(বাঁ দিক থেকে) ডোনাল্ড ট্রাম্প, নরেন্দ্র মোদী এবং ভ্লাদিমির পুতিন। — ফাইল চিত্র।
আমেরিকার চোখরাঙানিকে উপেক্ষা করেই রাশিয়া থেকে তেল আমদানি অব্যাহত রেখেছে ভারত। এই আবহে ভারতের অন্যতম রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা অয়েল অ্যান্ড ন্যাচারাল গ্যাস কর্পোরেশন (ওএনজিসি) জানাল, যত দিন লাভজনক থাকবে, তত দিন রাশিয়া থেকে অশোধিত তেল কেনা এবং তা পরিশোধন করার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। শুক্রবার ওএনজিসি-র চেয়ারম্যান অরুণকুমার সিংহ জানান, রাশিয়া থেকে তেল আমদানির বিষয়ে সরকারের তরফে কোনও চাপ নেই।
ওএনজিসি-র চেয়ারম্যান বলেন, “যত দিন পর্যন্ত বিষয়টি লাভজনক থাকবে, তত দিন পর্যন্ত আমরা প্রতিটি ফোঁটা (রাশিয়ার তেল) কিনে যাব।” সরকার ‘অন্য রকম’ কিছু না-ভাবলে এখনও পর্যন্ত ভ্লাদিমির পুতিনের দেশ থেকে তেল কেনার বিষয়ে কোনও বিধিনিষেধ নেই বলে জানান তিনি। অরুণ এ-ও জানান যে, ওএনজিসি গোষ্ঠীর দুই তেল পরিশোধনকারী সংস্থা হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (এইচপিসিএল) এবং ম্যাঙ্গালোর রিফাইনারি অ্যান্ড পেট্রোকেমিক্যালস (এমআরপিএল)-এর রাশিয়ার তেল কেনার বিষয়ে কোনও বিধিনিষেধ নেই।
প্রসঙ্গত, এইচপিসিএল ও এমআরপিএল যৌথ ভাবে বছরে ৪ কোটি টন তেল পরিশোধন করতে পারে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণের পর শোধিত তেলের একাংশ পশ্চিমের দেশগুলিতে বিক্রি করে ভারত। আমেরিকার দাবি, রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনে মস্কোকে মুনাফা করার সুযোগ করে দিচ্ছে ভারত। আর তেল বিক্রির টাকা ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মস্কো কাজে লাগাচ্ছে বলে দাবি আমেরিকার। পরিসংখ্যান বলছে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার সময় রাশিয়া থেকে ২ শতাংশেরও কম তেল আমদানি করত ভারত। আমেরিকা এবং ইউরোপ রাশিয়ার তেলের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করলে ছাড়ের প্রস্তাব দেয় মস্কো। ফলে তুলনায় স্বল্প দামে রাশিয়া থেকে তেল আমদানির পরিমাণ বৃদ্ধি করতে থাকে ভারত।
ভারতের উপর প্রথমে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। পরে তিনি জানান, রাশিয়ার কাছ থেকে লাগাতার তেল কেনার কারণে ভারতকে ‘জরিমানা’ দিতে হবে। শাস্তি হিসাবে আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয় ভারতের পণ্যের উপর। ফলে মোট রফতানি শুল্কের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০ শতাংশ। ভারত অবশ্য বার বারই জানিয়েছে, জাতীয় স্বার্থের কথা মাথায় রেখেই তারা এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। ট্রাম্প প্রশাসনের অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তকে ‘অকারণ এবং অযৌক্তিক’ বলে ব্যাখ্যা করেছিল নয়াদিল্লি। এ ক্ষেত্রে ভারতের প্রশ্ন, চিন এবং আরও অনেক দেশ রাশিয়া থেকে বিপুল পরিমাণ তেল আমদানি করে থাকে। তা হলে কেবল ভারতকেই কেন ‘শাস্তি’ দেওয়া হচ্ছে, সেই প্রশ্ন তোলা হয়। একই প্রশ্ন তোলে আমেরিকার অধুনা বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টি।