Nirbhaya Case

আদালতে আরও এক, ফের কি পিছোবে ফাঁসি?

আইনের সব রাস্তা বন্ধ হওয়ার পরে নির্ভয়া-কাণ্ডের অপরাধী মুকেশ সিংহের প্রাণভিক্ষার আর্জিও রাষ্ট্রপতি খারিজ করে দেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২০ ০৩:২৯
Share:

নির্ভয়ার চার দণ্ডিত। —ফাইল চিত্র।

নির্ভয়া কাণ্ডে ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত এক অপরাধীর সামনে ফাঁসি এড়ানোর সব রাস্তাই বন্ধ হয়ে গেল। আর এক অপরাধী ফাঁসি এড়াতে আরও এক বার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হল। ফলে চার অপরাধীর ১ ফেব্রুয়ারি ফাঁসি হওয়ার সম্ভাবনা আরও কমল।

Advertisement

আইনের সব রাস্তা বন্ধ হওয়ার পরে নির্ভয়া-কাণ্ডের অপরাধী মুকেশ সিংহের প্রাণভিক্ষার আর্জিও রাষ্ট্রপতি খারিজ করে দেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতির সেই ‘তড়িঘড়ি সিদ্ধান্তে’র বিরুদ্ধেই সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছিল মুকেশ। আজ সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি আর ভানুমতীর বেঞ্চ তা-ও খারিজ করে দিয়েছে। শীর্ষ আদালতের যুক্তি, রাষ্ট্রপতি মুকেশের আর্জি ‘দ্রুত বিবেচনা’ করেছেন বা ‘তড়িঘড়ি খারিজ’ করে দিয়েছেন বলেই এ কথা বলা যায় না, তিনি সব দিক খতিয়ে দেখেননি। কিংবা আগেভাগেই মনস্থির করে বসেছিলেন।

মুকেশের সামনে আর কোনও পথ খোলা রইল না। কিন্তু মুকেশের সঙ্গী, ফাঁসির আর এক সাজাপ্রাপ্ত অক্ষয়কুমার সিংহ সুপ্রিম কোর্টে ফাঁসির সাজা সংশোধনের আর্জি বা কিউরেটিভ পিটিশন করেছে। বৃহস্পতিবার বিচারপতি এন ভি রমন্নার নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে তার শুনানি হবে। কিউরেটিভ পিটিশন খারিজ হলেও অক্ষয় প্রাণভিক্ষার আবেদন জানানোর জন্য ৭ দিন সময় পাবে। সেই আবেদনও খারিজ হলে তার ১৪ দিনের মধ্যে তাকে ফাঁসি দেওয়া যাবে না।

Advertisement

আরও পড়ুন: ‘দেশ-বিরোধী’ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ নয়, পড়ুয়াদের ফরমান আইআইটি বম্বের

সেই কারণেই খাতায়-কলমে এখনও চার জনের ফাঁসি ১ ফেব্রুয়ারি ভোর ৬টায় বহাল থাকলেও, ওই দিন ফাঁসি হওয়া কার্যত অসম্ভব বলে মনে করছেন আইনজীবীরা। আর এক অপরাধী পবন গুপ্ত এখনও কিউরেটিভ পিটিশন দাখিল করেনি। বিনয় শর্মার প্রাণভিক্ষার আবেদন জানানো বাকি রয়েছে। নির্ভয়ার পরিবারের আইনজীবী সীমা কুশওয়াহা বলেন, ‘‘ফাঁসি হবেই। তবে কিছু দিন পিছিয়ে যেতে পারে, এই যা।’’ আজকের রায় শুনতে সুপ্রিম কোর্টে হাজির নির্ভয়ার বাবা বদ্রীনাথ সিংহ বলেন, ‘‘অপরাধীরা আইনের ফাঁকগুলিকে কাজে লাগাচ্ছে।’’

আসামিদের অবস্থা

মুকেশ সিংহ
• রিভিউ পিটিশন, কিউরেটিভ পিটিশন, প্রাণভিক্ষার আর্জি খারিজ। প্রাণভিক্ষার আর্জি খারিজের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলাও বুধবার খারিজ হয়েছে। কার্যত আর কোনও রাস্তা খোলা নেই।

অক্ষয়কুমার সিংহ
• রিভিউ পিটিশন খারিজ। কিউরেটিভ পিটিশন জমা পড়েছে। বৃহস্পতিবার শুনানি। এর পরে প্রাণভিক্ষার আর্জির সুযোগ রয়েছে।

পবন গুপ্ত
• রিভিউ পিটিশন খারিজ। এখনও কিউরেটিভ পিটিশন দাখিল করেনি। তা খারিজ হলে প্রাণভিক্ষার আর্জির সুযোগ রয়েছে।

বিনয় শর্মা
• রিভিউ ও কিউরেটিভ পিটিশন খারিজ। তার নামে প্রাণভিক্ষার আর্জি জমা পড়েছে। কিন্তু সেই আর্জি তার নয় বলে বিনয় রাষ্ট্রপতিকে চিঠি লিখেছে।
১ ফেব্রুয়ারি কি শুধু মুকেশের ফাঁসি হতে পারে?
• একই অপরাধে একাধিক ব্যক্তির ফাঁসির সাজা হলে একসঙ্গে সকলের ফাঁসি হয়।

অপরাধীদের আইনজীবী এ পি সিংহের পাল্টা যুক্তি, ‘‘আইনে যে সমস্ত পথ রয়েছে, তা সমস্ত খতিয়ে দেখা হবে। সংবাদমাধ্যমে, জনগণের সামনে বিচার চালানোর চেষ্টা হচ্ছে। রাষ্ট্রপতির সামনে কত প্রাণভিক্ষার আবেদন পড়ে রয়েছে। তিনি শুধুমাত্র একটি তুলে নিয়ে এক দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।’’

ফাঁসির পথ

• সাজা ঘোষণার এক মাসের মধ্যে রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি বা রিভিউ পিটিশন।
• রিভিউ পিটিশন খারিজ হলে রায় সংশোধনের আর্জি বা কিউরেটিভ পিটিশন। কোনও সময়সীমা নেই।
• কিউরেটিভ পিটিশন খারিজ হলে রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপালের কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন বা মার্সি পিটিশন। কিউরেটিভ পিটিশন খারিজের এক সপ্তাহের মধ্যে মার্সি পিটিশন করা হলে জেল কর্তৃপক্ষ ফাঁসির পরোয়ানা স্থগিত রাখে। এক সপ্তাহ পার করে আবেদন করলে ফাঁসি পিছিয়ে দেওয়া হবে কি না, রাজ্য প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেয়।
• প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজের খবর পৌঁছনো ও ফাঁসির মধ্যে ১৪ দিনের ব্যবধান থাকতে হয়।

কোথায় সমস্যা?
• ফাঁসির পরোয়ানা জারি হলে সাধারণত শেষবেলায় কিউরেটিভ বা মার্সি পিটিশন করা হয়।
• গত সপ্তাহেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সুপ্রিম কোর্টে দাবি করেছে, সাত দিনের মধ্যে কিউরেটিভ পিটিশন দাখিলের সময়সীমা স্থির হোক। সেটা খারিজ হলে, মৃত্যু পরোয়ানা জারির সাত দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আর্জি জানানোর সময় বেঁধে দেওয়া হোক। রাজ্য সরকার ও আদালতগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হোক, প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজের সাত দিনের মধ্যে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করতে হবে। সাত দিনের মধ্যে ফাঁসি দিয়ে দিতে হবে।

মুকেশ সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ জানিয়েছিল, জেলে তার উপরে অত্যাচার হয়েছে। তার আর্জি খারিজ করে কোর্ট বলেছে, জেলে অত্যাচারের যুক্তি দেখিয়ে রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত নিয়ে আদালতের বিচার চাওয়া যায় না। রাষ্ট্রপতিকে যখন প্রাণভিক্ষার আবেদন মঞ্জুর করা বা খারিজ করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, তখন ধরে নিতে হবে, তিনি নিরপেক্ষ ভাবে সব দিক খতিয়ে দেখেই সিদ্ধান্ত নেবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন