পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ। —ফাইল চিত্র।
ভারতের অন্তত ছ’টি যুদ্ধবিমান নাকি গুলি করে নামিয়েছে পাকিস্তানি সেনা। দীর্ঘ দিন ধরেই এই দাবি করে আসছে তারা। এ বার সে দেশের মন্ত্রী মহসিন নাকভি দাবি করলেন, ছ’টি যুদ্ধবিমান ধ্বংসের ভিডিয়োও তাঁদের কাছে আছে। কিন্তু কোথায় ভিডিয়ো? কেন প্রকাশ্যে আনা হচ্ছে না? সে প্রশ্ন অবশ্য থেকেই গেল।
রবিবার লাহৌরে একটি সেমিনারে যোগ দিয়েছিলেন নাকভি। গত মে মাসে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে যে সেনা সংঘাত হয়েছিল, সেমিনারে সেই প্রসঙ্গে কথা বলেন মন্ত্রী। দাবি করেন, ভারতের পরিকল্পনা সম্বন্ধে তাঁরা আগে থেকেই অবগত ছিলেন। নাকভির কথায়, ‘‘আমাদের গোয়েন্দারা খুব ভাল কাজ করেছেন। ওঁদের প্রশংসা করা উচিত। ভারত কী ভাবে কী করতে পারে, আগে থেকেই আমরা তা জানতে পেরেছিলাম।’’ এর পর তিনি বলেন, ‘‘রেডার তথ্য থেকে আমরা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলাম যে, ভারতের যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছে। কিন্তু পাকিস্তান সেটা প্রথমেই ঘোষণা করে দেয়নি। স্পষ্ট প্রমাণের জন্য অপেক্ষা করা হয়েছিল। ছ’টি বিমান ধ্বংস হওয়ার ভিডিয়ো ফুটেজ আমরা হাতে পেয়েছি। বিমানগুলিকে গুলি করে নামানো হয়েছিল।’’
নাকভির এই দাবির পর থেকেই প্রশ্ন উঠছে, ভিডিয়ো কোথায়? কেন এখনও তা প্রকাশ করা হল না? পাকিস্তানের হাতে যদি সত্যিই ভারতীয় বিমান ধ্বংসের ভিডিয়ো থাকত, তবে কি এত দিন তা আড়ালে রাখা হত? ভারতের হামলায় পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ কোনও কাঠামো ধ্বংস হয়নি বলেও দাবি করেছেন পাক মন্ত্রী।
উল্লেখ্য, পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাতে যে ভারতের যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছে, তা মেনে নিয়েছিলেন ভারতের সেনা সর্বাধিনায়ক জেনারেল অনিল চৌহানই। তবে কতগুলি বিমান, সেই সংখ্যা তিনি স্পষ্ট করেননি। ছ’টি যুদ্ধবিমান ধ্বংসের যে দাবি পাকিস্তান করে আসছে, তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে এক বাক্যে তিনি বলে দেন, ‘‘সম্পূর্ণ ভুল তথ্য।’’ পরে ভারতের বায়ুসেনা প্রধান এপি সিংহ জানান, ভারতের হামলায় পাকিস্তানের ছ’টি বিমান ধ্বংস হয়েছে। তার মধ্যে পাঁচটিই যুদ্ধবিমান। এ ছাড়া একটি বড় আকারের সামরিক বিমান ধ্বংস হয়েছে। ৩০০ কিলোমিটার দূর থেকে হামলা চালানো হয়েছিল বলেও জানান বায়ুসেনাপ্রধান।
কিছু দিন আগে আমেরিকা সফরে গিয়ে পাক সেনাপ্রধান আসিম মুনির ভারতকে ঝাঁ চকচকে মার্সিডিজ়ের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। নিজের দেশকে বলেছিলেন পাথরভর্তি ট্রাক। এই দুইয়ের মধ্যে সংঘর্ষ হলে কে জিতবে, তা বুঝে নিতে বলেছিলেন মুনির। রবিবার লাহৌরের সেমিনার থেকে মুনিরের নেতৃত্বের প্রশংসা করেন নাকভি। তার পর মার্সিডি়জ় এবং ট্রাকের বিষয়ে মুনিরের কথাই নিজেও পুনর্ব্যক্ত করেন।
গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। সেই ঘটনায় পাকিস্তানকে দায়ী করে গত ৬ মে তাদের বিরুদ্ধে সেনা অভিযান চালায় ভারত। নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন সিঁদুর’। ভারতের হামলায় একাধিক পাক জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। এর পর টানা চার দিন দুই দেশের মধ্যে সংঘাত চলে। আপাতত সংঘর্ষবিরতি চললেও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এখনও তলানিতে।