আড়াই দশক পরে ফিরল ‘অয়েল পুল অ্যাকাউন্ট’

সংস্কার শুধু থমকে নেই, পিছনের দিকে হাঁটছে! রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি নিয়ে এ বার আড়াই দশক আগের নীতি ফিরিয়ে আনল নরেন্দ্র মোদী সরকার!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৫ ০৩:৪০
Share:

সংস্কার শুধু থমকে নেই, পিছনের দিকে হাঁটছে!

Advertisement

রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি নিয়ে এ বার আড়াই দশক আগের নীতি ফিরিয়ে আনল নরেন্দ্র মোদী সরকার! নরসিংহ রাওয়ের আর্থিক উদারীকরণের হাত ধরে বাজার অর্থনীতিতে বড় শক্তি হয়ে ওঠা ভারতে যে নীতি কার্যত ‘নিয়মের বিরুদ্ধে’ বলেই মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

পেট্রোল ও ডিজেলের দাম সরকারি নিয়ন্ত্রণমুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিশ্ব বাজারে তেলের দাম কমলেও এ দেশে তেলের দাম কমেনি। উল্টে কর বসিয়ে রাজকোষে টাকা তুলেছে মোদী সরকার। সে নিয়ে অভিযোগ ছিলই। এ বার রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি থেকে সাশ্রয় করেও রাজকোষে জমা করার নীতি ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তার জন্যই নতুন করে চালু করা হয়েছে আড়াই দশকের পুরনো ‘অয়েল পুল অ্যাকাউন্ট’। এই নীতি অনুযায়ী, তেল বিপণন সংস্থাগুলিকে রান্নার গ্যাসের পুরো ভর্তুকিই দিয়ে দেবে সরকার। কিন্তু অশোধিত তেলের দাম কমে যাওয়ায় এখন আর পুরো ভর্তুকির দরকার নেই সংস্থাগুলির। তাই যে অর্থ বেঁচে যাবে, তা জমা পড়বে ওই অ্যাকাউন্টে। অর্থ মন্ত্রকের এক সূত্রের হিসেবে, চলতি অর্থ বছরে ইতিমধ্যেই ওই অ্যাকাউন্টে ২,৮৫৬ কোটি টাকা জমা পড়েছে।

Advertisement

বিশ্ব বাজারে জ্বালানির দামের সঙ্গে দেশের বাজারে দামের ফারাক বা ‘আন্ডার-রিকভারি’ ভর্তুকি হিসেবে ইন্ডিয়ান ওয়েল, এইচপিসিএল, বিপিসিএল-এর মতো রাষ্ট্রায়ত্ত তেল বিপণন সংস্থাগুলিকে মিটিয়ে দেয় কেন্দ্র। সেই হিসেবে এখন সিলিন্ডার বাবদ ২৫৫ টাকা দেওয়া হয়। অর্থাৎ প্রতি কেজি রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি দেওয়া হয় ১৮ টাকা। কিন্তু অশোধিত তেলের দাম কমে যাওয়ায় এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরে ৯ থেকে ১৪ টাকার বেশি ভর্তুকি প্রয়োজন পড়ছে না। বাকি টাকা জমা পড়ছে ওই অ্যাকাউন্টে।

এত দিন ওই অ্যাকাউন্টে কি টাকা জমা পড়ত না? সরকারি সূত্রের বক্তব্য, এত দিন অশোধিত তেলের দাম এতটাই বেশি ছিল যে, সরকারের দেওয়া পুরো ভর্তুকিই তুলে নিত তেল সংস্থাগুলি। বরং সরকারের পাশাপাশি ওএনজিসি, অয়েল ইন্ডিয়া-র মতো তেল উৎপাদন সংস্থাগুলিকে আরও ভর্তুকি দিতে হত।

তা হলে এই অ্যাকাউন্টের প্রয়োজন পড়েছিল কেন? তেল মন্ত্রকের বক্তব্য, ১৯৮৬-তে অশোধিত তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ১৬ ডলারে নেমে যায়। তবে সরকার এ দেশে জ্বালানির দাম কমায়নি। কিন্তু ভর্তুকির সাশ্রয় জমা পড়েছিল ওই অয়েল পুল অ্যাকাউন্টে। যাতে পরে আবার তেলের দাম মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়ে গেলে ওই অর্থ দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়। ১৯৯১-এ নরসিংহ রাও ক্ষমতায় আসার ঠিক আগে তেলের দাম চড়তে শুরু করলে ওই অ্যাকাউন্টের অর্থ দিয়েই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়।

এখনও ঠিক তা-ই হচ্ছে। এখন যে ভর্তুকির সাশ্রয় হচ্ছে, তা দিয়ে পরে বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম বাড়লে ক্ষতির অঙ্ক পূরণ করা যাবে। কিন্তু সে তো পরের কথা।
অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, বিলগ্নিকরণ থেকে প্রত্যাশিত আয় না হলেও রাজকোষ ঘাটতি ৩.৯ শতাংশে বেঁধে রাখার ব্যাপারে কিছুটা আত্মবিশ্বাসী কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। সে কারণেই তিনি এই ধরনের একটি নতুন নীতি নেওয়ার বিলাসিতা দেখাতে পেরেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন