ভূস্বর্গে নিরাপত্তা বাহিনীর তৎপরতা অনেক বেশি এখন। তবু রোখা যাচ্ছে না সন্ত্রাসবাদীদের দাপাদাপি। —প্রতীকী ছবি।
এক বছর আগে নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে অভিযান হয়েছিল জঙ্গি ঘাঁটিতে। ভারতে একের পর এক নাশকতার জবাব দিতেই ভারতীয় বাহিনীর এই সার্জিক্যাল স্ট্রাইক। জানিয়েছিল নয়াদিল্লি। কিন্তু পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ঢুকে একাধিক জঙ্গি ঘাঁটি ভেঙে দিয়ে আসার পরেও সন্ত্রাসে লাগাম পরানো যায়নি। বলছে পরিসংখ্যান। জম্মু-কাশ্মীরে গত এক বছরে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের জেরে মৃত্যুর সংখ্যা কত— হিসেব তুলে ধরেছে ইন্ডিয়াস্পেন্ড। সেই হিসেব বলছে, ভূস্বর্গে গত এক বছরে জঙ্গি কার্যকলাপে মৃতের সংখ্যা ৩১ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে।
সাউথ এশিয়া টেররিজম পোর্টাল বা এসএটিপি-র দেওয়া পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে ইন্ডিয়াস্পেন্ড। সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের জেরে মৃত্যুর যে সব খবর মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়, তার ভিত্তিতেই এসএটিপি নিজেদের পরিসংখ্যান তৈরি করে। সেই পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৫-১৬ সালে জম্মু-কাশ্মীরে যে সংখ্যক সন্ত্রাসবাদীর মৃত্যু হয়েছিল, ২০১৬-১৭ সালে তা ২৪ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। গত বছর মৃত্যু হয়েছিল ১৫৭ জঙ্গির। আর সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পরবর্তী এক বছরে মৃত্যু হয়েছে ১৯৪ জঙ্গির।
নিরাপত্তা বাহিনীর ক্ষয়ক্ষতিও কিন্তু এ বছর সামান্য কম। সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের আগের বছরে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের জেরে জম্মু-কাশ্মীরে ভারতীয় বাহিনীর ৭৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল। আর ২০১৬-১৭ সালে মৃত্যু হয়েছে ৭৭ জনের। অর্থাৎ ২.৫ শতাংশের মতো কমেছে বাহিনীর ক্ষয়ক্ষতি।
আরও পড়ুন: আইএসআই-এর জঙ্গি যোগ খুব স্পষ্ট: কড়া বয়ান দিল আমেরিকা
এই দুই সূচক বলছে, মৃত্যুর সংখ্যা বাড়লেও, সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পর থেকে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর সাফল্য বেড়েছে। এই ব্যাখ্যা সরকারকে স্বস্তি দিতেই পারে। কিন্তু ইন্ডিয়াস্পেন্ডের তুলে ধরা পুরো হিসেবটা সামনে এলে সরকারের স্বস্তি উবে যেতে বাধ্য। কারণ জঙ্গিদের মৃত্যুর সংখ্যা যেখানে ২৪ শতাংশ বেড়েছে গত এক বছরে, সেখানে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের জেরে সাধারণ মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা ৪০০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। ২০১৫-১৬ সালে জম্মু-কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের জেরে ১০ জন সাধারণ নাগরিকের মৃত্যু হয়েছিল। ২০১৬-১৭ সালে মৃত্যু হয়েছে ৫২ জনের। এই হিসেব চলতি বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর তারিখ পর্যন্ত সময়ের।
আরও পড়ুন: কাশ্মীরে বিএসএফ ঘাঁটিতে জঙ্গি হানা, নিহত জওয়ান
‘‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইকটা ছিল একটা বার্তা, যেটা আমরা ওদের বোঝাতে চেয়েছিলাম এবং ওরা বুঝেছে আমরা কী বলতে চেয়েছি।’’ চলতি বছরের সেপ্টেম্বরেই একটি ইংরেজি সংবাদপত্রকে এ কথা বলেছেন ভারতের সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াত। পাক অধিকৃত কাশ্মীর থেকেই জঙ্গিরা ভারতে ঢোকে এবং নাশকতা চালায়, ভারত এই নাশকতা সহ্য করবে না, প্রয়োজনে আবার পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ঢুকে জঙ্গি ঘাঁটি ভেঙে দিয়ে আসা হবে— এই বার্তাই পাকিস্তানকে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের মাধ্যমে। জেনারেল বিপিন রাওয়াতের ইঙ্গিত তেমনই। পাকিস্তান সেই বার্তা স্পষ্ট ভাবে বুঝে নিয়েছে বলেও সম্ভবত ইঙ্গিত দিতে চেয়েছেন ভারতের সেনাপ্রধান। তাই যদি হবে, তা হলে গত এক বছরে জঙ্গি কার্যকলাপে সাধারণ নাগরিকের মৃত্যুর সংখ্যা এত বাড়ল কেন জম্মু-কাশ্মীরে? প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহল থেকে।