দুুর্ঘটনা এড়াতে তহবিলের টাকা দ্রুত দিয়ে দিক কেন্দ্র, দাবি রেলের

বাকি কাজ পরে হলেও চলবে। আগে গড়া হোক সুরক্ষা তহবিল। দুর্ঘটনা কমাতে কেন্দ্রকে এই পরামর্শ দিল রেল মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:৫১
Share:

বাকি কাজ পরে হলেও চলবে। আগে গড়া হোক সুরক্ষা তহবিল। দুর্ঘটনা কমাতে কেন্দ্রকে এই পরামর্শ দিল রেল মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

Advertisement

নীতীশ কুমার রেলমন্ত্রী থাকাকালীন একটি ‘সেফটি ফান্ড’ গঠন করা হয়েছিল। তারপর কেটে গিয়েছে প্রায় এক দশক। একের পর এক রেল বাজেটে মন্ত্রীরা সুরক্ষা তহবিল চেয়ে তদ্বির করলেও, টাকার অভাবে তা গড়া সম্ভব হয়নি। কিন্তু সাম্প্রতিককালে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রেল দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় অবিলম্বে ১ লক্ষ কোটি টাকার ‘রাষ্ট্রীয় রেল সংরক্ষা কোষ’ (আরআরএসকে) নামে ওই নিরাপত্তা তহবিল গঠনের সুপারিশ করেছে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। কমিটির পর্যবেক্ষণ, অন্য কাজ পরে হলেও চলবে। কিন্তু আগে সুরক্ষার জন্য টাকা মঞ্জুর করুক কেন্দ্র। বিষয়টি নিয়ে সুদীপবাবু বলেন, ‘‘নিরাপত্তা খাতে অর্থ মঞ্জুর করার বিষয়টির সঙ্গে কখনওই আপস করা ঠিক নয়। রেলের নিরাপত্তা খাতে টাকা দেওয়ার বিষয়টি কেন্দ্রের অগ্রাধিকার তালিকায় থাকা উচিত।’’ কমিটি বলছে, প্রয়োজনে যে অর্থ মঞ্জুর হচ্ছে, তা আগে নিরাপত্তা খাতে খরচ করুক রেল। তারপর অন্য কাজে। কমিটির পরামর্শ, সুরক্ষা খাতে অর্থ দেওয়ার প্রশ্নে দরকারে অর্থ মন্ত্রকের একেবারে শীর্ষ পর্যায়ে যোগাযোগ করুক রেল মন্ত্রক।

নিরাপত্তা সংক্রান্ত সংসদীয় রিপোর্টে রেল সুরক্ষার যে খামতিগুলো তুলে ধরেছে কমিটি, তা হল:

Advertisement

কর্মীর অভাব

রেলের সুরক্ষার বিষয়গুলো দেখার জন্য যেখানে ৭,৪৬,৬৭৬ জন থাকার কথা, সেখানে ১,২২৭৩৬টি পদ খালি রয়েছে বলে জেনেছে কমিটি। যা ওই খাতে কর্মী সংখ্যার প্রায় ১৬ শতাংশ। কর্মী কম থাকায় রক্ষণাবেক্ষণ ও সুরক্ষাজনিত বিভিন্ন কাজে গাফিলতি ক্রমশ বাড়ছে। কমিটির রিপোর্ট বলছে, মন্ত্রকের অপদার্থতার জন্য ওই পদগুলোতে কর্মী নিয়োগ করতে ব্যর্থ হয়েছে রেল। এমনকী, ফাঁকা রয়েছে প্রায় ৭ হাজার রেল পুলিশের পোস্টও। ফলে চুরি-ছিনতাইও বাড়ছে রেলে। যথেষ্ট মহিলা রেল পুলিশ না থাকায় কমছে না মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধও।

ট্র্যাক আধুনিকীকরণ

গত মাসের ইনদওর-পটনা এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনাই শুধু নয়। কমিটির রিপোর্ট বলছে, গত দশ বছরে রেলে দুর্ঘটনার পিছনে দ্বিতীয় বড় কারণ হল, খারাপ ট্র্যাক বা লাইন। গত এক বছরে (২০১৫-১৬) যে ৭৮টি দুর্ঘটনা হয়েছে, তার মধ্যে ৬৫টির পিছনে রয়েছে খারাপ বা পুরনো লাইন। প্রতি বছর পাঁচ হাজার কিলোমিটার লাইন পাল্টানোর লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। এ বছর পাল্টানো হয়েছে ২৭০০ কিলোমিটার। কমিটির মতে, লাইন পাল্টানোর প্রশ্নে আরও গতি আসা উচিত। না হলে দুর্ঘটনাও কমবে না।

এলএইচবি কোচ

বর্তমানে রাজধানী, শতাব্দী বা দুরন্তের মতো দ্রুতগতির ট্রেনে এই আধুনিক কামরা ব্যবহৃত হয়। সাধারণত কামরাগুলোর গঠনশৈলীর জন্য দুর্ঘটনার সময়ে ক্ষয়ক্ষতি কম হয়। কমিটির পর্যবেক্ষণ, ইনদওর-পটনা এক্সপ্রেসে এলএইচবি কামরা থাকলে ক্ষয়ক্ষতি কম হতো। অবিলম্বে তাই সব এক্সপ্রেস ট্রেনে পুরনো কামরা পাল্টে এলএইচবি কামরা লাগানোর সুপারিশ করেছে কমিটি।

কাজের সময়

সাধারণত রেলকর্মীদের ১০ ঘণ্টা কাজের সময় বেঁধে দেওয়া থাকলেও, অধিকাংশ সময়ে কর্মীর অভাব থাকায় অনেককেই অতিরিক্ত কাজ করতে হয়। বাড়তি কাজের চাপে সব থেকে বেশি সমস্যায় পড়তে হয় চালকদের। এক্সপ্রেস ট্রেনে যখন চালকদের প্রতি মিনিটে এক-একটি সিগন্যালের রং দেখে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, তখন অতিরিক্ত কাজের কারণে মানসিক ক্লান্তির শিকার হন চালকেরা। দুর্ঘটনার এটিও একটি বড় কারণ।

সুরক্ষা তহবিল

রেল সুরক্ষার প্রশ্নে ১ লক্ষ কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় রেল সংরক্ষা কোষ গড়ার জন্য প্রস্তাব রয়েছে। সেই প্রস্তাব যাতে দ্রুত দিনের আলো দেখে, তার জন্য তদ্বির করেছে কমিটি। ফি বছর যাতে ওই খাতে কেন্দ্রীয় অর্থ বরাদ্দের ব্যবস্থা থাকে, তারও সুপারিশ করা হয়েছে রিপোর্টে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন