বানভাসি কেরলে ওনাম নামমাত্রই

প্রতি বছর এই ভাবেই ওনাম উৎসব পালন করে এসেছেন কেরলের কোট্টায়ম জেলার কান্নিকুড়ির গৃহবধূ আর রমানি। এ বছরও নতুন কিছু পদ রান্নার কথা ভেবে রেখেছিলেন। কিন্তু  সব পরিকল্পনাই ভেস্তে দিয়েছে বন্যা।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৮ ০৪:১৮
Share:

উৎসব: কোচির ত্রাণ শিবিরে পালিত হচ্ছে ওনাম। শনিবার। ছবি: পিটিআই।

দুপুরের পাতে কলার চিপস, পাঁপড় থেকে শুরু করে কমপক্ষে পনেরো থেকে ষোলো রকমের পদ। বিকেলে সোনালি পাড়ের সাদা শাড়ি পরে মন্দিরে যাওয়া। সন্ধেবেলায় পাড়ায় কথাকলি নাচে যোগদান।

Advertisement

প্রতি বছর এই ভাবেই ওনাম উৎসব পালন করে এসেছেন কেরলের কোট্টায়ম জেলার কান্নিকুড়ির গৃহবধূ আর রমানি। এ বছরও নতুন কিছু পদ রান্নার কথা ভেবে রেখেছিলেন। কিন্তু সব পরিকল্পনাই ভেস্তে দিয়েছে বন্যা। রমানি বলেন, ‘‘গোটা রাজ্য তছনছ। এর মধ্যে আমরা কী ভাবে জাঁকজমক করে উৎসব করব? নামকাওয়াস্তে ওনাম করছি। শুধু ভাত, ডাল, সম্বর, চাটনি দিয়েই সেরেছি দুপুরের খাওয়া। স্বামীর পছন্দের পায়েসও হয়নি।’’

রমানিরা যেখানে থাকেন, সেটা কিছুটা উঁচু। তাই সেখানে বন্যার জল ঘরে ঢোকেনি। রমানির প্রতিবেশী বি রমেশ বলেন, ‘‘জল ঘরে ঢোকেনি ঠিকই। কিন্তু আমাদের পাড়া থেকে দু’কিলোমিটার দূরে কুমারগাম জলের তলায়। ওখানকার কেউ ওনাম পালন করতে পারছেন না। ওদের কথা ভেবে আমরাও একেবারে যেটুকু পালন না করলেই নয়, সেটুকু করছি।’’ রমেশ জানান, পাড়ার দোকানবাজার, এমনকি সব্জির দোকানও বেশির ভাগ বন্ধ। পানীয় জল ঠিক মতো পাওয়া যাচ্ছে না।

Advertisement

উৎসব সেভাবে পালন হচ্ছে না বন্যা বিধ্বস্ত মলপ্পুরমেও। সেখানে বেশ কয়েকটি ত্রাণশিবিরে এখনও গৃহহীনদের ভিড়। এ রকমই একটি শিবিরে এখনও কাজ করছেন নিজের পিঠ পেতে দিয়ে ভাইরাল হয়ে যাওয়া যাওয়া যুবক কেপি জয়সল। তিনি জানান, তাঁরা মুদ্দামারি গ্রামের ত্রাণ শিবিরে ওনাম পালনের ব্যবস্থা করেছেন। জয়সল বলেন, ‘‘সব হারিয়ে অনেকেই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। ওঁদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে এখনও অনেক দেরি। তাই খুব সাদামাঠা ভাবে হলেও ওনাম উৎসব করে ওঁদের মুখে কিছুটা হাসি ফোটানোর চেষ্টা করছি।’’

জয়সলের আর এক বন্ধু প্রভাসও ওই ত্রাণশিবিরে কাজ করছেন। বাড়িতে এখনও যেতে পারেননি। প্রভাস বললেন, ‘‘এই প্রথম ওনামে বাড়ি থাকলাম না। কী ভাবে শিবির ছেড়ে যাই? নতুন ঘিয়ে রংয়ের ধুতি তোলা রইল আলমারিতেই।’’ প্রভাসের স্ত্রীও নতুন শাড়ি পরেননি। বাড়ির দরজায় ফুলের আলপনাও দেওয়া হয়নি।

পালাক্কড় জেলার কালপড্ডম গ্রাম থেকে জল নেমে গিয়েছে। অনেকে ফিরেও এসেছেন নিজের বাড়িতে। কিন্তু বেশির ভাগই ওনাম পালন করতে পারেননি। কয়েক জন বাসিন্দা জানান, ঘরের মেঝে কাদা মাটিতে ভর্তি। উৎসবের দিনটা বাড়ি পরিষ্কার করেই কেটে গেল।

কেরলের কথা ভেবে এ বার ওনম উৎসব পুরোপুরি বাতিল করেছেন কলকাতা মালয়লি সমাজমের সদস্যরাও। উন্নিকৃষ্ণ যেমন বলেন, ‘‘ওখানে আমাদের পরিজনরা কত কষ্টে আছেন। উৎসবের জন্য যে টাকা খরচ করি তা পুরোটাই ত্রাণ তহবিলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’ কলকাতা মালয়ালি সমাজমের সচিব এম গোপী বলেন, ‘‘বিকেলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে জন্য যে হলঘর ভাড়া করা হয়েছিল, সেও বাতিল করা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন