মৃত ছাত্র অর্ণব খাইরে। ছবি: সংগৃহীত।
কলেজে যাচ্ছিলেন বিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র অর্ণব খাইরে। ঠাণে থেকে মুলুন্দে লোকাল ট্রেনেই নিত্য দিন যাতায়াত করতেন তিনি। কলেজে যাওয়ার জন্য মঙ্গলবারেও ট্রেনে উঠেছিলেন অর্ণব। প্রথম শ্রেণির টিকিটের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় তিনি দ্বিতীয় শ্রেণির কামরায় উঠেছিলেন। ভিড়ে ঠাসা ছিল ট্রেন। একটু অসুবিধা হওয়ায় সামনের সহযাত্রীকে হিন্দিতে বলেছিলেন, ‘‘দাদা, একটু সরে দাঁড়াবেন?’’ এ কথা শুনেই সহযাত্রী চটে যান।
হিন্দিতে কথা? এত বড় দুঃসাহস! অভিযোগ, তার পরই শুরু হয় চড়-থাপ্পড়। অর্ণবের বাবা জিতেন্দ্র খাইরে বলেন, ‘‘ছেলে আমাকে জানায়, মরাঠিতে কেন কথা বলেনি, তার জন্য যাত্রীরা ওকে খুব মারধর করেছে। প্রথমে এক জন, তার পর একে একে বেশ কয়েক জন সহযাত্রী অর্ণবকে মারধর করেন। গালিগালাজ করেন।’’ জিতেন্দ্র আরও বলেন, ‘‘ছেলে আমাকে আরও জানায় যে, সহযাত্রীরা তাঁকে মেজাজ দেখিয়ে বলছিলেন, ‘মরাঠিতে কথা বলছিস না কেন? লজ্জা করে না?’’’
অর্ণবের বাবা জানান, সহযাত্রীদের হাতে প্রহৃত হয়ে তাঁর ছেলে এত ভয় পেয়ে গিয়েছিলন যে, মুলুন্দে ট্রেন থেকে নামতে পারেননি। অন্য একটি স্টেশনে নেমে আবার ঠাণেতে চলে যান। তার পর অন্য একটি ট্রেন ধরে আবার কলেজের উদ্দেশে রওনা হন। জিতেন্দ্রর কথায়, ‘‘ট্রেন থেকেই ছেলে আমাকে ফোন করে বলে, বাবা আমার শরীর খুব খারাপ লাগছে। তার পর গোটা ঘটনাটি জানায়। কলেজে গিয়েও কোনও ক্লাস না করেই বাড়ি ফিরে আসে।’’ জিতেন্দ্র আরও জানিয়েছেন, ছেলের মানসিক পরিস্থিতি অনুভব করতে পেরে ওকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন। বাড়ি ফিরে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে যাবেন বলেও অর্ণবকে জানিয়েছিলেন। কিন্তু কাজ থেকে ফিরে অর্ণবকে দেখতে পাননি। তাঁর ঘরের দরজা বন্ধ ছিল। ডাকাডাকি করে সাড়া না পেয়ে প্রতিবেশীদের ডাকেন জিতেন্দ্র। তার পর ঘরের দরজা ভেঙে ঢুকে দেখতে পান কম্বলে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন অর্ণব। তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এই ঘটনায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন অর্ণবের বাবা। অ্যাসিসট্যান্ট কমিশনার অফ পুলিশ (এসিপি) আধিকারিক কল্যাণ গেটে জানিয়েছেন, ঘটনার দিনের কোনও সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া যায় কি না খতিয়ে দেখা হচ্ছে। রেলপুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। অভিযুক্তদের দ্রুত চিহ্নিত করে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।