আরজেডি বিধায়ক দলের নেতা নির্বাচিত হওয়ার পরে তেজস্বী যাদব। —নিজস্ব চিত্র।
বাড়ির অন্দরে ঝড় থামেনি। বাড়ির বাইরে শুরু হয়েছে কর্মী-সমর্থকদের বিক্ষোভ। দলের পুরনো নেতারা মুখ খুলে বাড়ির কর্তা-কর্ত্রীকে ‘ধৃতরাষ্ট্র-গান্ধারী’ না হওয়ার আর্জি জানাচ্ছেন! ঘরে-বাইরে এমন সঙ্কটের মুখে বিপর্যয়ের পিছনে নির্বাচন কমিশনের হাত দেখতে শুরু করল আরজেডি! মাত্র দু’দিন আগেই যারা বিহারে ভোটের ফলাফল মেনে নিয়ে বলেছিল, ‘পরাজয়ে গ্লানি নেই, জয়ে অহঙ্কার নেই’।
ভাই তেজস্বী এবং তাঁর দুই সহচর সঞ্জয় যাদব ও রামিজ় নিমত খানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে পটনা ছেড়ে চলে গিয়েছেন লালুপ্রসাদ যাদব ও রাবড়ী দেবীর কন্যা রোহিণী আচার্য। রাজনীতির সঙ্গে সংস্রব ত্যাগ করার ঘোষণাও করেছেন। ভোটের ফলপ্রকাশের পরে পটনার সার্কুলার রোডে রাবড়ীর বাড়িতে প্রথম ঘরোয়া বৈঠকে তেজস্বী-রোহিণী তুলকালামের রেশ এখনও পুরোদস্তুর বহাল। রাবড়ীর ভাই সাধু যাদব, লালুপ্রসাদের পুরোনো সঙ্গী শিবানন্দ তিওয়ারিরা তেজস্বীর বাবা-মাকে ‘সক্রিয়’ হতে বলেছেন। এরই মধ্যে পটনায় সোমবার তেজস্বীর সরকারি বাসভবনে আরজেডি-র বিধায়ক দলের বৈঠক থেকে তাঁকেই ফের পরিষদীয় দলের নেতা বেছে নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ তেজস্বীই ফের বিহার বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা হবেন। কিন্তু সেই বৈঠকের পরে রাবড়ীর বাড়ির সামনে জড়ো হয়ে সঞ্জয়দের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন আরজেডি-র কর্মী-সমর্থকেরা। বিক্ষোভকারীদের দাবি, ‘বাইরের লোকে’র হাত থেকে দলকে মুক্ত করতে লালুই উদ্যোহী হোন।
তেজস্বীর সঙ্গী সঞ্জয় যাদবকে নিয়ে গোলমাল তুঙ্গে। তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতে আরজেডি-র নবনির্বাচিত বিধায়কেরা। —নিজস্ব চিত্র।
সাধু মামা এবং রাবড়ীদের ‘ত্যাজ্য’ পুত্র তেজপ্রতাপ যাদব রোহিণীর পক্ষে দাঁড়ানোর পরে তিনি বলেছিলেন, বাবা-মা এবং বোনেরা তাঁর পাশেই আছেন। তবে সূত্রের খবর, ঘোর সঙ্কটের সময়ে ভাই তেজস্বীর পক্ষ ছাড়েননি লালুর বড় মেয়ে, সাংসদ মিসা ভারতী। পটনার পোলো রোডে বিরোধী দলনেতার সরকারি আবাসে এ দিনই পর্যালোচনা বৈঠকে ডাকা হয়েছিল আরজেডি-র বরিষ্ঠ নেতা, বিধায়ক ও পরাজিত প্রার্থীদের একাংশকে। লালু, রাবড়ী ও মিসা সেখানে ছিলেন। বৈঠকে সঞ্জয় হাজির থাকলেও রামিজ়কে দেখা যায়নি। সূত্রের খবর, মিসা মত দিয়েছেন, বিহারে ২০১০ সালেও বড় নির্বাচনী বিপর্যয় সামলে আরজেডি ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। এখন পরস্পরের প্রতি দোষারোপ না-করে একজোট হয়ে লড়াই করার সময়। তেজস্বীকেই বিধায়ক দলের নেতা নির্বাচনের পরে আরজেডি-র প্রবীণ নেতা জগদানন্দ সিংহের দাবি, ‘‘অনেক কেন্দ্রেই বৈদ্যুতিন ভোট-যন্ত্রে ২৫ হাজার করে ভোট আগে থেকে মজুত করা ছিল! তার পরেও আমাদের সৌভাগ্য যে, ২৫টা আসনে জিততে পেরেছি!’’ আর এক নেতা সঞ্জীব কুমার দাবি করেছেন, ‘‘মহিলাদের ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া এনডিএ-র জয়ের একটা কারণ। কিন্তু বিভিন্ন বিধানসভা এলাকায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার করে ভোট বেড়েছে। এটার তদন্ত হওয়া উচিত।’’
সাধু, শিবানন্দেরা অবশ্য লালু পরিবারকেই ‘অন্তর্তদন্ত ও আত্মসমীক্ষা’ করতে বলছেন। সাধুর মতে, ‘‘দিদি-জামাইবাবুকে ওরা (তেজস্বী ও সঙ্গীরা) অসহায় করে তুলেছে। শরীর ভাল নয় বলে লালুজি কিছু বলতে পারছেন না। বাইরের লোক যারা ছড়ি ঘোরাচ্ছে, তাদের এখনই বাক্স-প্যাঁটরা বেঁধে বেরিয়ে যাওয়া উচিত! সেটা না-করে তেজস্বীকে ফের নেতা করার পরিণাম ঠিক হবে কি না, জানি না।’’ আরজেডি-র প্রাক্তন সহ-সভাপতি শিবানন্দ বলেছেন, ‘‘লালুজি এত দিন ছেলের জন্য রাজসিংহাসন গরম রাখতে ব্যস্ত ছিলেন। তেজস্বী লালুজি’রই আর একটা রূপ, একই রকম অহঙ্কারে পূর্ণ! হিন্দি বলয়ে বিহারই একমাত্র রাজ্য যেখানে বিজেপি কখনও নিজেরা সরকার গড়েনি। সেই স্বপ্ন পূরণের চৌকাঠে তারা পৌঁছে গিয়েছে এখন, আর লালুজিরা পুত্রস্নেহে অন্ধ হয়ে থাকছেন!’’ ভোটের আগে টিকিট না-পেয়ে ক্ষুব্ধ আরজেডি নেতা মদন শাহ রাবড়ীর বাড়ির সামনে জামা ছিঁড়ে রাস্তায় গড়াগড়ি খেয়েছিলেন। সেই মদনও এখনও বলছেন, ‘‘লালুজি তো নয়ই, অনেক বার মিনতি করার পরেও রাবড়ী দেবী এক বার দেখা করে কথা বলেননি। সঞ্জয়েরা যা বোঝাচ্ছে, সে রকমই হচ্ছে।’’
এরই মধ্যে সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘নির্বাচনের সময়ে বা তার আগে এমন কিছু ঘটনা বিহারে ঘটেছে, যা ‘মডেল’ হয়ে গেলে ভারতে নির্বাচন প্রহসনে পরিণত হবে। শেষ দু’মাসে ৩০ হাজার কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে, ভোটের আগে বা ভোট চলাকালীন বিভিন্ন প্রকল্পের নামে তিন-সাড়ে তিন কোটি মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো হয়েছে। এ ভাবে চলতে থাকলে নির্বাচনের স্বচ্ছতা থাকবে না, ক্ষমতাসীন দলকে সরানোও সমস্যা হবে।’’ তাঁর দাবি, নির্বাচনের ছয় মাস বা এক বছর আগে কেউ এমন কোনও প্রকল্প ঘোষণা করতে পারবে না— এমন নিয়ম করতে হবে।
প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর
সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ
সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে