তোতা-জুজুতে জোট জমাট উত্তরপ্রদেশে

উত্তরপ্রদেশে বিরোধী জোট গড়া নিয়ে বিস্তর টালবাহানা চলেছে গত কয়েক মাসে। গত শনিবার এসপি নেতা অখিলেশ এবং বিএসপি নেত্রী মায়াবতী বৈঠকে বসে জোটের রূপরেখা তৈরি করেন ঠিকই, কিন্তু সেখানে মাত্র ৬টি আসন ‘ছোট দলের’ জন্য ছেড়ে রাখা হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৯ ০৫:০৪
Share:

অখিলেশ যাদব ও মায়াবতী।— ফাইল চিত্র।

উত্তরপ্রদেশে বিরোধী ঐক্যের যে ছবিটি তৈরি করতে কালঘাম ছুটছিল গত কয়েক মাস ধরে, শাসকের ‘তোতাপাখি’ অর্থাৎ সিবিআইয়ের জুজুই তা করে দিল ৪৮ ঘণ্টার কম সময়ে! লোকসভা ভোটের মুখে অখিলেশ সিংহ যাদবের বিরুদ্ধে পুরনো মামলা টেনে আনা ও সিবিআই তদন্তের হুমকির প্রতিবাদে রাজধানীতে আজ পরপর দু’টি সাংবাদিক সম্মেলন দেখে এমনটাই মনে করছেন রাজনীতির লোকজন। প্রথমটি করেছে অখিলেশ ও মায়াবতীর দল— একই মঞ্চে, যৌথ ভাবে। এর পরে কংগ্রেস।

Advertisement

উত্তরপ্রদেশে বিরোধী জোট গড়া নিয়ে বিস্তর টালবাহানা চলেছে গত কয়েক মাসে। গত শনিবার এসপি নেতা অখিলেশ এবং বিএসপি নেত্রী মায়াবতী বৈঠকে বসে জোটের রূপরেখা তৈরি করেন ঠিকই, কিন্তু সেখানে মাত্র ৬টি আসন ‘ছোট দলের’ জন্য ছেড়ে রাখা হয়। ইঙ্গিত স্পষ্ট, কংগ্রেসকে জোটে সামিল করছে না এসপি-বিএসপি। কিন্তু উত্তরপ্রদেশ থেকে বিজেপিকে নির্মূল করার স্বার্থে এই বোঝাপড়াকেও যে রাহুল গাঁধী পরোক্ষ সমর্থন করছেন, তা আজ স্পষ্ট হয়ে গেল এসপি-বিএসপি জোটের পাশে কংগ্রেস এসে দাঁড়ানোয়। সেই কৌশলের অঙ্গ হিসেবেই সলমন খুরশিদ টুইটারে জানান, এসপি কংগ্রেসকে সঙ্গে না নিলেও সিবিআইয়ের চাপের মুখে পড়া অখিলেশের পাশে আছেন তাঁরা। রাজনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, মোদী সরকারের সিবিআই-রাজনীতির কারণেই আজ এই ঐক্যের ছবিটি উঠে এল সর্বসমক্ষে। এর আগে মায়াবতীকেও চাপে রাখা হচ্ছিল সিবিআই তদন্তের জুজু দেখিয়ে। গত পরশু থেকে এসপির বিরুদ্ধেও তদন্তের লালচোখ দেখানো শুরু হয়েছে। বেআইনি বালি খননে ২০১২-’১৩ সালে উত্তরপ্রদেশের খনি দফতরের তৎকালীন মন্ত্রী অখিলেশের ভূমিকা নিয়ে সিবিআই তদন্ত শুরু করেছে। ডাকা হবে আইএএস অফিসার বি চন্দ্রকলাকেও। গোটা বিষয়টি নিয়ে গত কাল মায়াবতী ফোনে কথা বলেন অখিলেশের সঙ্গে। দলীয় সূত্রের খবর, ‘বুয়া’ ফোনে ‘টিপু’কে বলেছেন, ‘‘এ সব ষড়যন্ত্র নিয়ে দুশ্চিন্তা কোরো না। লড়ে যাও। আমরাও সঙ্গে আছি।’’

শুধু বুয়া-ভাতিজা নন, এই লড়াইয়ে আজ সামিল হল কংগ্রেসও। সকালে সংসদের করিডরেই বৈঠক সেরে নেন এসপির রামগোপাল যাদব, বিএসপির সতীশ মিশ্র এবং কংগ্রেসের গুলাম নবি আজাদ। তখনই স্থির হয়, সংসদ চত্বরে এসপি-বিএসপি যৌথ ভাবে সাংবাদিকদের সামনে সিবিআই-রাজনীতির প্রতিবাদ জানাবে। আর তার পরে একই মঞ্চে কংগ্রেসও প্রতিবাদ জানাবে।

Advertisement

যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে এসপির সাংসদ রামগোপাল যাদব বলেন, ‘‘আমাদের জোটে কেঁপে গিয়েছে বিজেপি। তাই কেন্দ্র সিবিআইকে কাজে লাগাতে চাইছে। ওদের সঙ্গে আর কেউ নেই। তাই সিবিআইকেই নতুন শরিক করতে চাইছে বিজেপি।’’ একই সুরে বিএসপির সতীশ মিশ্র বলেন, ‘‘প্রকৃত সমস্যা থেকে দৃষ্টি ঘোরানোর জন্য সব রকম চেষ্টা করছে বিজেপি সরকার। রাম মন্দির, হনুমানের কথা আওড়াচ্ছে। কুম্ভ মেলার পিছনে যা খরচ করা হচ্ছে তাতে, যত দিন মেলা চলবে তার রোজ একটি করে বিদ্যালয় তৈরি করা যেত। এ সব করার আগে অন্তত হনুমানজিকে তো ওদের ভয় পাওয়া উচিত ছিল!’’

এর পরে আসেন কংগ্রেসের গুলাম নবি আজাদেরা। বলেন, ‘‘এসপি-বিএসপি জোটকে আটকানোর চেষ্টা করছে বিজেপি। ওরা কোনও রাজনৈতিক দলকে ছাড়েনি। তা সে কংগ্রেসই হোক বা এনসিপি, আরজেডি, তৃণমূল, ডিএমকে, টিডিপি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘অখিলেশের বিরুদ্ধে সিবিআইকে লেলিয়ে দেওয়ার ঘোর নিন্দা করছি আমরা। গণতন্ত্র আজ বিপন্ন। তবে এই ধরনের স্বৈরতন্ত্র বরদাস্ত করবে না দেশ।’’ গুলাম নবির প্রশ্ন, ‘‘এত দিন পর ভোটের মুখে এসে কেন বালি খননের মামলার কথা মনে পড়ল সিবিআইয়ের?’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন