টানটান উত্তেজনা দুই শিবিরেই। —ফাইল চিত্র।
‘চিফ মিনিস্টার ইন ওয়েটিং’— শশিকলাকে এখন এই নামেই ডাকছেন এআইএডিএমকে-র অধিকাংশ নেতা। অর্থাৎ শশিকলার মুখ্যমন্ত্রিত্ব এখন শুধু অল্প একটু সময়ের অপেক্ষা। রাজ্যপাল শপথ নিতে ডাকলেই কেল্লা ফতেহ্। কিন্তু ‘কেয়ারটেকার চিফ মিনিস্টার’ ও পনীরসেলভম যে সহজে এই অপেক্ষা শেষ হতে দেবেন না, তা স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে ক্রমশ। তামিলনাড়ুর মুখ্য সচিবকে পোয়েস গার্ডেনের বাড়িতে ডেকে পাঠিয়েছিলেন শশিকলা। রাজ্য পুলিশের ডিজি-কেও ডেকে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক মুখ্যমন্ত্রী পনীরসেলভমের নির্দেশে তাঁরা কেউ শশিকলার সঙ্গে দেখা করলেন না। পনীরসেলভম বুঝিয়ে দিলেন, রাজ্য প্রশাসন ও পুলিশের প্রধানরা এখনও তাঁরই নিয়ন্ত্রণে।
লড়াই ক্রমশ কঠিন হচ্ছে শশিকলার। তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রিত্বে নিজের উত্থানের জন্য মঞ্চ সাজিয়ে তোলা যখন প্রায় সেরে ফেলেছিলেন তিনি, ঠিক তখনই বেঁকে বসেছেন ও পনীরসেলভম (ওপিএস)। রবিবার এআইএডিএমকে পরিষদীয় দলের বৈঠকে শশিকলা দলনেত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর বিনা বাক্যব্যয়ে মুখ্যমন্ত্রিত্বে ইস্তফা দিয়েছিলেন ওপিএস। কিন্তু মঙ্গলবার রাতে মেরিনা বিচে জয়ললিতার সমাধিস্থলে গিয়ে ৪০ মিনিটের জন্য ধ্যানস্থ হওয়ার পর থেকে ওপিএস সম্পূর্ণ অন্য ভূমিকায়। শশিকলার মুখ্যমন্ত্রিত্ব রুখতে আপ্রাণ লড়াইয়ে নেমে পড়েছেন তিনি। শেষ মুহূর্তে ওপিএস-এর এই বিদ্রোহে ভেস্তে গিয়েছে শশিকলার অনেক হিসেব। মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইতিমধ্যেই পদত্যাগ করলেও পরবর্তী মন্ত্রিসভা গঠিত না হওয়া পর্যন্ত ওপিএস-ই তামিলনাড়ুর তত্ত্বাবধায়ক মুখ্যমন্ত্রী। ফলে প্রশাসনিক ক্ষমতা এখনও তাঁরই হাতে। সেই ক্ষমতা এ বার প্রয়োগ করতে শুরু করেছেন ওপিএস, ফলে ক্রমশ কঠিন হতে শুরু করেছে শশিকলার পথ।
রাজ্যপাল ইচ্ছাকৃত শপথ গ্রহণ নিয়ে টালবাহানা করছেন। অভিযোগ শশিকলা শিবিরের। —ফাইল চিত্র।
এআইএডিএমকে-র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তথা প্রবীণ বিধায়ক পিএইচ পান্ডিয়ন সাংবাদিক বৈঠক ডেকে শশিকলার বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন। ফলে তাঁর সমর্থন যে এখন ওপিএস-এর দিকেই, সে নিয়ে কোনও সংশয় নেই। দলের রাজ্যসভা সাংসদ ভি মৈত্রেয়ন জানিয়েছেন, জয়ললিতার প্রকৃত উত্তরসূরি পনীরসেলভমই। কারণ জয়া নিজে যত বার মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছেড়েছেন, তত বারই তা পনীরসেলভমের হাতে তুলে দিয়েছেন। দলের আর এক প্রবীণ নেতা তথা প্রেসিডিয়াম চেয়ারম্যান ই মধুসূদনন ওপিএস-এর বাড়ি গিয়ে তাঁর প্রতি নিজের সমর্থন ব্যক্ত করে এসেছেন।
আরও পড়ুন: মনমোহনকে বেনজির কটু কথা মোদীর
শশিকলা শিবির এ সব বিষয়ে গুরুত্ব না দিয়ে এখন শুধু পরিষদীয় দলকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা শুরু করেছে। ১৩৪ জন বিধায়কের মধ্যে ১৩১ জনকেই হোটেল-বন্দি করে দিয়েছেন শশিকলা। কয়েকটি দলে ভাগ করে এই বিধায়কদের বিভিন্ন হোটেলে এবং রিসর্টে রাখা হয়েছে। পনীরসেলভম শিবির যাতে কিছুতেই এই বিধায়কদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারে, তার জন্য কড়া নজরদারির ব্যবস্থাও করে ফেলেছেন ‘চিন্নাম্মা’। রাজ্যপাল সি বিদ্যাসাগর রাও শশিকলাকে শপথ গ্রহণের আমন্ত্রণ জানানোর পরই ১৩১ বিধায়ক হোটেল-রিসর্ট থেকে বেরবেন, এমনই পরিকল্পনা শশিকলা শিবিরের। কিন্তু ওপিএস তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতে চাননি। তিনি বলেছেন, যাঁদের হোটেলে-রিসর্টে রাখা হয়েছে, সেই বিধায়কদের অনেকেই গোপনে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। বিধানসভায় আস্থা ভোট হলে এআইএডিএমকে বিধায়করা নিজেদের বিবেকের নির্দেশ অনুযায়ী ভোট দেবেন, ওপিএস এমন মন্তব্যও করেছেন।
মুখ্যমন্ত্রী এখনও তিনিই, প্রশানসনিক রদবদল করে বুঝিয়ে দিচ্ছেন ওপিএস। —ফাইল চিত্র।
আজ বৃহস্পতিবারই রাজ্যপাল সি বিদ্যাসাগর রাওয়ের সঙ্গে দেখা করার কথা শশিকলার। রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে তিনি ফের সরকার গঠনের দাবি জানাবেন। পনীরসেলভমও আজ রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করছেন। শশিকলাকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানানোর আগে বিধানসভায় আস্থা ভোট হোক, এমনই দাবি জানাবেন ওপিএস।
আরও পড়ুন: চেন্নাইয়ে শুরু বিধায়ক-বন্দি খেলা
রাজ্যপাল কী সিদ্ধান্ত নেন, তার উপর অনেকটাই নির্ভর করছে তামিলনাড়ুর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ। কিন্তু শুধু রাজ্যপালের ভরসায় না থেকে নিজের মতো করে ঘুঁটি সাজানোও শুরু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্য সচিব এবং রাজ্য পুলিশের ডিজি-র সঙ্গে বৃহস্পতিবার সকালে বৈঠক করেছেন তিনি। বৈঠকের পর চেন্নাইয়ের পুলিশ কমিশনার পদ থেকে এস জর্জকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। নতুন পুলিশ কমিশনার হয়েছেন সঞ্জয় অরোরা। জয়ললিতার পোয়েস গার্ডেনের বাড়ি থেকে শশিকলাকে বিদায় করার তোড়জোড়ও শুরু করে দিয়েছেন তিনি। পনীরসেলভম এ দিন বলেছেন, পোয়েস গার্ডেনের বাড়িকে এ বার আম্মার স্মারকে রূপান্তরিত করা হবে। অর্থাৎ সে বাড়িতে আর কেউ থাকতে পারবেন না। ৩৩ বছর জয়ললিতার সঙ্গে থাকার সুবাদে তাঁর প্রয়াণের পরও শশিকলা পোয়েস গার্ডেনের বাড়িতেই থেকে গিয়েছেন। কিন্তু প্রাসাদোপম বাড়িটির দখল যে সহজে শশিকলাকে নিতে দেওয়া হবে না, ওপিএস এ বার তাও বুঝিয়ে দিতে চাইছেন।