দূতাবাসে ডাক গিলানিদের, তবু বহাল বৈঠক

প্ররোচনায় পা নয়, আস্থা আলোচনাতেই। বিরল সমাপতন। হিসেব কষলে দাঁড়ায় ঠিক এক বছর! কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন পাক হাইকমিশনার আব্দুল বাসিত। ক্ষুব্ধ নয়াদিল্লি দু’দেশের বিদেশসচিবদের বৈঠক বাতিল করে দিয়েছিল। তারিখটা ছিল ১৯ অগস্ট।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৫ ০২:৫৬
Share:

সৈয়দ আলি শাহ গিলানি, সরতাজ আজিজ ও মিরওয়াইজ ফারুক।

প্ররোচনায় পা নয়, আস্থা আলোচনাতেই।

Advertisement

বিরল সমাপতন। হিসেব কষলে দাঁড়ায় ঠিক এক বছর! কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন পাক হাইকমিশনার আব্দুল বাসিত। ক্ষুব্ধ নয়াদিল্লি দু’দেশের বিদেশসচিবদের বৈঠক বাতিল করে দিয়েছিল। তারিখটা ছিল ১৯ অগস্ট।

ঠিক এক বছর পর! পাক হাইকমিশনের তরফে আজ ফের আমন্ত্রণ জানানো হল কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের। এঁদের মধ্যে নরমপন্থী সৈয়দ আলি শাহ গিলানিকে আগামী ২৩ অগস্ট পাক নিরাপত্তা উপদেষ্টা সরতাজ আজিজের সঙ্গে বৈঠকে ডাকা হল। অন্য দুই নেতা— মিরওয়াইজ উমর ফারুক এবং ইয়াসিন মালিক আমন্ত্রণ পেলেন সরতাজের সম্মানে আয়োজিত সান্ধ্য অনুষ্ঠানে। ওই দিনেই ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের
সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে পাক নিরাপত্তা উপদেষ্টার।

Advertisement

এবং এর পরেও আগামী রবিবার দুই নিরাপত্তা উপদেষ্টার বৈঠক পূর্বনির্ধারিত সূচি মেনেই হবে বলে সাউথ ব্লক সূত্রে খবর। এমন নয় যে, পাক হাই-কমিশনের সিদ্ধান্তে দিল্লি অসন্তুষ্ট নয়। সরকারি সূত্রের বক্তব্য, ‘‘পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে। উপযুক্ত সময়ে জবাব দেওয়া হবে।’’

কেন বহাল রইল বৈঠক?

কূটনীতিকদের একাংশের মতে, বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের বৈঠকে ডাকাটা আসলে নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের বৈঠক ভেস্তে দেওয়ার ফাঁদ। রাশিয়ার উফায় এই বৈঠকের নীল নকশা স্থির করে এসেছিলেন নরেন্দ্র মোদী ও নওয়াজ শরিফ। কিন্তু যখনই দু’দেশের মধ্যে আস্থাবর্ধক পদক্ষেপের সম্ভাবনা তৈরি হয়, তখনই পাক সেনা, আইএসআই ও মোল্লাতন্ত্র মিলিয়ে একটি অংশ সক্রিয় হয়ে ওঠে। উফা-র বৈঠকের পর পঞ্জাবের গুরুদাসপুর, জম্মু-কাশ্মীরের উধমপুরে জঙ্গি হামলা হয়েছে। উধমপুরে ধরা পড়েছে পাক জঙ্গি মহম্মদ নাভেদ। এর উপর সীমান্ত ও নিয়ন্ত্রণরেখায় একটানা গুলিগোলা চালিয়ে যাচ্ছে পাক সেনা। কূটনীতিকদের মতে, এ সব সত্ত্বেও ভারত বৈঠক বাতিলের পথে না হাঁটায় আজ কাশ্মীর-তাসটি খেলা হয়েছিল। ভাবা হয়েছিল, ভারত ক্ষুব্ধ হয়ে গত বছরের মতোই বৈঠক বাতিল করবে।

কিন্তু সেই প্ররোচনায় আর পা দিতে নারাজ দিল্লি। সাউথ ব্লক সূত্র জানাচ্ছে, এই মুহূর্তে পাকিস্তানকে আলোচনার টেবিলে টেনে আনাটাই অনেক বেশি কার্যকরী পদক্ষেপ হবে। পাকিস্তান বলে, ভারতই নাকি আলোচনা চায় না। এ বার নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের বৈঠকের কথা মাথায় রেখে একাধিক প্রমাণ সম্বলিত ডসিয়ের তৈরি করেছে ভারত। সূত্রের খবর, দাউদ ইব্রাহিম, টাইগার মেমন-সহ পাকিস্তানে আশ্রয় নেওয়া অন্তত ৬০ জন অপরাধীর একটি তালিকা পাক কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিয়ে তাদের প্রত্যর্পণের জন্য চাপ বাড়ানো হবে। দাউদের তিনটি পাকিস্তানি পাসপোর্টের কপি ও পাকিস্তানে তিনটি ঠিকানার প্রমাণ হাতে পেয়েছেন গোয়েন্দারা। তা-ও দেওয়া হবে।

উধমপুরে ধৃত জঙ্গি নাভেদের স্বীকারোক্তিও ভারতের বড় অস্ত্র। নাভেদ স্বীকার করেছে, সে পাক নাগরিক। নাভেদের বর্ণনা অনুযায়ী আঁকানো স্কেচ-এর সূত্র ধরে আজই এক সন্দেহভাজনকে আটক করেছে গুজরাত পুলিশ। এর পাশাপাশি, লস্কর-ই-তইবার কম্যান্ডার জাকিউর রহমান লকভি-সহ ২৬/১১-র পাণ্ডাদের দ্রুত বিচারের দাবি তুলবে ভারত। পাকিস্তান পাল্টা সমঝোতা এক্সপ্রেস বিস্ফোরণের প্রসঙ্গ তুললে বলা হবে, ভারতে বিভিন্ন হামলায় পাক সরকারি সং‌স্থার যোগাযোগের প্রমাণ মিলেছে। কাজেই সমঝোতা বিস্ফোরণের সঙ্গে যেন ২৬/১১-কে গুলিয়ে ফেলা না হয়। অসন্তোষ জানানো হবে নিয়ন্ত্ররেখায় সংঘর্ষবিরতি নিয়েও। ভারতের অভিযোগ, গুলিগোলার আড়ালে কাশ্মীরে জঙ্গি ঢোকাচ্ছে পাক সেনা।

ঘটনাচক্রে, আজই কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জে সরব হয়েছিল পাকিস্তান। আর বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের সঙ্গে সরতাজ আজিজের সাক্ষাৎ নিয়ে তাদের যুক্তি, বিষয়টা ‘অভূতপূর্ব’ কিছু নয়। পাক হাই-কমিশনের কাউন্সেলর (প্রেস) মনজুর আলি বলেন, ‘‘আমরা ওঁদের সঙ্গে কথা বলেই থাকি। এত শোরগোল কেন তোলা হচ্ছে, জানি না।’’ সৈয়দ আলি শাহ গিলানি এবং মিরওয়াইজ উমর ফারুক— দুই হুরিয়ত নেতার গোষ্ঠীই পাক আমন্ত্রণকে স্বাগত জানিয়েছে। নেতাদের বক্তব্য, কাশ্মীর সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ভারত ও পাকিস্তান কখনওই একসঙ্গে শান্তির পথে হাঁটতে পারবে না। তবে একটি সূত্রের খবর, ইয়াসিন মালিক বলেছেন, আমন্ত্রণ গ্রহণ করা হবে কি না, তা দলের অন্দরে আলোচনার পরেই ঠিক করবেন তিনি।

পাক হাই-কমিশনের ঘোষণার পর আজ বিজেপির তরফে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘পাকিস্তান আমাদের অবস্থান জানে। তারা যদি কথা চায়, তা হলে আমাদের অবস্থানের কথা মাথায় রেখেই তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’’ তবে আসন্ন বৈঠক যে শীর্ষ নেতাদের বৈঠক নয়, সে কথাও মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে ওই বিবৃতিতে। এই প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বলছেন, মুখোমুখি আলোচনার প্রয়োজনীয়তা বরাবরই মেনেছেন মোদী। তাই সঙ্ঘ পরিবার পাকিস্তানের সঙ্গে কড়া দর কষাকষির পক্ষপাতী হলেও মোদী এই মুহূর্তে প্রশাসক হিসেবে নিজের ভূমিকাকেই গুরুত্ব দিতে বেশি আগ্রহী।

তাই প্ররোচনায় পা নয়, আস্থা শান্তি আলোচনাতেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন