Telangana

মোদীর আমলে কিছুই হয়নি, দায়িত্ব নিয়েই একান্ত সাক্ষাৎকারে বললেন আজহার

সব ভিড় ঠেলে ভিন্‌ রাজ্যের সাংবাদিককে নিয়ে উঠে পড়লেন তাঁর এসইউভি-তে। ভি়ডিয়ো সাক্ষাৎকার শুনে গাড়ি থামিয়ে সামনে থেকে চলে এলেন পিছনে। তার পর বললেন, ‘‘ওয়েলকাম টু হায়দরাবাদ। বলিয়ে, ক্যায়া শুননা হ্যায়!’’

Advertisement

উজ্জ্বল চক্রবর্তী

হায়দরাবাদ শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৮ ১৯:১০
Share:

দায়িত্ব নেওয়ার পর আজহার।—নিজস্ব চিত্র।

দুপুরেই খবরটা এসেছিল। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী তেলঙ্গানা প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির কার্যনির্বাহী সভাপতি হিসেবে প্রাক্তন ক্রিকেটার তথা দলের প্রাক্তন সাংসদ মহম্মদ আজহারউদ্দিনের নামে সিলমোহর দিয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গেই প্রাক্তন ক্রিকেট ক্যাপ্টেনকে ছোট্ট একটা টেক্সট— ‘সাক্ষাৎ চাই। আজই।’ একটা স্মাইলির সঙ্গে জবাব এল, ‘গাঁধী ভবন, অ্যাট থ্রি পিএম। আই রেকন।’

Advertisement

অন্য কাজ ফেলে, শহরের বাইরে থেকে গাড়িতে প্রায় ৫০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে যখন গাঁধী ভবন পৌঁছনো গেল, তত ক্ষণে চারটে বেজে গিয়েছে। সমবেত সাংবাদিক বৈঠক প্রায় শেষের মুখে। শেষ হতেই কাছে গিয়ে আলতো স্বরে জানান দেওয়া, এসে গিয়েছি। মুখটা বাড়িয়ে ফিসফিস করে বললেন, ‘১০ মিনিট। আমি আসছি।’

নতুন সভাপতির সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন প্রচুর মানুষ। রয়েছেন প্রাক্তন ক্রিকেটার নভজ্যোত সিংহ সিধুও। তিনি ভোটের প্রচারে তেলঙ্গানায় এসেছেন। গাঁধী ভবনের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে রয়েছি। মিনিট দশেকের মধ্যেই হাতে হ্যাঁচকা টান। দেখি ভিড়ের মিছিল তাঁকে তাড়া করেছে। সব ভিড় এড়িয়ে ভিন্‌ রাজ্যের সাংবাদিককে নিয়ে প্রায় দৌড়ে উঠে পড়লেন তাঁর এসইউভি-তে। দরজার বাইরে তখনও চিৎকার চেঁচামেচি, প্রশ্নের ছররা।

Advertisement

সামনের আসনে আজহারউদ্দিন। পিছনের আসন থেকে ভিডিয়ো সাক্ষাৎকারের অনুরোধ করা গেল। শুনে গাড়ি থামিয়ে সামনে থেকে চলে এলেন পিছনে। পাশে বসে হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, ‘‘ওয়েলকাম টু হায়দরাবাদ। বলিয়ে, ক্যায়া শুননা হ্যায়!’’ দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম সাক্ষাৎকার দিলেন আনন্দবাজার ডিজিটালকে।

আজহার ভাই, নতুন ইনিংসে আনন্দবাজার ডিজিটালের তরফে অনেক শুভেচ্ছা।
অনেক ধন্যবাদ।

আপনি ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ছিলেন। এ বার তেলঙ্গানা প্রদেশ কংগ্রেসের ক্যাপ্টেন হলেন। কেমন লাগছে?
ভীষণ ভাল লাগছে। কারণ, ১৮ বছর পর কোনও বড় একটা পদ পেলাম। কত পদে ছিলাম। ক্রিকেটে ক্যাপ্টেন ছিলাম। আরও কত কত কী... আমি রাহুল গাঁধী, সনিয়া গাঁধী এবং দলীয় নেতৃত্বকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, আমাকে এই দায়িত্ব দেওয়ার জন্য।

নরেন্দ্র মোদী কেমন সরকার চালাচ্ছেন?
যা যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কিছুই রূপায়িত হয়নি। নোটবন্দির ফলে দেশ প্রায় ২০-২৫ বছর পিছিয়ে গিয়েছে। জিএসটি-র ফলেও আমরা অনেকটা পিছিয়ে গেলাম। যে ক্ষতিটা হল, তার গোটাটাই গরিব মানুষের হয়েছে। আমি অনেক গ্রামে ঘুরি, প্রচুর মানুষ ব্যবসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন জানেন। ১৫ দিনের মধ্যে জিএসটি না দিলে অফিসাররা চলে আসেন। কেন দেওয়া হয়নি জিএসটি? প্রশ্ন করেন। হেনস্থা করেন। মানুষের হয়রানি বেড়েছে। মোদী সরকার একটা প্রতিশ্রুতিও পূরণ করতে পারেনি।

আপনার জীবনের দুটো অধ্যায়। একটা ভাল, একটা মন্দ। এখন নতুন ইনিংস শুরু করছেন। কেমন হবে? কী আশা?
ভালই হবে আশা করি। এগিয়ে চলার চেষ্টা করব। অনেক বেশি করে দলের জন্য কাজ করব। বেশি সময় দেব। আরও বেশি করে মানুষকে এই দলের সঙ্গে জুড়ব। দেখুন, আমাদের যখন সরকার আসবে, তখন উন্নয়ন হবেই। কারণ, কংগ্রেস একটা ধর্ম নিরপেক্ষ দল এবং তারা উন্নয়নে বিশ্বাস করে। যেখানে যা উন্নয়ন দেখছেন, সব কংগ্রেসের আমলেই হয়েছে। পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে শুরু করে যত বড় বড় কাজ হয়েছে, সব।

আর বিজেপি?
ওই দলটা তো কেবল মূর্তি বসিয়ে যাচ্ছে! ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা খরচ করে মূর্তি বানিয়ে কী হয়েছে বলুন তো! মানুষ খেতে পাচ্ছে না। খাবার নেই। জল নেই। হাসপাতাল নেই। ওরা এই সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার মূর্তি দিয়ে কী করবে? ৪০ বছর আগে মূর্তি বসালে ভাল লাগত। সেই জমানা চলে গিয়েছে। আজকের জমানা ও রকম নয়।

রাম মন্দির?
এ তো প্রতি বার ভোটের আগের এক গল্প। আমার মনে হয়, এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হওয়া উচিত। কোথাও একটা থামা প্রয়োজন। না হলে এ চলতেই থাকবে।

শুক্রবারই তেলঙ্গানা কংগ্রেসের দায়িত্ব হাতে পেলেন মহম্মদ আজহারউদ্দিন।—নিজস্ব চিত্র।

আগামী লোকসভা নির্বাচনে যদি আপনাকে হাইকম্যান্ড বলে, ভোটে দাঁড়াও, তা হলে কোন কেন্দ্রে লড়বেন?
আমি তো সেকন্দরাবাদেই দাঁড়াতে চাই। আমার ইচ্ছা ওটাই। কিন্তু দেখুন, দিনের শেষে তো দলই সিদ্ধান্ত নেবে। যদি আমি ক্যাপ্টেন হতাম তো, আপনাকে এখনই বলে দিতাম যে, আমি সেকন্দরাবাদ থেকেই লড়ছি। আমি তো ক্যাপ্টেন নই। আমার ক্যাপ্টেন দিল্লিতে। উনিই সিদ্ধান্ত নেবেন।

এখানে এসে শুনলাম, প্রচুর মুসলিম ভোট এমআইএম-এ চলে যেতে পারে। ওদের রাজনীতি করার ধরনে আপনি সহমত?
দেখুন, ওদের রাজনীতি কী, সেটা ওরাই ভাল জানে। আমি আমার দলকে আরও শক্তিশালী করতে চাই। অন্যরা কী করছে, তা দিয়ে আমার কিছু যায় আসে না। আমাদের দল শক্তিশালী হবে। আমাদের ক্যাডার ভাল হবে। মানুষকে বলব, আমাদের দল কী করতে চাইছে। ওটাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। মানুষকে এটা বলতে হবে, আমরা কী করতে চাইছি। আর সেই কাজের উপরেই জোর দেওয়া উচিত। যদি অন্যদের ব্যাপারে ভাবতে থাকি, তো খুব মুশকিল হয়ে যায়। আমাদের ফোকাস নড়ে যাবে তা হলে।

লোকসভা নির্বাচনে কলকাতা আসবেন, প্রচারে?
অবশ্যই আসব। কেন আসব না!

কলকাতা কেমন লাগে?
কলকাতা তো জবরদস্ত জায়গা। কলকাতার বিষয়ে আমার কাছে কোনও শব্দ নেই। আমি যত কলকাতা এবং সেখানকার লোকের প্রশংসা করি, ততই শব্দ কম পড়ে যায়। আমার কাছে সেই সব শব্দ নেই। আমি যখনই খেলেছি, তখনই আপনারা আমাকে এত প্রেম ও ভালবাসা আমাকে দিয়েছেন, অনেক সময় আমার কেরিয়ারও সেভ হয়েছে কলকাতায়। ’৯৩-তে এক বার যখন ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলছি, আমি যদি সেই সময় কলকাতায় ১৮২ না করতাম, হয়তো ওখানেই আমার কেরিয়ার শেষ হয়ে যেত।

আর ইডেন গার্ডেন্স?
ইডেন গার্ডেন্স তো আমার ফেভারিট গ্রাউন্ড।

তেলঙ্গানায় ফল কী হবে?
এখানে মহাজোটের সরকার হবে। ইনশা আল্লা।

আজহার ভাই আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আপনাকেও।

(দেশজোড়া ঘটনার বাছাই করা সেরা বাংলা খবর পেতে পড়ুন আমাদের দেশ বিভাগ।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন