রহস্যমৃত্যু: নাহারগড় দুর্গ থেকে সরানো হচ্ছে যুবকের দেহ। শুক্রবার জয়পুরে। ছবি: পিটিআই।
ক্রমশ অন্য চেহারা নিচ্ছে পদ্মাবতী-বিতর্ক।
সিনেমার উপর নিষেধাজ্ঞা, নাক কাটার হুমকি, দীপিকার মাথার দাম ঘোষণা— একাধিক উগ্র হিন্দু সংগঠনের উপদ্রব চলছিল গত ক’দিন ধরেই। আজ পদ্মাবতী-বির্তকের সঙ্গে জড়িয়ে গেল রাজস্থানের নাহারগড় কেল্লা চত্বরে উদ্ধার হওয়া একটি ঝুলন্ত দেহ এবং তার আশপাশের পাথরে কিছু লেখা। যার দৌলতে গোটা বিতর্কই নতুন আকার নিল।
শুক্রবার সকালে জয়পুরের নাহারগড় কেল্লার কার্নিস থেকে ঝুলন্ত একটি দেহ উদ্ধার হয়। ঘটনাস্থল রাজস্থান এবং চলতি পদ্মাবতী বিতর্কের আবহে নড়েচড়ে বসে পুলিশ। তখনই নজরে আসে দেহটির আশপাশে বেশ কিছুটা এলাকা জুড়ে একাধিক পাথরে কয়লা দিয়ে কিছু লেখা। কোনওটিতে লেখা, ‘আমরা শুধু পুতুল ঝোলাই না পদ্মাবতী’। কোনওটিতে লেখা, ‘পদ্মাবতীর বিরোধীরা, আমরা কেল্লা থেকে শুধু পুতুল ঝোলাই না।’ কোনওটিতে লেখা ‘পদ্মাবতীর প্রতিবাদে।’ পুলিশ জানায়, মৃতের নাম চেতন সাইনি। শাস্ত্রীনগরের বাসিন্দা চেতনের একটি সোনার দোকান রয়েছে। মৃতের দাদা রামরতন সাইনির দাবি, ‘‘ভাইয়ের সঙ্গে সিনেমা বা কোনও সংগঠনের যোগাযোগ নেই। ভাই আত্মহত্যা করতে পারে না। এটা খুন।’’
পাথরে লেখা স্লোগান, ‘‘পদ্মাবতীর বিরোধীরা— আমরা কেল্লায় শুধু পুতুল লটকাই না। আমাদের দম আছে।’’
খুন যে, সে বিষয়ে প্রাথমিক ভাবে নিশ্চিত পুলিশও। অকুস্থলে যাওয়া পুলিশের একাংশের বক্তব্য, যে ভাবে ঝোলানো হয়েছে, তাতে ঘটনাস্থলে অন্তত তিন-চার জন থাকার প্রমাণ মিলেছে। জয়পুর (উত্তর) সহকারী পুলিশ কমিশনার সত্যেন্দ্র সিংহ জানিয়েছেন, পারিবারিক বা ব্যবসায়িক কোনও আক্রোশ থেকে এই খুন কি না, তদন্তে সেটাও দেখা হবে। কিন্তু তার সঙ্গে পদ্মাবতী-যোগ কেন? এতেই ধন্দে পুলিশ। তদন্তকারীদের একাংশের অনুমান, বিভ্রান্ত করতেই পদ্মাবতী-মন্তব্য। দু’একটি পাথরে লেখা রয়েছে, ‘চেতন তান্ত্রিক মর গয়া!’ চেতন তন্ত্রসাধনা করতেন? নাকি লোককথা অনুসারে রানী পদ্মাবতীর স্বামী রতন সিংহের দরবারের সেই চেতন-তান্ত্রিকের প্রসঙ্গ টানা হয়েছে, যিনি পরে বিশ্বাসঘাতকতা করে আলাউদ্দিনের শিবিরে যোগ দেমন এবং তাঁকে পদ্মাবতীর ছবি দেখিয়ে চিতোর আক্রমণে প্রলুব্ধ করেছিলেন? চেতন কি এমন কিছু বিশ্বাসভঙ্গের কাজ করেছিলেন? তবে পুলিশের বেশি চিন্তা বাড়িয়েছে অন্য কয়েকটি পাথরে ভুল বানানে লেখা কিছু ধর্মীয় উস্কানিমূলক মন্তব্য। পুলিশের অনুমান, এই খুনকে ব্যবহার করে বড় অশান্তি বাধানোর চেষ্টা চলছে।
গোটা ঘটনায় ব্যাপক চাপে করণী সেনা। এতদিন দীপিকার নাক কাটার হুমকি দিলেও আজ ব্যাকফুটে। পদ্মাবতী-বিরোধীরা অবশ্য অন্যত্র স্বমহিমাতেই! সকালেই পদ্মাবতী প্রদর্শনের বিরুদ্ধে দিল্লির নাংলোই এলাকায় হাতে তরোয়াল নিয়ে মিছিল করে স্থানীয় ক্ষত্রিয় সমাজ।
এর মধ্যে আজ দিল্লি হাইকোর্টে কিছুটা স্বস্তি পেলেন ছবির নির্মাতারা। ছবিতে কোনও তথ্যগত ত্রুটি রয়েছে কিনা, তা ইতিহাসবিদ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে গড়া বিশেষজ্ঞ কমিটি দিয়ে বিচারের দাবিতে করা একটি জনস্বার্থ মামলা খারিজ করে আবেদনকারীদের তীব্র সমালোচনা করে বিচারপতিরা বলেন, মিথ্যা ধারণাপ্রসূত ও হতাশাজনক এই ধরনের আবেদন কিছু লোককে প্রতিবাদে নামার ইন্ধন জোগায়।