এ দেশে খাদির ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে একটিই নাম— মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী। কিন্তু এ বছর খাদি ইন্ডিয়ার ক্যালেন্ডার ও ডায়েরিতে সেই একই ভঙ্গিতে বসে চরকা কাটছেন যিনি, তিনি গাঁধীজি নন, দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
কেন্দ্রীয় সরকারের খাদি ও গ্রামোদ্যোগ নিগম গাঁধীর বদলে মোদীর বিজ্ঞাপন দেওয়ায় ঝড় উঠেছে রাজনীতিতে। রাহুল গাঁধী থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অরবিন্দ কেজরীবালরা মুহূর্তে ঝুলি থেকে অস্ত্র বের করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, কোনও কাজ না করেই বাহবা নেওয়ায় জুড়ি নেই মোদীর। কিন্তু এ বার তিনি সব মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছেন। না হলে মহাত্মা গাঁধীকে সরিয়ে সেই জায়গায় কেউ নিজেকে বসান? বিতর্কের মধ্যে জবাব দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের একটি সূত্র। তাঁরা দাবি করেছেন, ক্যালেন্ডার ও ডায়েরিতে নরেন্দ্র মোদীর ছবি দেওয়ায় কোনও নিয়মভঙ্গ হয়নি। কেননা, খাদির ক্যালেন্ডারে গাঁধীর ছবিই ছাপতে হবে, এমন কোনও নিয়ম নেই। অনেক বছরই সেখানে গাঁধীর ছবি ছাপা হয়নি। ফলে ছবি বদলে দেওয়ার প্রশ্নই উঠছে না।
তবে এ সব যুক্তি বিরোধীদের সন্তুষ্ট করতে পারেনি। মোদীকে নিশানা করে রাহুল গাঁধীর মন্তব্য, ‘‘এ হল মঙ্গলযানের প্রভাব!’’ ব্যাপারটা কী? দু’দিন আগেই প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে রাহুল বলেছিলেন, মঙ্গলযান উৎক্ষেপণের পরে সাফল্যের কৃতিত্ব নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন মোদী। যেন ইসরোর কোনও ভূমিকাই নেই, মনমোহন সিংহ সরকারও কাজ করেনি এত টুকু। মাত্র ১৫ মিনিটেই সব কাজ সেরে মঙ্গলযান আকাশ পাঠিয়েছেন মোদী। কংগ্রেস সহ-সভাপতি সে দিন কটাক্ষ করেছিলেন, ‘‘মোদীর শুধু একটাই আক্ষেপ, মঙ্গলযান ওড়ার পরে তাঁর মনে হয়েছে, আরে আমার ছবিটা তো দেওয়া হল না!’’ খাদি-বিতর্কে সেই মঙ্গলযান প্রসঙ্গকেই এ বার টেনে এনেছেন রাহুল। কংগ্রেস বলছে, মঙ্গলযানে দেওয়া হয়নি যে ছবি, সেটাই এখন খাদির ক্যালেন্ডারে শোভা পাচ্ছে!
নোট বাতিল ও লগ্নি সংস্থা বিতর্কের মধ্যে এই নতুন অস্ত্র পেয়ে শাণ দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। টুইটারে মোদীকে নিশানা করে তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘‘মহাত্মা গাঁধী ও তাঁর মহান প্রতীক চরকা বদলে দিয়ে মোদীবাবু জায়গা করে নিয়েছেন।’’ মমতার প্রশ্ন, ‘‘মহাত্মা গাঁধী তো জাতির পিতা। মোদীজি কী?’’ এর পর বারাসতে যাত্রা উৎসবের সূচনা করে ফের তোপ দাগেন মমতা। বলেন, ‘‘মোদীবাবু কী করতে চাইছেন, নিজেকে কী ভাবছেন বোঝা মুশকিল। জাতির পিতা মহাত্মা গাঁধী যে চরকা কাটতেন, সেই ছবি বদলে তিনি নিজেই এখন চরকা কাটছেন। কোনও দিন দেখব, টাকাতেও নিজের ছবি বসিয়ে দিয়েছেন।’’ এর পরই মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘অ্যাপে দেখলাম দু’হাজার টাকার নোটেও তাঁর ভাষণ শোনা যাচ্ছে।’’ মোদীকে কটাক্ষ করেছেন অরবিন্দ কেজরীবালও। টুইটারে তাঁর মন্তব্য, ‘‘গাঁধী হওয়ার জন্য জন্ম জন্মান্তরের তপস্যা দরকার। চরকা কাটার অভিনয় করে কেউ গাঁধী হয় না, বরং উপহাসের পাত্র হয়!’’
প্রধানমন্ত্রীর দফতর যদিও দাবি করছে, মোদী জমানায় খাদির বিক্রি লাফিয়ে বেড়েছে। কংগ্রেসের ৫০ বছরের শাসনে বিক্রি হওয়া কাপড়ের ২ থেকে ৭ শতাংশ ছিল খাদি। কিন্তু গত দু’বছরে তা বেড়ে ৩৪ শতাংশ হয়েছে। মোদীর দফতরের দাবি, খাদি ব্যবহারে যুব সমাজকে উৎসাহিত করেছেন মোদী। সে জন্য খাদির জনপ্রিয়তা বেড়েছে। মোদীর দফতর জানাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী মহিলাদের হাতে চরকা তুলে দিয়েছিলেন। সেই ছবিই ডায়েরি ও ক্যালেন্ডারে ছাপা হয়েছে। খাদির এক কর্তার দাবি, অক্টোবরে লুধিয়ানায় একটি অনুষ্ঠানে মহিলাদের হাতে ৫০০টি চরকা তুলে দেন মোদী। ক্যালেন্ডারে সেই ছবি ছাপার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা।
আক্রমণের জবাব দিয়েছে বিজেপিও। দলের মুখপাত্র সম্বিত পাত্রের মন্তব্য, ‘‘ইউপিএ জমানায় গাঁধীর ছবি দেওয়া নোট পকেটে রাখতে একের পরে এক দুর্নীতি হতো। অনেকেরই গাঁধী-প্রীতি নোটেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু খাদি ও গরিব মানুষের ক্ষমতায়নে গাঁধীজির আদর্শ মোদীই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।’’