বিনয়ের তোপ মন্দির চাই, ছক দেখছে কংগ্রেস

গত কালই সংখ্যালঘু ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জোর দিয়েছেন দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের উপর। জানিয়েছেন, বিভাজনের রাজনীতি বরদাস্ত করবে না তাঁর সরকার। এর এর চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে তাঁর দলের সাংসদ বিনয় কাটিয়ার তোপ দাগলেন, আর্থিক উন্নয়নের পাশাপাশি রামমন্দিরও চাই! নয়তো ভয়ঙ্কর হবে পরিণতি। বিরোধীরা বলছেন, এই দু’মুখো নীতিই বিজেপির রণকৌশল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৫ ০৪:১৪
Share:

গত কালই সংখ্যালঘু ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জোর দিয়েছেন দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের উপর। জানিয়েছেন, বিভাজনের রাজনীতি বরদাস্ত করবে না তাঁর সরকার। এর এর চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে তাঁর দলের সাংসদ বিনয় কাটিয়ার তোপ দাগলেন, আর্থিক উন্নয়নের পাশাপাশি রামমন্দিরও চাই! নয়তো ভয়ঙ্কর হবে পরিণতি। বিরোধীরা বলছেন, এই দু’মুখো নীতিই বিজেপির রণকৌশল।

Advertisement

ক’দিন আগে একই দাবি তুলেছিলেন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতারা। কিন্তু বিজেপি নেতৃত্ব বা সরকারের পক্ষ থেকে সেটিকে আমল দেওয়া হয়নি। বরং প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং বলে আসছেন, কোনও ভাবেই সাম্প্রদায়িক অবস্থান তিনি নেবেন না। কালই নিজের বাসভবনে অল ইন্ডিয়া ইমাম সংগঠনের প্রধান ইমাম উমের আহমেদ ইলিয়াসির নেতৃত্বে তিরিশ জনের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দেখা করেন মোদী। সেখানেও তিনি জানান, সাম্প্রদায়িকতাকে বরদাস্ত করবেন না। উন্নয়নই সব সমস্যার সমাধান। আর তার পর দিনই বিজেপি সাংসদ কাটিয়ারের এই মন্তব্য! বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘কাটিয়ার বরাবরই এই অবস্থান নিয়ে এসেছেন। এর মধ্যে অভিনবত্ব কিছু নেই। তবে প্রধানমন্ত্রী বলার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে যে ভাবে তিনি বললেন, তা দলের কাছে একটু অস্বস্তির বটে।’’

কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের অবশ্য বক্তব্য, এটাই বিজেপির রণকৌশল। এক দিকে প্রধানমন্ত্রী বা বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ বলবেন ধর্মনিরপেক্ষতার কথা। আর রামমন্দিরের দাবি জানাবেন সঙ্ঘ-ঘনিষ্ট নেতারা। কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির কথায়, ‘‘সামনেই বিহারের ভোট। তার আগে ফের মেরুকরণের রাজনীতি উস্কে দিতেই বিজেপির এই দ্বিমুখী কৌশল।’’

Advertisement

তবে কংগ্রেসের ধারণা, কাটিয়ার যা-ই বলুন না কেন, বিজেপি এখনই কোনও পদক্ষেপ করবে না। কারণ, বিজেপি সভাপতি প্রকাশ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন, মোদী সরকারের বর্তমান মেয়াদে সঙ্ঘের মূল লক্ষ্যগুলি শিকেয় তুলে রাখা হয়েছে। কিন্তু ভোট মেরুকরণের অঙ্ক মেলাতেই মন্দির প্রসঙ্গ তুলেই যাবে তারা।

শুধু মোদীই নন, দিন কয়েক আগে অযোধ্যায় গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহও বলে এসেছিলেন, রাজ্যসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় সরকার এখই কোনও আইন প্রণয়ন করতে পারছে না। অমিত শাহও দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়েছেন, সঙ্ঘের মূল প্রস্তাবগুলো নিয়ে এখনই পদক্ষেপ করা সম্ভব নয়। কারণ, বিজেপি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও দুই-তৃতীয়াংশ সাংসদ তাদের নেই। তা সত্ত্বেও কাটিয়ারের দাবি, আদালতের রায়ের জন্য অপেক্ষা না করে সরকারের উচিত আলোচনা করে আইন আনা। লোকসভায় বিল পাশ করে বিতর্কিত এলাকাটিকে রামের জন্মস্থল ঘোষণা করার এটাই উপযুক্ত সময়। উন্নয়নের পাশাপাশি এ-ও গুরুত্বপূর্ণ। এটা না করা হলে রামভক্তরা আগ্নেয়গিরির মতো ফেটে পড়বে। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের এক নেতারও বক্তব্য, সরকার চালাতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী যা-ই বলুন, রামমন্দির হিন্দুদের আবেগের বিষয়। আদালত কিংবা পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে এর সমাধান বের হতে পারে। ইলাহাবাদ হাইকোর্টের আদেশের ভিত্তিতে সরকার আইন পাশ করে বিতর্কের নিষ্পত্তি করতে পারে। তাঁর প্রশ্ন, আর্থিক সংস্কারে বিল পাশ করানোর জন্য সরকার যদি যৌথ অধিবেশন ডাকতে পারে, তবে রামমন্দিরের জন্য উদ্যোগী হবে না কেন!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন