পেট্রোল না পেয়ে অগ্নিগর্ভ ত্রিপুরা

পাম্পে পেট্রোল না পেয়ে অগ্নিগর্ভ ত্রিপুরা। জনরোষ নামল রাস্তায়। অবরোধ, আগুন, ভাঙচুর, বিক্ষোভে ত্রস্ত রাজ্য সরকার।

Advertisement

আশিস বসু ও শীর্ষেন্দু সী

আগরতলা ও করিমগঞ্জ শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৬ ০৩:২৯
Share:

পেট্রোল পাম্প শুকনো খটখটে। প্রতিবাদে পাম্পের সামনের রাস্তা অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে দিল গ্রাহকরা। শুক্রবার আগরতলায়। ছবি: বাপি রায়চৌধুরী।

পাম্পে পেট্রোল না পেয়ে অগ্নিগর্ভ ত্রিপুরা। জনরোষ নামল রাস্তায়। অবরোধ, আগুন, ভাঙচুর, বিক্ষোভে ত্রস্ত রাজ্য সরকার।

Advertisement

ত্রিপুরায় পেট্রোল-ডিজেলের অভূতপূর্ব সঙ্কটের জেরে তৈরি হওয়া তীব্র জনরোষের দিকে তাকিয়ে আজ তড়িঘড়ি সাংবাদিক বৈঠক ডেকে রাজ্য সরকারের অবস্থান বোঝানোর চেষ্টা করলেন তিন মন্ত্রী।

পেট্রোলের ‘রেশনিং’, জোড়-বিজোড় সংখ্যার গাড়িতে পেট্রোল সংগ্রহের মতো সরকারি পদক্ষেপের কথা ফের জানালেন তাঁরা। একইসঙ্গে স্বীকার করে নিলেন, সে সব করার পরও দু’সপ্তাহ ধরে পেট্রোল-ডিজেলের সঙ্কট কাটানো যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় রাজ্য সরকার কী কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তা জানাতে এ দিন আগরতলায় ত্রিপুরা সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানালেন খাদ্যমন্ত্রী ভানুলাল সাহা, পূর্তমন্ত্রী বাদল চৌধুরী ও পরিবহণ মন্ত্রী মানিক দে। তাঁরা কার্যত কাঠগড়ায় তুললেন কেন্দ্রীয় সরকারকেই। এ দিন রাত পর্যন্ত ভানুলালবাবুর বাড়ির সামনে যুব কংগ্রেস ও এলএসইউআইয়ের কর্মী-সমর্থকরা ধর্না-বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। তাঁদের বোঝাচ্ছেন জেলাশাসক ও পুলিশ সুপার। এলাকায় বিশাল পুলিশ বাহিনীও মোতায়েন করা হয়েছে।

Advertisement

বাদলবাবুর ব্যাখ্যা— ত্রিপুরা সংলগ্ন অসমের লোয়ারপোয়ায় বেহাল ৪৪ নম্বর জাতীয় সড়কই এই পেট্রোল সঙ্কটের মূল কারণ। ওই রাস্তা দ্রুত মেরামত করার জন্য কেন্দ্রের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে। কিন্তু তার পরও কোনও কাজ হয়নি বলে অভিযোগ বাদলবাবুর। তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘দিকে দিকে অবরোধ, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটছে। এ সবের পিছনে রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি রয়েছে।’’

সেই অভিসন্ধি কী? তিন মন্ত্রীর অভিযোগ, রাজ্যে ব্রডগেজ ট্রেনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগে এখানে অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা চলছে। তবে তার পিছনে কারা রয়েছে, তা স্পষ্ট করেননি কেউ-ই। ভানুবাবু বলেন, ‘‘যারা অশান্তি ছড়াতে চাইছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি পথে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’

পেট্রোল-ডিজেলের এই সঙ্কটের জন্য রাজ্য সরকারকেই দায়ী করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। দলের রাজ্য সভাপতি রতন চক্রবর্তীর প্রশ্ন— সেনাবাহিনীকে দিয়ে ৪৪ নম্বর জাতীয় সড়ক মেরামতির অনুরোধ কেন কেন্দ্রকে করেনি রাজ্য সরকার? একই সুরে রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করেছে বিজেপিও। দলের রাজ্য সভাপতি বিপ্লব দেব বলেন, ‘‘১০ বছর ধরে রাজ্য সরকার কী করছিল?’’ প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি বীরজিৎ সিনহা অবশ্য এই পরিস্থিতির জন্য রাজ্য সরকারকে দায়ী করতে রাজি নন। তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রের উদাসীনতার জন্যই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’’

এ দিন খোয়াই, বিশালগড়, অসম-আগরতলা জাতীয় সড়কের বিভিন্ন জায়গায় পেট্রোল-পাম্পের সামনে পথ অবরোধ করা হয়েছে। চলেছে ভাঙচুর। রাস্তায় রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যা কমলেও, ভিড় জমেছে পেট্রোল-পাম্পের সামনে। পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে আগরতলার কয়েকটি স্কুল আগামী কাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পঠনপাঠন বন্ধের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে।

রাজ্যবাসীর অভিযোগ, কয়েকটি এলাকায় পাম্পে তেল না মিললেও, কাছেই অবাধে চলছে পেট্রোলের কালোবাজারি। ১৮০-২০০ টাকায় এক লিটার পেট্রোল বিক্রি হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে প্রশাসন কী ব্যবস্থা নিয়েছে? ভানুলালবাবুর জবাব, ‘‘কেউ পাম্প থেকে পেট্রোল কিনে যদি কালোবাজারি করে, আমরা কী করতে পারি?’’ তিনি আরও জানান, অসমের করিমগঞ্জে রাস্তা বেহাল থাকায় প্রতি দিনের পেট্রোল চাহিদার মাত্র ৫০ শতাংশ আসছে ত্রিপুরায়।

অন্য দিকে, করিমগঞ্জের চূড়াইবাড়ির রাস্তা এখনও যান চলাচলের অযোগ্য। করিমগঞ্জ জেলা প্রশাসনের উপর প্রতি দিনই ত্রিপুরা সরকারের তরফে রাস্তা মেরামতির অনুরোধ জানানো হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে এ দিন চূড়াইবাড়ি পরিদর্শনে যান করিমগঞ্জের জেলাশাসক মনোজকুমার ডেকা। খাসিয়াপুঞ্জি থেকে চূড়াইবাড়ি পর্যন্ত ছবিটা ছিল একই। হাহাকার লরি চালকদের। দিনে কোনওমতে ১০-১৫টি গাড়ি ত্রিপুরায় ঢুকছে। কিন্তু আটক শতাধিক গাড়ি। শুধু ত্রিপুরা কেন, চূড়াইবাড়িতেও জিনিসের দাম আগুন। আটকে থাকা গাড়ির চালকদের অনেকের হাতের টাকাও ফুরিয়ে গিয়েছে। করিমগঞ্জের জেলাশাসককে সে কথা জানান অনেক চালক। জেলাশাসকের সঙ্গে ছিলেন এনএইচ ডিভিশনের এসডিও মোহিত দেব। জেলাশাসক জানতে চান— কেন জেসিবি যন্ত্র দিয়ে কাদায় আটকে থাকা ট্রাক সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে না।জেলাশাসকের সফরে কোনও লাভ হবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান চালকরা। তাঁদের অভিযোগ, করিমগঞ্জের জেলাশাসক অনেক বার চূড়াইবাড়িতে এসেছেন। কিন্তু তাতে কোনও কাজ হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন