এ যেন মূষিক প্রসব

কয়েক দিন ধরে মন্ত্রীদের ইস্তফা গ্রহণের নাটক, নয়া কামরাজ পরিকল্পনা কম হল না। অবশেষে লোকসভা ভোটের দেড় বছর আগে যা হল, সেটা নরেন্দ্র মোদী মন্ত্রিসভার স্থিতাবস্থা রক্ষা। নরসিংহ রাও ১৯৯১ সালে সবাইকে চমকে দিয়ে মনমোহন সিংহকে মন্ত্রিসভায় এনেছিলেন।

Advertisement

জয়ন্ত ঘোষাল

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:০২
Share:

নরেন্দ্র মোদী। ছবি: সংগৃহীত

একেই বোধহয় বলে ‘বহ্বারম্ভে লঘু ক্রিয়া’।

Advertisement

কয়েক দিন ধরে মন্ত্রীদের ইস্তফা গ্রহণের নাটক, নয়া কামরাজ পরিকল্পনা কম হল না। অবশেষে লোকসভা ভোটের দেড় বছর আগে যা হল, সেটা নরেন্দ্র মোদী মন্ত্রিসভার স্থিতাবস্থা রক্ষা। নরসিংহ রাও ১৯৯১ সালে সবাইকে চমকে দিয়ে মনমোহন সিংহকে মন্ত্রিসভায় এনেছিলেন। আর্থিক সংস্কারের ঘোড়া ছুটিয়েছিলেন মনমোহন। কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের বর্তমান উপদেষ্টা সঞ্জীব সান্যাল বলেছিলেন, ‘‘সেটা ছিল ভারতের দ্বিতীয় স্বাধীনতা আন্দোলন।’’ আর আজ নরেন্দ্র মোদীর বিরাট জাহাজের মতো ৭৬ জনের মন্ত্রিসভা খাড়া বড়ি থোড়— থোড় বড়ি খাড়া।

আরও পড়ুন: আমন্ত্রণই পাননি শরিকেরা

Advertisement

স্লোগান ছিল, কম ‘সরকার’ আর বেশি ‘সুশাসন’। আর সে জন্য বিশেষজ্ঞদের প্রস্তাব ছিল, পরিকাঠামো সংক্রান্ত রেল, সড়ক পরিবহন ও জাহাজ মন্ত্রক নিয়ে একটি মন্ত্রক গড়ে দেওয়া। তাতে একটি জাতীয় পরিবহণ নীতি গড়ে তোলা যাবে। রাজ্যে রাজ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনার প্রয়োগের দিকটি দেখবে একেকটি নিগম। প্রস্তাব ছিল, মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রককেও দু’ভাগ করার। একটি মন্ত্রকে স্থির হবে শিক্ষা নীতি, অন্যটি বিশ্ববিদ্যালয় তথা ইউজিসি-র পরিচালনার দিকটি দেখবে। তিন বছরেও শিক্ষানীতি ঠিক করে উঠতে পারেনি সরকার।

তাত্ত্বিক আলোচনা যা-ই হোক, বাস্তবে দেখা গেল এর কোনওটিরই রূপায়ণ হল না। উল্টে ধর্মেন্দ্র প্রধানের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের সঙ্গে জুড়ল রাজীব প্রতাপ রুডির ছেড়ে আসা দক্ষতা উন্নয়ন বিভাগটি। যার সঙ্গে পেট্রোলিয়ামের কোনও সম্পর্ক নেই। আর নিতিন গডকড়ীর সড়ক পরিবহণের সঙ্গে জুড়ল উমা ভারতীর ছেড়ে যাওয়া জলসম্পদ। গঙ্গার দায়িত্ব দেওয়া হল আর একজনকে। ইউনেস্কোর সুপারিশ অনুযায়ী পর্যটন ও সংস্কৃতি ছিল একসঙ্গে। এ বার মহেশ শর্মা সংস্কৃতির সঙ্গে পেলেন পরিবেশ।

মোদী তৃতীয়বারের রদবদলে ঝুঁকি নেওয়ার সাহস দেখাতে পারলেন না। বিরোধী নেতারা বলছেন, অনুগতদের বেশি দায়িত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী তাঁর নিয়ন্ত্রণ বাড়িয়েছেন। আরএসএস নেতা মোহন ভাগবতের কথাও সে ভাবে শোনা হয়নি। আরএসএসের কথা যদি মোদী-শাহ শুনতেন, তা হলে গডকড়ীকে হয়তো প্রতিরক্ষার মতো মন্ত্রক দিয়ে আরও গুরুত্ব দিতে হতো। কিন্তু অমিত শাহ বিরাট ক্ষমতাশালী ব্যক্তি হিসেবে প্রধান ভূমিকা নিলেন। দলের সদর দফতরে বিজেপি নেতাদের ডেকে তাঁদের ইস্তফা চেয়ে অমিত বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি এখনও ‘সুপ্রিমো’।

আমলাদের মধ্যে কর্মক্ষম প্রতিভা সন্ধান করতে হয়েছে। তবে তাঁদের এতটা বেশি গুরুত্ব দিতে মোদী-শাহ সাহস পাননি, যাতে দলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়। গত ৭ দিন ধরে ছিল নাটকের সাসপেন্স। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মূষিক প্রসব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন