জগদীপ ধনখড়। —ফাইল চিত্র।
এক নৈশভোজ ঘিরে গত এপ্রিল মাসে ‘চাপ’ তৈরি হয়েছিল দেশের এক সাংবিধানিক পদাধিকারীর উপর। আচমকা পদ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর এ বার তাঁকেই নৈশভোজে ডেকে নরেন্দ্র মোদী সরকারের উপর ‘পাল্টা চাপ’ তৈরি করার ভাবনাচিন্তা চলছে বিরোধী শিবিরে।
গোটা দেশকে চমকে দিয়ে গত সোমবার উপরাষ্ট্রপতি পদ থেকে আচমকা ইস্তফা দেন জগদীপ ধনখড়। পরদিনই তা গ্রহণ করে নেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। বিদায়ী উপরাষ্ট্রপতির সঙ্গে সরকারপক্ষের সম্পর্কের অবনতি নিয়ে নানান জল্পনা চলছে সেই থেকে। এমন পরিস্থিতিতে ধনখড়কে নৈশভোজে বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া যায় কি না, সে ব্যাপারে নিজেদের মধ্যে আলোচনা শুরু করেছেন বিজেপি-বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র নেতারা। যদিও শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত তা শুধু ভাবনা এবং ছোট পরিসরের আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।
গত সোমবার রাষ্ট্রপতিকে পাঠানো ইস্তফাপত্রে ধনখড় কারণ হিসাবে তাঁর অসুস্থতার কথা উল্লেখ করেছিলেন। বিকেল পর্যন্ত রাজ্যসভার অধিবেশনে খোশমেজাজে থাকা ধনখড় কেন সন্ধ্যায় আচমকা ইস্তফা দিলেন, চার দিন পরেও তা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি। বিরোধীদের সন্দেহ, কেন্দ্রের চাপেই ধনখড় ইস্তফা দিয়েছেন। মোদী সরকারের ‘নীরবতা’ বা প্রসঙ্গ ‘এড়িয়ে চলার’ চেষ্টা নানা জল্পনায় আরও সার-জল দিয়েছে। ধনখড়ের ইস্তফার নেপথ্য কারণ হিসাবে অনেকেই নানাবিধ ঘটনা টেনে কেন্দ্রের সঙ্গে দূরত্বের সূচক হিসাবে বর্ণনা করছেন। আলোচনায় উঠে আসছে গত এপ্রিল মাসে মার্কিন উপরাষ্ট্রপতি জেডি ভান্সের ভারত সফরের প্রসঙ্গও।
সাংবিধানিক রীতি অনুযায়ী অন্য কোনও দেশের রাষ্ট্রপতি ভারতে এলে যেমন দেশের রাষ্ট্রপতি নৈশভোজের আয়োজন করেন, তেমনই কোনও উপরাষ্ট্রপতি এলে তা করে থাকেন দেশের উপরাষ্ট্রপতি। কিন্তু ভান্সের ভারত সফরের সময়ে দেখা গিয়েছিল ধনখড়ের বদলে নৈশভোজ আয়োজন করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর তরফে। বিরোধীদের অনেকের বক্তব্য, সেটি আসলে ছিল সরকারের তরফ থেকে ধনখড়কে দেওয়া বার্তা। বিভিন্ন ইস্যুতে ধনখড়ের ভূমিকা এবং মন্তব্য যে মোদী সরকার ভাল চোখে দেখছে না, সেই বার্তাই দেওয়া হয়েছিল ভান্সের জন্য দেওয়া নৈশভোজে তাঁকে ‘উপেক্ষা’ করে। এ বার সেই ধনখড়কেই নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানিয়ে মোদী সরকারের উপর পাল্টা চাপ তৈরি করতে চাইছেন বিরোধীরা।
বৃহস্পতিবার রাজ্যসভার বিজ়নেস অ্যাডভাইজ়ারি কমিটির বৈঠক ছিল। সেই বৈঠকে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ প্রশ্ন তুলেছিলেন, কেন্দ্র কি ধনখড়ের জন্য কোনও সংবর্ধনার আয়োজন করছে? সেই প্রশ্নে কেন্দ্রের তরফে কোনও জবাব মেলেনি। তার পরেই নৈশভোজ আয়োজনের ভাবনা শুরু হয়েছে বিরোধী শিবিরে। যাকে অনেকেই এপ্রিলের পাল্টা ‘জুলাই ডিনার’ হিসাবে অভিহিত করছেন একান্ত আলোচনায়।
সূত্রের খবর, কংগ্রেসের তরফে কয়েক জন সাংসদ বিরোধী শিবিরের কয়েক জনকে ব্যক্তিগত ভাবে এই ভাবনার কথা বলেছেন। যদিও এ বিষয়ে শুক্রবার বিকেল পর্যন্তু কিছুই চূড়ান্ত হয়নি। শেষ পর্যন্ত বিরোধীরা এমন আয়োজন করলে নজিরবিহীন পরিস্থিতি তৈরি হবে জাতীয় রাজনীতিতে। ধনখড় সেখানে হাজির হন কি না, তা নিয়েও কৌতূহল থাকবে।