রাম রহিম সিংহকে ‘প্রণাম’ জানিয়েছিলেন মোদীও!

প্রধানমন্ত্রীর ‘মনের কথা’ বুঝে বিজেপির তাবড় তাবড় নেতারাও তার পর ছুটে যান রাম রহিমের ডেরাতে। কারণ, রাম রহিম শুধু একজন ধর্মগুরু নন, তাঁর বিশাল ভক্তকুল বিজেপির যে একটি বড় ভোটব্যাঙ্ক হতে পারে, সেটিও বুঝেছিলেন তাঁরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৭ ০৩:২৪
Share:

জ্বলছে সংবাদমাধ্যমের গাড়ি। শুক্রবার পঞ্চকুলায়। ছবি: পিটিআই।

তখন সবে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। ডাক দিয়েছেন স্বচ্ছ ভারতের। সেই ডাকে সাড়া দিতেই প্রকাশ্যে ডেরা সচ্চা সওদার গুরমিত রাম রহিম সিংহকে ‘প্রণাম’ জানালেন তিনি।

Advertisement

প্রধানমন্ত্রীর ‘মনের কথা’ বুঝে বিজেপির তাবড় তাবড় নেতারাও তার পর ছুটে যান রাম রহিমের ডেরাতে। কারণ, রাম রহিম শুধু একজন ধর্মগুরু নন, তাঁর বিশাল ভক্তকুল বিজেপির যে একটি বড় ভোটব্যাঙ্ক হতে পারে, সেটিও বুঝেছিলেন তাঁরা।

ফল হলো হাতেনাতে। ২০১৪-র অক্টোবরে হরিয়ানার বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের বদলে বিজেপি-কে সমর্থন করার কথা ঘোষণা করলেন রাম রহিম। রাজ্যে প্রথম বার ক্ষমতায় এলো বিজেপি।

Advertisement

আজ সেই রাম রহিমের সাজা ও তার জেরে সচ্চা সওদার সমর্থকদের তাণ্ডব এবং ৩০ জনের প্রাণহানির পরে কাঠগড়ায় বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর। অভিযোগ, পরিস্থিতি সামালাতে চূড়ান্ত ব্যর্থ তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকায় তিনি যে খুশি নন, তা ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছেন মোদীও। টুইট করে জানিয়েছেন, পরিস্থিতি নিয়ে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং স্বরাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। অফিসারদের নির্দেশ দিয়েছেন ২৪ ঘণ্টা নিরলস কাজ করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে। আগামিকাল সকাল এগারোটায় নর্থ ব্লকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের শীর্ষ কর্তাদের বৈঠক ডাকা হয়েছে। সূত্রের খবর, খট্টরকে ঘটনাস্থলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মোদী। মুখ্যমন্ত্রী খুব একটা ইচ্ছুক ছিলেন না। তাঁকে সরানোর জন্য চাপও বাড়ছে বিজেপির অন্দরে।

অবস্থা বুঝে আসরে বিরোধীরাও। কংগ্রেস সহ সভাপতি রাহুল গাঁধী ‘হরিয়ানার আইনশৃঙ্খলাহীনতা’ নিয়ে কটাক্ষ করেছেন। শান্তি বজায়ের আবেদন জানিয়েছেন সনিয়া।

বিরোধীদের অভিযোগ, পরিস্থিতি যে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠতে পারে, সেটা তো বোঝাই যাচ্ছিল। তা হলে আগে থেকেই কেন ব্যবস্থা নিল না সরকার! কেন ১৪৪ ধারা জারি থাকা সত্ত্বেও ২০০ গাড়ির কনভয় নিয়ে হরিয়ানার সিরসা থেকে পঞ্চকুলার আদালত পর্যন্ত আসতে দেওয়া হলো রাম রহিমকে? কেন জড়ো হতে দেওয়া হলো তাঁর ভক্তকুলকে?

অনেকের মতে, এ সবই ভোটের টানে। বছর দুয়েকের মাথায় ফের হরিয়ানায় ভোট। তার আগে লোকসভা নির্বাচন। তারও আগে হিমাচল, রাজস্থানে ভোট। সর্বত্রই রাম রহিমের দলিত ভক্তদের সমর্থনের দিকে তাকিয়ে বিজেপি।

এই জল্পনার সমর্থন মিলল আজ দিনভর নয়াদিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরের ছবি দেখে। সেখানে কান পাততেই শোনা গেল, সিবিআই আদালত দোষী সাব্যস্ত করলেও কী করে রাম রহিমের দ্রুত জামিনের ব্যবস্থা করা যায়, তা নিয়ে দিল্লিতে তাবড় আইনজীবীদের সঙ্গে কথা সেরে রেখেছে বিজেপি। তাঁর ভক্তরা যাতে বিজেপির থেকে মুখ ঘুরিয়ে না নেন, সে জন্য কঠোর পদক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকা হয়েছে।

এ তো পর্দার আড়ালের ঘটনা। রাতে একেবারে হাটে হাঁড়ি ভেঙেছেন উত্তরপ্রদেশের উন্নাওয়ের বিজেপি সাংসদ সাক্ষী মহারাজ। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘কে ঠিক, কোটি কোটি মানুষ যাঁকে ভগবান বলে মনে করেন সেই রাম রহিম? না, তাঁর মতো মহান আত্মার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা সেই মেয়েটি?’’

সাক্ষী মহারাজের এই বক্তব্যের পাশে দাঁড়াচ্ছে না বিজেপি। আবার সচ্চা সওদার উপর খড়্গহস্তও হতে পারছে না। কেন পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে গেল, দিল্লির নেতাদের কাছে তার ব্যাখ্যা দিয়ে খট্টর বলেছেন, অনেক লোককে আটকানো হলেও বহু লোক আগে থেকেই পরিচয় গোপন করে অস্ত্র হাতে শহরে ছিল। কিন্তু আগে থেকে ব্যবস্থা নিলে পরিস্থিতি আরও শোচনীয় হতে পারত। তা ছাড়া, সিরসা-পঞ্চকুলার রাস্তা তিন দিন ধরে বন্ধ করে দেওয়া সম্ভব ছিল না। খট্টরের দাবি, আধাসেনার গুলিতেই এত লোক মারা গিয়েছেন। তবে সবটাই আধ বেলার ঘটনা। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।

খট্টরের যুক্তি উড়িয়ে বিরোধীরা পাল্টা বলছেন, পঞ্চকুলায় জড়ো হওয়া রাম রহিমের ভক্তদের নিয়ন্ত্রণ করা তো দূরস্থান, উল্টে গত কাল রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী রামবিলাস শর্মা বলেন, ‘‘ওই ভক্তরা সাধারণ, শান্তিপ্রিয় নাগরিক। ওরা পঞ্চকুলায় এসেছে ঠিকই, কিন্তু এখনও একটা গাছের গায়েও হাত দেয়নি।’’ বিরোধীদের অভিযোগ, এর থেকেই স্পষ্ট যে, ভোটের ভাবনায় কড়া হাতে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ইচ্ছাই ছিল না খট্টর সরকারের। ফলে যা হওয়ার তাই-ই হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন