হরিয়ানার একই পরিবারের সাত জনের মৃত্যু। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
মাসখানেক আগেই হরিয়ানার সাকেত্রিতে বাড়িভাড়া নিয়েছিল মিত্তল পরিবার। দু’টি ঘর নিয়ে থাকতেন পরিবারের সাত জন। বাড়ির মালিক মণীশ চৌধরির দাবি, পরিবারের সকলে খুবই ভদ্র ছিলেন। নির্ঝঞ্ঝাট, শান্ত পরিবার যে এই ভাবে ‘আত্মহত্যা’ করবে, তা ভাবতেই পারছেন না মণীশ। হরিয়ানার পঞ্চকুলায় একই পরিবারের সাত জনের মৃত্যুর খবরে হতবাক তিনিও।
মিত্তলদের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকেই বার বার মণীশের স্মৃতিতে ভেসে উঠছে ওই পরিবারের বাচ্চাগুলোর কথা। মণীশ বলেন, ‘‘প্রতি দিন দেখতাম বাচ্চাগুলো পাশের পার্কে খেলতে যেত। সব সময় হেসে হেসে কথা বলত।’’ সোমবার সকালেও মিত্তল পরিবারের সঙ্গে দেখা হয়েছিল মণীশের। তাঁর কথায়, ‘‘সকাল ৯টা নাগাদ ওঁরা আমায় বলেছিল, সকলে মিলে কয়েক দিনের জন্য ঘুরতে যাচ্ছেন। তিন দিন থাকবেন না। খাবার জল ভরে রাখতেও বলেছিলেন।’’
সকালবেলা হাসিখুশি পরিবারকে নিয়ে গাড়িতে করে বেরিয়েছিলেন প্রবীণ মিত্তল। সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী, বাবা, মা এবং সন্তানেরা। কিন্তু রাতের মধ্যেই যে এমন ঘটনা ঘটে যাবে, তা কল্পনাও করতে পারেননি মণীশ। তাঁর কথায়, ‘‘প্রবীণকে রোজই দেখতাম সকালে কাজে বার হচ্ছে। মাথায় যে এত ঋণের বোঝা তা দেখে বোঝার উপায় ছিল না। বাড়ি ভাড়া দেওয়ার সময় অগ্রিমও নিইনি। কারণ, ওদের দেখে ভদ্রই মনে হয়েছিল।’’
সোমবার রাতের বিভীষিকার কথা বলতে গিয়ে বার বার কেঁপে উঠছেন হরিয়ানার পঞ্চকুলার সেক্টর ৪৫-এর বাসিন্দা হর্ষিত রানা। রাত তখন ১০টা বাজে। রাতের খাওয়া সেরে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে তিনি দেখেন অদূরেই একটা গাড়ি দাঁড় করানো। খানিক দূর থেকে দেখেই মনে হয়েছিল, গাড়ির মধ্যে লোক রয়েছেন! সন্দেহ হওয়ায় এগিয়ে যান। দেখতে পান, অচৈতন্য অবস্থায় গাড়ির মধ্যে বেশ কয়েক জন পড়ে রয়েছেন। গাড়ির পিছনের দিকে মাথা ঝুঁকিয়ে বসে আছেন এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘‘আর পাঁচ মিনিটেই মরে যাব। অনেক ঋণের বোঝা আমার কাঁধে। সাহায্য করার কেউ নেই!’’
নিজের বাড়ির সামনেই যে এমন ঘটনা ঘটেছে, তা এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না হর্ষিত। তাঁর কথায়, ‘‘গাড়ির পিছনে বসে থাকা ব্যক্তি জানান, সপরিবার ৫ নম্বর সেক্টরে ধীরেন্দ্র শাস্ত্রীর ‘কথামৃত’ শুনতে গিয়েছিলেন। কিন্তু ফেরার পথে কোনও হোটেল খালি পাননি তাই গাড়িতেই রাত কাটাচ্ছেন তাঁরা।’’ ওই ব্যক্তির কথা বিশ্বাস হয়নি হর্ষিত এবং অন্য প্রতিবেশীদের। হর্ষিতের কথায়, ‘‘গাড়ির ভিতরে ছ’জন নিথর হয়ে পড়ে রয়েছেন।’’
হর্ষিতের কথায়, ওই ব্যক্তি তাঁদের বলেছিলেন, ‘‘ধারদেনায় ডুবে গিয়েছি। কেউ আমাদের সাহায্য করেনি। আমি মরতে চাই।’’ তার পরই জ্ঞান হারান ওই ব্যক্তি। তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।