সামাজিক প্রকল্পে নাগরিকদের সুবিধা না পাওয়াটা আধার আইনকে ‘অসাংবিধানিক’ বলার ভিত্তি হতে পারে না। আধার নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আপত্তির প্রেক্ষিতে আজ এই মন্তব্য করেছে সুপ্রিম কোর্ট। রাজ্যের তরফে আইনজীবী কপিল সিব্বল দাবি করেন, আধার না থাকায় অনেক নাগরিককে সামাজিক প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে। কোর্ট যদিও বলেছে, আধার না থাকলেও সামাজিক প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না নাগরিকদের। সে ক্ষেত্রে রেশন কার্ড, ভোটার কার্ডের মতো নাগরিকদের অন্য পরিচয়পত্র ব্যবহার করতে হবে।
গত কালই সিব্বলের কাছে কোর্ট জানতে চেয়েছিল, আধারের মাধ্যমে এক দেশ— এক পরিচয়পত্র হলে অসুবিধা কোথায়? সিব্বল বলেছিলেন, নাগরিকত্বের পরিচয় শুধু আধার নম্বরে আটকে থাকবে, তা ঠিক নয়। কোর্ট আজ ফের জানিয়ে দিল, আধার না থাকার কারণে কিংবা আধারের বৈধতা প্রমাণিত না হলে, নাগরিকরা যদি প্রকল্পের সুবিধা না পেয়ে থাকেন, তার জন্য আধার আইনকে অবৈধ বলা সম্ভব নয়। এমনকী, আধার ছাড়াও নাগরিকদের সুবিধা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী আদেশের আর্জি জানিয়েছিলেন সিব্বল। কোর্ট আজ তাতেও রাজি হয়নি। তবে আধার না থাকলে সামাজিক প্রকল্পের সুবিধা নাগরিকদের কাছে পৌঁছে দিতে নির্দেশ দিয়েছে প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের বেঞ্চ। অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল অবশ্য দাবি করেন, সরকার আধার কার্ড বানানোর সময়সীমা ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে। আর আধার না থাকলেও কাউকে সামাজিক প্রকল্পের সুবিধা থেকে বাদ দেওয়া হয়নি।
সিব্বল এ দিন ২০১৭-র ১৯ ডিসেম্বর ক্যাবিনেট সচিবের একটি নোটকে তুলে ধরেন। যেখানে বলা হয়েছে, মন্ত্রকগুলিকে প্রকল্পের সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে আধারের বিকল্প ব্যবস্থা নিয়েও এগোতে হবে। সিব্বলের যুক্তি, সরকার যখন এই প্রক্রিয়া এগোচ্ছে, তখন কোর্ট অন্তর্বর্তী নির্দেশ দিক, যাতে আধার ছাড়াও নাগরিকরা সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হয়। বিচারপতি এ কে সিক্রি অ্যাটর্নি জেনারেলকে বলেন, আধার ছাড়া কোন কোন পরিচয়পত্র ব্যবহার করে সুবিধা পাওয়া যায়, গরিব মানুষ তা না-ও জানতে পারেন। বিষয়টি নিয়ে সরকারেরই প্রচার করতে হবে।
শুনানিতে সিব্বল বলেন, আমেরিকার সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, মোবাইল আসলে ‘ফুট প্রিন্ট’। ফলে ফোন কেউ দাবি করতে পারে না। এ কথা শুনেই বিচারপতি এ কে সিক্রির বলেন, ‘‘শুধু স্ত্রী ছাড়া!’’ বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘স্ত্রী যদি মোবাইল চায়, দিতেই হবে। আর কোনও উপায় নেই। গোপনীয়তার আইন নিয়ে তর্ক সেখানে চলে না!’’ আধার নিয়ে লোকসভাতেও সরকার অবস্থান স্পষ্ট করেছে। অরুণ জেটলি দাবি করেছেন, আধার-এ নাগরিকদের গোপনীয়তা বজায় রাখার ক্ষেত্রে সরকার দায়বদ্ধ। তবে ইউপিএ আমলে আধার আইনে গোপনীয়তার দিকটিতে নজর দেওয়া হয়নি।