বক্তৃতার ব্যাটিং গড়ে সকলকে পিছনে ফেলে দিয়েছেন মোদী

প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর কোনও সাংবাদিক বৈঠক করেননি মোদী। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরও দেননি। কিন্তু একমুখী বক্তৃতা এবং রেডিওর ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে শুনিয়ে গিয়েছেন তাঁর ভবিষ্যৎ প্রকল্প, স্বপ্ন, কর্মপন্থা এবং পরিকল্পনার কথা।

Advertisement

অগ্নি রায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৭ ০৪:৩৬
Share:

নরেন্দ্র মোদী

গাঁধীনগর হোক বা ভারোচ, কিংবা রাজকোট। গুজরাতে ভোটের মুখে যখন যেখানে সভা করতে যাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী, মঞ্চ সাজানো হচ্ছে মহাভারতের সেট-এর কায়দায়। অমাত্য, মন্ত্রী, পারিষদ এক দিকে। অন্য দিকে গৈরিক সাধু, সন্ত, আচার্য। পুষ্পবৃষ্টি এবং সুগম্ভীর নমো-নমো মন্ত্রোচ্চারণের মধ্যে শুরু হচ্ছে বক্তৃতা। দীর্ঘ এবং অলঙ্কারময়। এক মঞ্চে শেষ হলে অন্য মঞ্চ। কয়েক দিনের ব্যবধানেই আবার তৈরি হচ্ছে মঞ্চ এবং আবারও দীর্ঘ বক্তৃতা।

Advertisement

রাজ্যে চরকির মতো ঘুরে ঘুরে সভা করে যাচ্ছেন মোদী। রাজনীতির লোকজন বলছেন, ভোটের মুখে দলের তারকা প্রচারক তো অজস্র সভা করবেনই। বিশেষ করে গুজরাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ ভোটে, যা কিনা মোদীর নিজের রাজ্যও বটে। কিন্তু এরই সঙ্গে কিছু মুখরোচক গুঞ্জনও উঠছে রাজধানীর অলিন্দে। যেমন, মোদী এখন রাজনীতির বিরাট কোহলি! বক্তৃতার গড়ে বাকি সকলকে পিছনে ফেলে দিয়েছেন। তাঁর বক্তৃতা-সংখ্যার কাছে ফিকে দেখাচ্ছে তাঁর পূর্বসূরি মনমোহন সিংহকেও!

আরও পড়ুন: খাদ্য উৎসবে ‘জাতীয় খাবার’-এর মর্যাদা পেতে চলেছে খিচুড়ি!

Advertisement

মোদীর নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকে যে সংখ্যাটা পাওয়া যাচ্ছে, সেই অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে ৪১ মাসে তিনি দিয়েছেন ৭৭৫টি বক্তৃতা! ২০১৪ সালের ২৬ মে শপথ নেওয়ার পর থেকে তাঁর বক্তৃতার গড় প্রতি মাসে ১৯টি। অর্থাৎ অঙ্কের হিসেবে প্রতি তিন দিনে ২টি করে বক্তৃতা গিয়েছেন তিনি। প্রতিটি বক্তৃতার গড় সময় ৩০ মিনিট।

প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর কোনও সাংবাদিক বৈঠক করেননি মোদী। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরও দেননি। কিন্তু একমুখী বক্তৃতা এবং রেডিওর ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে শুনিয়ে গিয়েছেন তাঁর ভবিষ্যৎ প্রকল্প, স্বপ্ন, কর্মপন্থা এবং পরিকল্পনার কথা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহের মতে, ‘‘ওঁনার বাগ্মিতা ঈশ্বরদত্ত। যে কোনও বিষয় আত্মস্থ করে নিজের মন থেকে বলতে পারেন।’’

বটেই তো! কারণ তাঁর রেকর্ডের পাশাপাশি যদি রাখা যায় মনমোহন সিংহকে? ইউপিএ-র দুই ইনিংস মিলিয়ে ১০ বছরে তিনি দিয়েছেন মোট ১ হাজার ৪০১টি বক্তৃতা। মাত্র তিন বছরেই যার অর্ধেক পেরিয়ে গিয়েছেন মোদী। কং‌গ্রেসের মুখপাত্র মনীশ তিওয়ারি এই বাগ্মিতা নিয়ে মোটেই উৎসাহী নন। জানিয়েছেন, ‘‘মোদী এমন এক দুনিয়ায় বাস করেন যেখানের প্রধান মন্ত্র হল, আমি যা বলি সেটাই আমার প্রশাসন! ফলে এটা আশ্চর্যের কিছু নয় যে, সরকারের আসল কাজকর্ম হারিয়ে যাচ্ছে তাঁর কথার বোঝায়।’’

বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, মোদী সবচেয়ে বেশি মুখর ছিলেন ২০১৫ সালে। দিয়েছেন মোট ২৬৪টি বক্তৃতা। ওই বছরেই সবচেয়ে বেশি বিদেশ সফর করেছেন তিনি। আন্তর্জাতিক মঞ্চে দাঁড়িয়ে প্রবাসী, অনাবাসী ভারতীয়দের উদ্দেশে একের পর এক বক্তৃতা দিয়েছেন বিভিন্ন রাষ্ট্রে। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ভারতের সেতু হিসেবে অনাবাসীদের কাজে লাগাতে চান, বারবার বলেছেন এ কথা। বিরোধী দলগুলি অবশ্য মনে করে রাজনৈতিক অভিসন্ধি রয়েছে এর মধ্যে। কংগ্রেসের এক নেতার বক্তব্য, সংবিধান সংশোধন করে অনাবাসী অনলাইন ভোটব্যাঙ্ক তৈরি করার এ এক কৌশলমাত্র।

এ সব রাজনীতির তর্ক। মোদী কিন্তু বলেই চলেছেন, এক বিষয় থেকে অন্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন