অখিলেশ যাদব।
যে যায় লঙ্কায়, সেই নাকি রাবণ হয়! আর যে মুখ্যমন্ত্রী যান নয়ডায়, তিনিই নাকি কুর্সি হারান!
এমনই বিশ্বাস, উত্তরপ্রদেশে। গত মাসে মেট্রো লাইনের উদ্বোধনে নয়ডা গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর তাই আজ বেজায় খুশি সদ্য ক্ষমতা হারানো সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব। উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী আজ সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘দেখবেন নয়ডা কী ভাবে ওঁদের জীবনে অলক্ষণ ডেকে আনে। ভাল হবে, দু’জনেই ক্ষমতা হারাবেন!’’
তবে, এই ধরনের কুসংস্কারকে গুরুত্ব দিতে নারাজ অনেকেই। তাঁদের মতে কোনও শহরে এক জন মুখ্যমন্ত্রী গেলেই ক্ষমতা হারাবেন, এটা কোনও কথা হতে পারে না। হার-জিত অন্য কারণের উপরে নির্ভর করে। কে কোন শহরে পা রাখছেন, তাতে কিছু যায় আসে না।
অখিলেশ একা নন, নয়ডাকে নিয়ে এমন কুসংস্কার উত্তরপ্রদেশের অনেক রাজনীতিকেরই। আর ক্ষমতায় বসলে নয়ডা সফর এড়িয়ে যাওয়াই রীতি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের। ২০১১ সালে দলিত প্রেরণা স্থল পার্কের উদ্বোধনে নয়ডায় পা রেখেছিলেন মায়াবতী। পরের বছর বিধানসভা ভোটে গো-হারা হারেন তিনি। ক্ষমতায় এসে পাঁচ বছর নয়ডাকে পাশ কাটিয়ে গিয়েছেন অখিলেশ। সেখানকার যাবতীয় প্রকল্পের উদ্বোধন করতেন সুদূর লখনউ থেকে।
তাতেও অবশ্য ফাঁড়া কাটেনি। ভোটের আগে ‘বিকাশ রথযাত্রা’-য় গোটা রাজ্য ঘুরে, নয়ডা প্রবেশ না করে গ্রেটার নয়ডার সীমানা থেকেই ফিরে যান তিনি। কিন্তু তাতেও হার হয় অখিলেশের। সপা শিবিরের আক্ষেপ, ভাইয়াজি কেন যে গ্রেটার নয়ডা যেতে গেলেন! নামের শেষে যে নয়ডা ছিল, সেটা খেয়াল রাখা উচিত ছিল।
‘অলুক্ষণে’ হিসেবে নয়ডা অবশ্য আজ নয়, নাম কেড়েছে আটের দশক থেকেই। ১৯৮৮ সালে বীর বাহাদুর সিংহ নয়ডা ঘুরে যাওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই কুর্সি হারান। ১৯৮৯ সালে একই দশা এন ডি তিওয়ারির। ১৯৯৫ সালে নয়ডা ঘোরার এক মাসের মধ্যে ক্ষমতা হারান মুলায়ম সিংহ যাদব। ১৯৯৭ সালে বহেনজি। আর ১৯৯৯-এ নয়ডার ‘শিকার’ কল্যাণ সিংহ!
ফলে গত ৩০ বছর ধরে মুখ্যমন্ত্রীদের কাছে রীতিমতো ‘অপয়া’ হয়ে রয়েছে নয়ডা। সরকারি প্রকল্পে মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতি থেকে প্রায় বঞ্চিতই থেকেছে দিল্লি লাগোয়া ওই শহর। অবশ্য কুসংস্কারের মুখে ছাই দিয়ে গত ২৫ ডিসেম্বর নয়ডায় পা দেন যোগী আদিত্যনাথ।
এখন দেখার তিনি রাজ্যপাট রাখতে পারেন নাকি ‘অলুক্ষণে’ নয়ডার নতুন শিকার হন!