আলোচনা: একটি সাংবাদিক বৈঠকে মেনকা গাঁধী ও অরুণ জেটলি। শুক্রবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।
ফের আধার বিতর্কে কেন্দ্র। এ বার জাতীয় পুষ্টি মিশনের জন্য সদ্যোজাতদেরও আধার কার্ড করানো নিয়ে।
রীতিমতো এক বছর ধরে প্রস্তুতি নেওয়ার পরে আজ গুজরাত নির্বাচনের মুখে জাতীয় পুষ্টি মিশনের ঘোষণা করল কেন্দ্র। লক্ষ্য, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের মাধ্যমে কিশোরী, গর্ভবতী, সদ্য-প্রসূতি ও সদ্যোজাতদের ঠিক মতো পুষ্টিকর খাবার জোগানো। আজ আনুষ্ঠানিক ভাবে এই প্রকল্পের ঘোষণা করার পরে নারী ও শিশু কল্যাণমন্ত্রী মেনকা গাঁধী বলে বসেন, ‘‘চুরি রুখতে এই প্রকল্পেও মা ও সদ্যোজাতদের আধার কার্ড আবশ্যক। আধার কার্ডের ভিত্তিতেই সরকারি সাহায্য পাবে মা ও শিশু।
কথাটা শোনা মাত্রই সভায় শুরু হয় গুঞ্জন। আধার তৈরির দায়িত্বে থাকা ইউআইডিএআই-এর মতে পাঁচ বছরের আগে কোনও শিশুর চোখ ও হাতের ছাপ নেওয়া যায় না। অথচ মন্ত্রী বলছেন সদ্যোজাতের আধার কার্ড! বিতর্ক বাড়তে থাকায় অস্বস্তিতে পড়ে যাওয়া মন্ত্রীকে উদ্ধারে এগিয়ে আসেন মন্ত্রকের সচিব রাকেশ শ্রীবাস্তব।
সচিব জানান, সদ্যোজাত নয়, ছ’মাস বয়স হলে নবজাতককে ১২ অঙ্কের একটি নম্বর দেওয়া হবে। তা যুক্ত থাকবে মায়ের আধারেরর সঙ্গে। সেই আধার কার্ডের ভিত্তিতেই মা এবং সন্তান দু’জনেরই উপরেই নজরদারি সম্ভব হবে। শ্রীবাস্তব এ-ও জানান যে, বর্তমান নিয়মে পাঁচ বছর হওয়ার পরে আধারের জন্য তথ্য দেওয়া যেতে পারে। জাতীয় পুষ্টি মিশন চালু হওয়ায় সেটি এগিয়ে তিন বছর করার কথা ভাবা হয়েছে।
নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রক জানাচ্ছে, মা ও শিশুর মৃত্যুর হার খুব বেশি এমন ৩১৫টি জেলায় প্রাথমিক ভাবে এই প্রকল্প চালু করা হচ্ছে চলতি বছরে। বয়ঃসন্ধির মেয়ে থেকে মা হওয়া মহিলা— যাঁরাই অপুষ্টিতে ভুগছেন, সকলেই এই প্রকল্পের সুবিধে পাবেন। প্রথমিক ভাবে মঞ্জুর হয়েছে ৯,০৪৬ কোটি টাকা। প্রকল্পের লক্ষ্য, প্রতি বছর ২ শতাংশ হারে দেশে অপুষ্টি কমানো। একই সঙ্গে শিশুদের খর্ব ও কৃশ হওয়া কমানোও এই প্রকল্পের লক্ষ্য। প্রধানমন্ত্রীর দফতর জানিয়েছে, ছ’মাস অন্তর খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রকল্পটির অগ্রগতি খতিয়ে দেখবেন।
গত কালও মোদী বলেছেন, ‘‘আধার চালুর আগে জন্ম হয়নি এমন মেয়ের নামেও বিধবা ভাতা তোলা হত।’’ মেনকা আজ জানান, সরকারি অর্থ যাতে ভুয়ো ব্যক্তির পিছনে খরচ না হয়, সে জন্যই এই প্রকল্পে আধারের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘অসমে সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গিয়েছে, সে রাজ্যে তিন লক্ষ ভুয়ো শিশুর নাম রয়েছে। এই অপচয় রুখতেই আধারের মাধ্যমে সরকারি সাহায্য দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কিন্তু যে শিশুদের আধার নেই, তারা কি তবে সরকারের সুবিধে থেকে বঞ্চিত হবে?
সচিব শ্রীবাস্তব জানান, ‘‘আধার না থাকলেও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা কোনও শিশুকে ফেরত পাঠাবেন না। সে-ও সরকারি সাহায্য পাবে। তবে আধার করানোর জন্য অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের উৎসাহ দেবে কেন্দ্র। নতুন আধার করালে পাঁচশো টাকা করে পাবেন তাঁরা।’’