ফের হামলা ভূস্বর্গে, তবু তিনি ৫৬ ইঞ্চি

জঙ্গিদের হানাদারি চলছেই। সেনাবাহিনীর সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নিয়ে বিজেপির বুক ঠোকাও সমানে চলেছে। আজ তো খোদ প্রধানমন্ত্রীই মুখ খুললেন নিজেকে বাহবা দিতে! যদিও এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সন্ধেতেই খবর আসে, জঙ্গিরা ফের হামলা চালিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি ও শ্রীনগর শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:১৬
Share:

ভোপালে মোদী। ছবি: পিটিআই।

জঙ্গিদের হানাদারি চলছেই। সেনাবাহিনীর সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নিয়ে বিজেপির বুক ঠোকাও সমানে চলেছে। আজ তো খোদ প্রধানমন্ত্রীই মুখ খুললেন নিজেকে বাহবা দিতে! যদিও এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সন্ধেতেই খবর আসে, জঙ্গিরা ফের হামলা চালিয়েছে। এবং এ বার তা হয়েছে খাস শ্রীনগরে। সশস্ত্র সীমা বল (এসএসবি)-র এক জওয়ানকে হত্যা ও ৮ জওয়ানকে জখম করে উধাও হয়েছে জঙ্গিরা।

Advertisement

উরির সেনা শিবিরে পাক জঙ্গিদের হামলার পরে বিরোধীরা বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ৫৬ ইঞ্চি বুকের ছাতি নাকি ২৬ ইঞ্চি হয়ে গিয়েছে। আর নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে ভারতীয় সেনার সার্জিক্যাল স্ট্রাইক-এর পনেরো দিন পরে বুক ঠুকে মোদী বোঝালেন ৫৬ ইঞ্চিই রয়েছে তাঁর বুকের ছাতি। উরি হামলার পর সমালোচনার বোঝা যেমন নিয়েছেন। সেনা অভিযানের সিদ্ধান্ত নিয়ে কৃতিত্বও তাঁরই প্রাপ্য।

ভোপালে শৌর্য স্মারক উদ্বোধনে গিয়ে মোদী আজ বলেন, ‘‘সেই সব দিন (উরি ঘটনার পর) আমার চুল ছেঁড়া হতো। বলা হতো, মোদী শুয়ে আছে। মোদী কিছু করছে না। আমি আগেই বলেছি, সেনা বলে না, পরাক্রম দেখায়। আমাদের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীও সে রকম…।’’ এই কথা বলে সহাস্য মোদীর নীরবতায় ফেটে পড়ে জনতা। ‘মোদী-মোদী’ আর ‘ভারত মাতা কি জয়’ ধ্বনিতে মেতে ওঠে প্রাক্তন ফৌজি ও জনতার ঢল। দেশ জুড়ে সেনা-ভক্তি জাগাতে পথেঘাটে জওয়ানদের দেখলেই হাততালি দিয়ে তাদের কুর্নিশ জানানোর দাওয়াই দেন প্রধানমন্ত্রী।

Advertisement

এক ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-কে সামনে রেখে মোদীর এই মাতামাতিতে তিতিবিরক্ত বিরোধীরা। আজ দুপুরে মোদী এ ভাবে কৃতিত্ব জাহিরের পরপরই শ্রীনগরে ফের হামলা হওয়ায় বিরোধীরা আরও চড়া সুরে বলছেন, ভোটে ফায়দা তুলতে মোদী সরকার সেই এক সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নিয়ে ঢাক পিটিয়ে চলেছে। অতীতের সার্জিক্যাল স্ট্রাইক-এর কথা অস্বীকার করে খাটো করছে সেনার অতীত গৌরবকে।

সেনা আজ ২৯ সেপ্টেম্বরের ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ নিয়ে সাংসদদের অবগত করিয়েছে, কিন্তু কোনও প্রশ্ন নেয়নি সাংসদদের থেকে। ফলে কংগ্রেস অতীতের সেনা অভিযান নিয়ে সরকারকে চেপে ধরার সুযোগই পায়নি সেখানে। কংগ্রেসের মুখপাত্র শোভা ওঝা পরে সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘‘সেনা অভিযানের আড়ালে সরকারের যাবতীয় ব্যর্থতা লুকনোর চেষ্টা করছেন প্রধানমন্ত্রী। মূল্যবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান না হওয়া, অর্থনীতির বেহাল দশা, কৃষকদের দুর্দশা— সবই প্রধানমন্ত্রী ঢাকতে চাইছেন দেশের নিরাপত্তা নিয়ে ছিনিমিনি খেলে।’’

বিরোধীদের একাংশ এ ব্যাপারেও সরকারকে সতর্ক করে দিচ্ছেন যে একটা সার্জিক্যাল স্ট্রাইক— এই পাক সন্ত্রাসের ছবিটা বদলে দিতে পারবে না। ওই অভিযানের আগে-পরে মিলিয়ে গত ২৭ দিনে অন্তত ছ’টি বড় জঙ্গি হামলা হয়েছে জম্মু-কাশ্মীরে। পাম্পোরে জঙ্গি দমন অভিযান শেষ হতেই গোয়েন্দারা হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, পরের নিশানা হতে পারে শ্রীনগর। জঙ্গিদের একটি বড় দল সেখানে ঢুকেছে। গত কাল শ্রীনগরের লাল চক ঘিরে ফেলে তল্লাশি চালায় বাহিনী। তবু ঠেকানো যায়নি হানা।

পুলিশ জানিয়েছে, আজ শ্রীনগরের অন্য প্রান্তে আইনশৃঙ্খলা সামলানোর দায়িত্ব সেরে নিজেদের শিবিরে ফিরছিলেন এসএসবি ও জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের কয়েক জন জওয়ান। জাকুরা শিল্পতালুক এলাকায় তাঁদের গাড়ি লক্ষ করে হঠাৎ গুলি চালাতে শুরু করে জঙ্গিরা। পাল্টা গুলি চালান জওয়ানরা। কিছু ক্ষণ গুলির লড়াইয়ের পরে জঙ্গিরা গা ঢাকা দেয়।

সংঘর্ষে আহত ৯ জন জওয়ানকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে সেখানে মারা যান এসএসবি জওয়ান ঘনশ্যাম। হামলার পর থেকে শ্রীনগরে ঢোকা-বেরোনোর সব পথ বন্ধ। জারি রয়েছে চূড়ান্ত সতর্কতা। পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনাস্থল থেকে ৩০০ গজ দূরে সিআরপিএফের জাকুরা শিবির। গোয়েন্দাদের ধারণা, জঙ্গিরা সেখানেই হামলা করতে চেয়েছিল। সেখানে যাওয়ার পথে হঠাৎ এসএসবি-র গাড়িটি তাদের সামনে এসে পড়ে।

রাতে জঙ্গি সংগঠন আল-উমর-মুজাহিদিন দাবি করেছে, তারা এই হামলা চালিয়েছে। কন্দহর-কাণ্ডে মাসুদ আজহারের সঙ্গে ছাড়া পাওয়া মুস্তাক আহমেদ জারগার এই সংগঠনটির নেতা। পাকিস্তান বলছে, জঙ্গি হানা নিয়ে ভুয়ো প্রচার চালাচ্ছে ভারত। এ-ও তেমনই। গোয়ায় ব্রিকস সম্মেলন শুরু হচ্ছে কাল। সেখানে চিনের কাছে পাক সন্ত্রাসের প্রসঙ্গ তুলবে ভারত। কারণ, তারাই রাষ্ট্রপুঞ্জে জইশ-ই-মহম্মদ প্রধান মাসুদকে নিষিদ্ধ করার পথে কাঁটা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন