় দলের নেতারা। নিজেদের পৃথক পরিষদীয় বৈঠকের বিষয়ে একই মত আরজেডি-র তরফেও। তবে, সূত্রের খবর, দুই পৃথক বৈঠকের অন্যতম মূল অ্যাজেন্ডাই হতে চলেছেন তেজস্বী যাদব। তেজস্বীকে দেওয়া নীতীশের দলের চার দিনের সময়সীমা গত কাল রাতেই শেষ হয়েছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, নীতীশ-লালুর আলাদা আলাদা পরিষদীয় নেতাদের বৈঠকের দিকেই তাকিয়ে বিহারের জোট সরকারের ভবিষ্যৎ। ওই বৈঠকেই তেজস্বীর বিষয়ে চূড়ান্ত রণকৌশল ঠিক করতে পারে দুই দলই।
হোটেল-জমি লেনদেন কাণ্ডে সিবিআই-এর আনা এফআইআর সম্পর্কে উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদবকে ‘তথ্যনিষ্ঠ ব্যাখ্যা’ দেওয়ার জন্য জেডিইউয়ের তরফে চার দিন সময় দেওয়া হয়েছিল। গত কাল সেই সময়সীমা শেষ হয়েছে। মহাজোটের এই দুই শরিকের টানাপড়েনের মধ্যে চাপ বাড়ানোর খেলায় নেমেছে বিজেপি। শনিবার দিল্লিতে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ নীতীশ-বিজেপি ‘কম্বিনেশন’-এর প্রশংসা করায় চাপ বেড়েছে বিহারের জোট রাজনীতিতে। অন্য দিকে, আরজেডির প্রধান লালুপ্রসাদ যাদব গত কাল রাতে ফের একবার স্পষ্ট করেছেন, ছেলে তেজস্বী যাদবের পাশেই থাকবে দল। তাঁকে কোনও ভাবেই উপমুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে বলা হবে না।
এই অবস্থায় লালুপ্রসাদ ও নীতীশ কুমারের দ্বৈরথ মেটানোর চেষ্টা করে চলেছেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই বিহারের মুখ্যমন্ত্রী এবং আরজেডি-প্রধানের সঙ্গে আলাদা ভাবে টেলিফোনে কথাও বলেছেন সনিয়া। লালু ও তাঁর পুত্র-কন্যার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে বিহারের জোট নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হলেও, তা অটুট রাখার চেষ্টা করছেন কংগ্রেস সভানেত্রী।
বিহার পরিস্থিতি নিয়ে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা কিন্তু দোলাচলে। নীতীশ কী করতে পারেন, তা নিয়েই তাঁরা ধন্দে। আসলে ২০১৯-এর লোকসভাকে বেশি গুরুত্ব দিলেও বিশেষজ্ঞদের মতে নীতীশের কাছে ২০১৯-এর থেকেও গুরুত্বপূর্ণ ২০২০ সালের বিহার বিধানসভা ভোট। গত লোকসভা ভোটে বিহারে বিজেপি তথা এনডিএ আসন সংখ্যার নিরিখে জয়ধ্বজা ওড়ালেও শতাংশের ভোটের হিসেবে তারা পেয়েছিল ৩৯.৫% ভোট। যার মধ্যে বিজেপি একাই পেয়েছিল ২৯.৯%। ত্রিধা বিভক্ত বিরোধীরা পেয়েছিল ৪৫.১% ভোট (আরজেডি ২০.৫%, জেডিইউ ১৬.০% ও কংগ্রেস ৮.৬%)।
আরও পড়ুন: নীতীশের সঙ্গে মঞ্চ, এড়িয়ে গেলেন তেজস্বী
এক বছর পরে কংগ্রেসকে নিয়ে মহাজোট গড়ে বিজেপিকে উড়িয়ে দিয়েছিলেন লালু-নীতীশ। রাজ্যের তিন-চতুর্থাংশ আসন দখলে আনে মহাজোট। এনডিএ জোটের ভোট কমে ৩৪.১ শতাংশে দাঁড়ায়। বিজেপি পায় ২৪.৪% ভোট। পাশাপাশি, জোটবদ্ধ বিরোধী ভোট একত্রে পৌঁছয় ৪১.৯ শতাংশে (আরজেডি ১৮.৪%, জেডিইউ ১৬.৮%ও কংগ্রেস ৬.৭%)।
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, আসলে বিজেপি-কে নীতীশের যত না দরকার তার থেকেও বিজেপির নীতীশকে অনেক বেশি প্রয়োজন। কারণ বিরোধী জোট ভাঙতে না পারলে ২০১৪-র পুনরাবৃত্তি ২০১৯-এ হওয়ার সম্ভাবনা কম। সে ক্ষেত্রে লোকসভায় বিজেপির একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পথে বাধা হতে পারে বিহার। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে মোদীর সঙ্গে দর কষাকষিতে নীতীশ এক ধাপ এগিয়েই থাকবেন।
সব মিলিয়ে আজকের বৈঠকের অনেক কিছু সমীকরণের সমাধান সূত্র মিলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।