কুর্সি অটুট রাখতে 'বন্ধুবদল'! ছবি- পিটিআই
বন্ধুত্বের হাতবদল করে ১৫ ঘণ্টার ব্যবধানে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী ফের নীতীশ কুমারই। বৃহস্পতিবার সকালে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর কাছে শপথ নেন তিনি। এ দিন তাঁর সঙ্গে রাজ্যের উপমুখমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন সুশীল মোদীও। সংবিধান মেনে নীতীশকে বিধানসভায় আস্থাভোটের জন্য দু’দিন সময় দিয়েছেন রাজ্যপাল। আগামী কাল শুক্রবার বিধানসভায় আস্থাভোটে যাবেন ‘নয়া’ মুখ্যমন্ত্রী।
আরও পড়ুন- চিত্রনাট্য তৈরিই ছিল? ঘটনাপ্রবাহে তারই ইঙ্গিত
রাতভর নাটকের পর প্রথমে ঠিক হয়েছিল, বিকেল পাঁচটায় শপথ নেবেন নীতীশ। কিন্তু, গভীর রাতে তা এগিয়ে সকাল ১০টা করা হয়। বিকেলের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর থাকার কথাও ছিল। তবে, শপথের অনুষ্ঠান প্রায় সাত ঘণ্টা এগিয়ে আসায় মোদী আসতে পারেননি বলে বিজেপি-র দাবি।
এ দিন শপথগ্রহণের পর রাজভবনের একতলার কনফারেন্স রুমে রাজ্যপালের সঙ্গে জলযোগ সারেন নীতীশ-সুশীল। সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেপি নাড্ডা-সহ বিজেপি এবং জেডিইউ-এর একাধিক নেতা। এর পর বেলা ১১টা নাগাদ রাজভবন থেকে বেরিয়ে ১ নম্বর অ্যানি মার্গে যান নীতীশ-সুশীল। ওই ঠিকানার বাংলোতে নীতীশ থাকেন। সেখানে প্রথামাফিক মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠক বসে। আপাতত এই মন্ত্রিসভার দু’জন সদস্য— নীতীশ এবং সুশীল। নয়া মন্ত্রিসভায় কারা থাকবেন, তা এখনও ঠিক হয়নি। তার আগেই আস্থাভোটে জয়ী হতে হবে নীতীশকে। যদিও বিজেপির দাবি, আস্থাভোটে নীতীশের জয়ী হওয়াটা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
দেখুন ভিডিও...
২০১৫-র নভেম্বরে বিহারে নীতীশের জেডিইউ-এর সঙ্গে মহাজোট গড়ে ওঠে লালুপ্রসাদের আরজেডি। ওই মহাজোটই রাজ্যে সরকার গড়ে। মুখ্যমন্ত্রী হন নীতীশ কুমার। কিন্তু, যত দিন গড়ায় দু’পক্ষের মধ্যে দূরত্ব স্পষ্ট হতে থাকে। গত আড়াই বছরে সেই সম্পর্ক প্রায় তলানিতে এসেই ঠেকেছিল। তারই ফলশ্রুতি হিসাবে, ১৫ ঘণ্টা আগে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর সঙ্গে দেখা করেন। তার পরেই রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল পড়ে যায়। মহাজোট ভেঙে তবে কি বিজেপি-র সঙ্গেই জোট গড়তে যাচ্ছেন নীতীশ? প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর টুইট থেকে বিজেপি নেতা সুশীল মোদীর বক্তব্য— সব মিলিয়ে সেই ইঙ্গিতই মিলতে থাকে। এর পর যত সময় গড়িয়েছে, বিজেপি-নীতীশ ঘনিষ্ঠতা তত স্পষ্ট হতে থাকে।
সন্ধ্যা থেকে রাত— নানা নাটকীয় মুহূর্ত তৈরি হয় জাতীয় রাজনীতিতে। স্পষ্ট হয়ে যায়, বিজেপির সমর্থনেই ফের সরকার গড়বেন নীতীশ। মাঝরাতেই রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন নীতীশ কুমার এবং বিহার বিধান মণ্ডলের চেয়ারম্যান তথা বিজেপি নেতা সুশীল মোদী। তার পরেই ঠিক হয়, এ দিন সকালেই শপথ নেবেন নয়া জোটের নেতা নীতীশ কুমার।
নীতীশের পুরনো সঙ্গী বিজেপি। একটা সময়ে এনডিএ জোটে ছিল জেডিইউ। বছর চারেক আগে সেই বন্ধুত্বে ছেদ পড়ে। পরের বছর বিরোধী শিবির আরজেডি-র হাত ধরে নীতীশ ফের ক্ষমতায় আসেন। এ বার সেই বন্ধুত্বে ইতি টেনে ফের পুরনো সম্পর্কেই ফিরলেন নীতীশ কুমার। ধরে রাখলেন মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিও।