শরদ পওয়ারের সঙ্গে বৈঠকে রাহুল গাঁধী। নিজস্ব চিত্র
ভোটে হারের দায় নিয়ে ইস্তফায় অনড় সভাপতি। দলের মধ্যেও দোলাচল আর অনিশ্চয়তা। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস জানাল, তাদের মুখপাত্রেরা আগামী এক মাস কোনও সংবাদ চ্যানেলের বিতর্কসভায় যাবেন না। কংগ্রেস মুখপাত্র তথা যোগাযোগের ভারপ্রাপ্ত নেতা রণদীপ সুরজেওয়ালা আজ টুইটারে বিষয়টি জানিয়ে সমস্ত চ্যানেল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছেন, তাঁরা যেন কোনও বিতর্কের প্যানেলে কংগ্রেসের প্রতিনিধিকে না-ডাকেন।
দলীয় সূত্র জানাচ্ছে, সভাপতি পদে রাহুলের ভবিষ্যৎ নিয়ে অবাঞ্ছিত মন্তব্য এড়াতেই আপাতত এই সিদ্ধান্ত। দলের ঘোষিত অবস্থান হল, রাহুলের ইস্তফা খারিজ করেছে ওয়ার্কিং কমিটি। সংগঠন ঢেলে সাজার দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে তাঁর হাতে। কিন্তু রাহুল তা মানবেন কি মানবেন না, সভাপতি থাকবেন কি থাকবেন না— ইত্যাদি নিয়ে নবীন-প্রবীণ নানা নেতা সংবাদমাধ্যমে মন্তব্য করে যাচ্ছিলেন। যা অনেক সময়েই পরস্পরবিরোধী হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। তাই সমস্ত রাজ্যের নেতৃত্বের উদ্দেশেই ওই নির্দেশ জারি করা হয়েছে।
আগামী শনিবার, ১ জুন কংগ্রেসের নতুন সংসদীয় দলের বৈঠক। রাহুল জানিয়ে দিয়েছেন, সংসদীয় দলের নেতৃত্ব দিতে তাঁর আপত্তি নেই। কাজেই শনিবার সর্বসম্মতিক্রমে সেই পদে মনোনীত হতে পারেন তিনি। কিন্তু কংগ্রেস সভাপতি পদ থেকে ইস্তফায় তিনি অনড় থাকলে? দলীয় সূত্রের বক্তব্য, সেটিও হবে সংগঠনে একটি বড়সড় পরিবর্তন। কিন্তু গোটাটাই একটি প্রক্রিয়া। খাতায়-কলমে এখন রাহুলই যে-হেতু কংগ্রেস সভাপতি, ফলে ভবিষ্যতে সংগঠনে তাঁর নিজের ভূমিকা এবং দলীয় কাঠামোর রূপরেখা তাঁকেই তৈরি করতে হবে। সেই কাজটিই এখন তিনি শুরু করেছেন। সংসদীয় দলের বৈঠক ডাকা বা অন্য নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়গুলি এরই সঙ্গে সম্পৃক্ত। এবং এই পরিস্থিতিতে নেতারা মাসখানেক অবাঞ্ছিত মন্তব্য থেকে বিরত থাকলে আখেরে খোলা মনে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন রাহুল। দলের যে প্রবীণরা এখন আর ততটা কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারেন না, তাঁদের সরিয়ে সংগঠনে তরুণ মুখ আনার প্রক্রিয়া আগেই শুরু করেছেন তিনি। অনেকের মতে, ভোটের পর থেকে প্রবীণদেরই একটা বড় অংশ মূলত অস্বস্তি বাড়াচ্ছেন দলের। টিম-রাহুলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য সুরজেওয়ালা বকলমে তাঁদেরই আজ বার্তা দিয়েছেন।
রাহুলের সঙ্গে আজ দেখা করেন কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী এইচ ডি কুমারস্বামী। সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দিতে রাহুলকে বারণ করেন তিনি। ছিলেন সনিয়া গাঁধীও। এর পরে এনসিপি নেতা শরদ পওয়ারের বাড়ি গিয়ে তাঁর সঙ্গে ঘণ্টা দুয়েক বৈঠক করেন রাহুল। সেই বৈঠকের পরে রাজধানীতে জল্পনা ছড়িয়ে পড়ে, কংগ্রেস ভেঙে তৈরি করা নিজের দলকে ফের কংগ্রেসে মিশিয়ে দেওয়ার কথা ভাবছেন পওয়ার। সে ক্ষেত্রে রাজ্যসভায় গুলাম নবি আজাদের বদলে পওয়ারই দলনেতা হবেন বলেও চর্চা শুরু হয়ে যায়। ঘনিষ্ঠ মহলে অবশ্য সেই সম্ভাবনা খারিজ করে দেন পওয়ার। বলেন, ভোটের ফলাফল নিয়েই কথা হয়েছে তাঁর ও রাহুলের। যদিও তাতে পওয়ারের বাড়ি গিয়ে কংগ্রেস সভাপতির দু’ঘণ্টা বৈঠক করার প্রয়োজন কেন পড়ল, সেই প্রশ্ন উঠছে। রাহুল সভাপতি থাকছেন কি না, জিজ্ঞাসা করা হলে ঘনিষ্ঠ মহলে পওয়ার বলেন, আপাতত রাহুল থাকছেন। পওয়ারের পরে রাহুল দেখা করেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে।
এর পরে সনিরা-রাহুল রওনা হন রাষ্ট্রপতি ভবনে নরেন্দ্র মোদীর শপথ অনুষ্ঠানে। এত ক্ষণের জিন্স-পাঞ্জাবির পাল্টে রাহুলের পরনে তখন ধোপদুরস্ত পাজামা-পাঞ্জাবি।