ট্রাম্প-চাপ! ভারতের প্রশংসায় পাক সেনাপ্রধান

ইসলামিক সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধ ঘোষণা করায়, রাতারাতি পাক মদতপ্রাপ্ত আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাস বন্ধ হয়ে যাবে, এমন আশা নেই। তবে ট্রাম্পের চাপে সুর বদলাচ্ছে ইসলামাবাদ। গত আড়াই বছর থমকে থাকা আলোচনার পথ খোলার একটা সচেতন চেষ্টা শুরু করেছে নওয়াজ শরিফের সরকার।

Advertisement

অগ্নি রায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:২৫
Share:

পাক সেনাপ্রধান বাজওয়া

ইসলামিক সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধ ঘোষণা করায়, রাতারাতি পাক মদতপ্রাপ্ত আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাস বন্ধ হয়ে যাবে, এমন আশা নেই। তবে ট্রাম্পের চাপে সুর বদলাচ্ছে ইসলামাবাদ। গত আড়াই বছর থমকে থাকা আলোচনার পথ খোলার একটা সচেতন চেষ্টা শুরু করেছে নওয়াজ শরিফের সরকার। এরই পাশাপাশি, রাজনীতি ও সামরিক বাহিনীর মধ্যে দূরত্ব রাখতে পারার জন্য প্রকাশ্যেই ভারতের প্রশংসায় মুখ খুলেছেন পাকিস্তানের নতুন সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়া!

Advertisement

এই বিষয়ে মার্কিন লেখক স্টিভেন উইলকিনসনের লেখা একটি বইয়ের উল্লেখ করে বাজওয়া তাঁর প্রথম বক্তৃতায় বলেছেন, ‘‘অনেক দেশ তাদের সামরিক ব্যবস্থা থেকে রাজনীতিকে আলাদা রাখার চেষ্টা চালালেও শুধু ভারতই সফল এই ক্ষেত্রে। তাদের বিদেশনীতি ও প্রতিরক্ষা চিন্তাভাবনা এমন ভাবে তৈরি হয়েছে যাতে সেনাবাহিনী সেখানকার গণতন্ত্রের কোনও ক্ষতি করতে পারবে না।’’

সাউথ ব্লকের বক্তব্য, বাজওয়া আসলে সেই সুরেই কথা বলছেন, যেটা নওয়াজ এত দিন চেয়ে এসেছেন। তবে পাক সেনাপ্রধানের মুখে ভারতের এমন প্রশংসা প্রায় বেনজির ঘটনা। ট্রাম্প-জমানায় পাকিস্তান যে আন্তর্জাতিক স্তরে নিজেদের ভাবমূর্তি মাজাঘষা ও মেরামতের চেষ্টা শুরু করেছে, এটা তারই ইঙ্গিত। নয়াদিল্লির মতে, পাকিস্তান বুঝতে পারছে যে, নিজেদের ভাবমূর্তি সংস্কার করতে চাইলে অবিলম্বে ভারতের প্রতি রণংদেহি মেজাজ খানিকটা হলেও মোলায়েম করতে হবে। কিছুটা আড়াল করতে হবে সীমান্তে উদ্যত অস্ত্র। এবং সেই চেষ্টা শুরু করে দিয়েছে ইসলামাবাদ। ফিরিয়ে আনতে চাইছে আলোচনার পরিবেশও।

Advertisement

তিন মাস পরে, আগামী জুনে কাজাখস্তানে সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও)-এর সম্মেলনে যোগ দেওয়ার কথা দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর। ওই সম্মেলনের ফাঁকে নরেন্দ্র মোদী ও নওয়াজকে মুখোমুখি আলোচনায় বসানো যায় কি না, সেই চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে ইসলামাবাদে। ভারত-পাকিস্তান উভয়েই বেশ কয়েক বছর ধরে ইউরেশীয় দেশগুলির ওই গোষ্ঠীর সদস্যপদ চেয়ে আসছে কৌশলগত ও বাণিজ্যিক কারণে। এ বারের সম্মেলনে দু’টি দেশকেই সদস্য করে নেওয়া হবে। দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতি তাই বাধ্যতামূলক। পাকিস্তান চাইছে, ওই সময়ে মোদী-নওয়াজ শীর্ষ বৈঠকের প্রস্তুতি হিসেবে আপাতত বিদেশসচিব বা অন্য কোনও পর্যায়ে আলোচনা শুরু করা হোক। এ ব্যাপারে পর্যাপ্ত সংকেতও দেওয়া হচ্ছে সাউথ ব্লককে।

বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তার বক্তব্য, ওবামা জমানায় আফ–পাক এলাকায় আধিপত্য ছিল পাক সেনা এবং আইএসআইয়ের। সেখানকার অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্রীয় মদত জুগিয়ে গিয়েছে সন্ত্রাসবাদ, মাদক চক্রে টাকা খাটানো ও অস্ত্র ব্যবসার মতো কাজগুলিতে। জেহাদি-ব্যবসার রমরমা ঘটিয়েছে তালিবানের সঙ্গে শান্তি প্রক্রিয়ার নামে। বিদেশ মন্ত্রকের ওই কর্তার কথায়, ‘‘এখন ট্রাম্প-জমানায় পরিস্থিতি যে আর আগের মতো থাকবে না, তা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় ইসলামাবাদের।’’

কূটনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, ভাবমূর্তি বদলাতে দক্ষিণ এশিয়ায় অস্থিরতা এবং সন্ত্রাস বন্ধ করতে তারা যে অগ্রণী পদক্ষেপ করছে, সেটা দেখানোরও একটা তাগিদ দেখা যাচ্ছে পাক সামরিক নেতৃত্বের মধ্যে। দু’সপ্তাহ আগেই লস্কর-ই-তইবা নেতা হাফিজ সইদকে গৃহবন্দি করার পাক-সিদ্ধান্ত একটি তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ। যদিও এর আগে পঠানকোট কাণ্ডের মূল চক্রী মাসুদ আজহারকেও একই ভাবে কিছু দিন গৃহবন্দি রেখে ছেড়ে দিয়েছিল নওয়াজ সরকার। কিন্তু এ বারে হাফিজকে বন্দি করার সময়টাকে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। হাফিজের দাবি, মোদী আর ট্রাম্পের যোগসাজশেই তাকে বন্দি হতে হল।

সাউথ ব্লক সতর্ক। কারণ, সুর বদল মানেই মন বদল নয়। বাজওয়া ভারতের প্রশংসা করলেও সেটা নেহাতই বলার জন্য বলা কোনও মন্তব্য কি না, সেটাও খতিয়ে দেখছে সাউথ ব্লক। ভারতে নিযুক্ত পাক হাইকমিশনার আব্দুল বাসিতও দ্বিপাক্ষিক আলোচনা শুরু হওয়ার প্রশ্নে আশা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু একই সঙ্গে কাশ্মীর প্রসঙ্গ তুলতে ভোলেননি। তাঁর কথায়, ‘‘কী নামে আলোচনাটা শুরু হবে, সেটা তত গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু শুরু হওয়াটা খুবই জরুরি।’’ পাশাপাশি তিনি এ-ও বলছেন, ‘‘ভারত চাইছে শুধুমাত্র সন্ত্রাস নিয়ে কথা হোক। কিন্তু আলাদা করে সন্ত্রাস নিয়ে কথা বলাটা সম্ভব নয়। আলোচনা হলে কাশ্মীর-সহ সমস্ত দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়েও হবে।’’

পাকিস্তানকে আলোচনার টেবিলে বসাতে আগ্রহী মোদীও। তবে পাকিস্তানের প্রতিটি কাজকর্ম ও সুর বদলের দিকে আপাতত নজর রাখলেও ইসলামাবাদের উপরে চাপ এখনই শিথিল করতে রাজি নয় ভুক্তভোগী সাউথ ব্লক। এই অবস্থায় ৫ রাজ্যে ভোট মিটলে কি পাকিস্তানের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠক হবে? বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ বলেছেন ‘‘আলোচনায় আমরা সব সময়ই রাজি। কিন্তু সন্ত্রাসবাদ ও আলোচনা একসঙ্গে চলতে পারে না।’’

ভারত যা সমানে বলে চলেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন