India US Trade

‘ভারত-মার্কিন আলোচনা চলছে’, ফের বললেন বাণিজ্যমন্ত্রী, ট্রাম্পের ‘দেরি হয়ে গিয়েছে’ মন্তব্যের পরও আশাবাদী ভারত!

সোমবার ভারতীয় পণ্যের উপর জরিমানা-সহ ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পক্ষে আবার সওয়াল করেন ট্রাম্প। গত কয়েক দশক ধরে চলা নয়াদিল্লি-ওয়াশিংটনের বাণিজ্যিক সম্পর্ককে ‘একতরফা বিপর্যয়’ বলে চিহ্নিত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৭:১৪
Share:

(বাঁ দিকে) নরেন্দ্র মোদী। ডোনাল্ড ট্রাম্প (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।

দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে কথা বলছে ভারত। আরও এক বার একথা বললেন দেশের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযুষ গয়াল। দিন কয়েক আগেই ভারত থেকে রফতানি করা পণ্যের উপরে দ্বিগুণ শুল্ক চাপিয়েছে আমেরিকা। তা কার্যকরও করেছে। জানিয়েছে, রাশিয়ার থেকে তেল কেনার জন্যই এই পদক্ষেপ। তার পরেই মঙ্গলবার দিল্লিতে একটি কর্মসূচিতে বাণিজ্যমন্ত্রী জানালেন, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে কথা চলছে ভারতের।

Advertisement

সোমবার ভারতীয় পণ্যের উপর জরিমানা-সহ ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পক্ষে আবার সওয়াল করেন ট্রাম্প। গত কয়েক দশক ধরে চলা নয়াদিল্লি-ওয়াশিংটনের বাণিজ্যিক সম্পর্ককে ‘একতরফা বিপর্যয়’ বলে চিহ্নিত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি লিখেছেন, ‘‘খুব কম মানুষই বোঝেন যে আমরা ভারতের সঙ্গে খুব কম ব্যবসা করি। কিন্তু তারা আমাদের সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে ব্যবসা করে। সোজা কথায় বলতে গেলে, ভারত আমাদের কাছে প্রচুর পরিমাণে পণ্য বিক্রি করে। আমরা তাদের সবচেয়ে বড় গ্রাহক (ক্লায়েন্ট)। কিন্তু আমরা তাদের খুব কম পরিমাণ পণ্য বিক্রি করি।’’

এমন পরিস্থিতি চলতে পারে না দাবি করে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘‘ভারত এখন আমাদের উপর এত বেশি শুল্ক আরোপ করেছে, যা অন্য যে কোনও দেশের তুলনায় সর্বোচ্চ। আমরা আমাদের পণ্য ভারতে বিক্রি করতে অক্ষম। এটি সম্পূর্ণ একতরফা বিপর্যয়!’’

Advertisement

প্রসঙ্গত, বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে আলোচনার মধ্যেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ৩০ জুলাই ভারতের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপানোর কথা ঘোষণা করেছিলেন। একই সঙ্গে রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্কের কারণে অতিরিক্ত ও অনির্দিষ্ট একটি ‘জরিমানা’ (পেনাল্টি)-র কথাও জানিয়েছিলেন ট্রাম্প।

এর পরে গত ৬ অগস্ট ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্কের উপর আরও ২৫ শতাংশ জরিমানা (অর্থাৎ মোট ৫০ শতাংশ) আরোপ করার কথা ঘোষণা করেন। যা ব্রাজ়িল ছাড়া অন্য সমস্ত দেশের উপর আরোপিত মার্কিন শুল্কের মধ্যে সর্বোচ্চ। গত ২৭ অগস্ট থেকে সেই শাস্তিমূলক শুল্ক কার্যকর হয়েছে। আর তা প্রত্যাহারের পরিকল্পনা যে আমেরিকার নেই, সে কথাও সোমবার স্পষ্ট করে দিয়েছেন ট্রাম্প। সমাজমাধ্যমে তিনি লিখেছেন, ‘‘ভারত তার বেশির ভাগ তেল এবং সামরিক পণ্য রাশিয়া থেকে কেনে। আমেরিকা থেকে খুব কম। তারা এখন তাদের শুল্ক পুরোপুরি কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে, কিন্তু দেরি হয়ে গিয়েছে। তাদের বহু বছর আগেই তা করা উচিত ছিল।’’

মঙ্গলবার গয়াল আরও জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কিছু দেশ, চিলে, পেরু, অস্ট্রেলিয়া, নিউ জ়িল্যান্ড, ওমানের সঙ্গে নতুন করে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে কথা হচ্ছে। ব্রিটেন, আরব আমিরশাহির সঙ্গে ইতিমধ্যে বাণিজ্য চুক্তি হয়ে গিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘আনেকটাই হয়েছে। আরও অনেকটা হবে।’’ পৃথিবীর আর্থিক বৃদ্ধির ১৮ শতাংশ ভারতের দান।

এর আগে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম কেন্দ্রীয় সরকারি আধিকারিকদের উদ্ধৃত করে জানিয়েছিল, যে ভারত এবং আমেরিকার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে এখনও কথাবার্তা চলছে। ব্লুমবার্গও ভারতের সরকারি কর্তাদের উদ্ধৃত করে জানিয়েছিল, ভারত এবং আমেরিকার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে অসরকারি স্তরে কথা চলছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকার ভারতের রফতানি করা পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপালেও ভারত পাল্টা পদক্ষেপ করার কথা এখনই ভাবছে না।

ভারতের রফতানি করা পণ্যের উপরে ২৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছিল আমেরিকা। পরে আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক বসানোর কথা ঘোষণা করে ট্রাম্প সরকার। ২৭ অগস্ট থেকে তা কার্যকর করা হয়। হোয়াইট হাউসের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো এবং আমেরিকার রাজস্ব সচিব স্কট বেসান্ত জানান, রাশিয়ার থেকে তেল কিনে আসলে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ভ্লাদিমির পুতিন সরকারের যুদ্ধে অর্থ জোগাচ্ছে ভারত।

এই দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে মাসের পর মাস কথা বলেছে ভারত এবং আমেরিকা। ২৫ অগস্ট দিল্লিতে ষষ্ঠ দফায় আলোচনায় বসার কথা ছিল দুই দেশের প্রতিনিধিদের। কিন্তু আমেরিকার প্রতিনিধিরা সেই আলোচনা বাতিল করেন। ২০৩০ সালের মধ্যে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ দ্বিগুণ করার লক্ষ্য রয়েছে। সেই পরিমাণ হতে চলেছে ৫০ হাজার কোটি ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৪১ লক্ষ কোটি টাকা।

সূত্রের খবর, ভারতকে ভুট্টা, সয়াবিন, আপেল, ইথানল, কাঠবাদামের উপরে শুল্ক কমানোর অনুরোধ করেছিল আমেরিকা। তারা চেয়েছিল, তাদের দেশের দুগ্ধজাত পণ্যের বিক্রি যাতে এ দেশে আরও বৃদ্ধি পায়। যদিও ভারত তা মানেনি। কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়ে দেয়, এতে ভারতের ছোট কৃষকদের স্বার্থে আঘাত লাগতে পারে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement