সাক্ষী রইল বেতার তরঙ্গ, কথা রাখা বাকি

দু-দু’টো বছর কেটে গিয়েছে। কথা রাখা যায়নি। শুধু ‘কথা রাখা যায়নি’ বললে বোধ হয় ঠিক মতো বোঝা যায় না বিষয়টার গুরুত্ব। একেবারে প্রাথমিক প্রতিশ্রুতি যা ছিল, যা ছিল সবচেয়ে বড় অঙ্গীকার, মসনদে দু’বছর কাটিয়ে দিয়েও সেই অঙ্গীকার পূরণে প্রায় কিছুই করে উঠতে পারেননি নরেন্দ্র মোদী।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৬ ০৬:০০
Share:

দু-দু’টো বছর কেটে গিয়েছে। কথা রাখা যায়নি।

Advertisement

শুধু ‘কথা রাখা যায়নি’ বললে বোধ হয় ঠিক মতো বোঝা যায় না বিষয়টার গুরুত্ব। একেবারে প্রাথমিক প্রতিশ্রুতি যা ছিল, যা ছিল সবচেয়ে বড় অঙ্গীকার, মসনদে দু’বছর কাটিয়ে দিয়েও সেই অঙ্গীকার পূরণে প্রায় কিছুই করে উঠতে পারেননি নরেন্দ্র মোদী।

‘কালো টাকা’— এই দু’টো শব্দকে ঘিরে অনেকটাই আবর্তিত হয়েছিল ২০১৪ সালের ভারতীয় সাধারণ নির্বাচনের হাওয়া। নরেন্দ্র মোদী যেন ধর্মযুদ্ধে নেমেছিলেন এক। গোটা ভারত ঘুরে ঘুরে কালো টাকা উদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছিলেন। বার বার, অজস্র বার উচ্চারিত হচ্ছিল কথাটা— যেন সাধারণ নির্বাচনের শব্দব্রহ্ম।

Advertisement

নরেন্দ্র মোদী নয়াদিল্লির ৭ নম্বর রেসকোর্স রোডে পৌঁছে যাওয়ার পর কিন্তু ছবিটা বেশ বদলে গিয়েছে। শব্দ রয়ে গেলেও ব্রহ্ম যেন উধাও।

স্বাধীনতা উত্তর ভারতে কালো টাকা যত জমেছে, সে সব নিঃশেষে উদ্ধার হবে— প্রতিশ্রুতি অনেকটা তেমনই ছিল। বিদেশে লুকিয়ে রাখা টাকা দেশে আসবে, আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিবিহীন সম্পত্তি আর কারও থাকবে না, এমনকী বিপুল কালো টাকা উদ্ধারের পর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সাধারণ ভারতবাসীর মধ্যে তা বাঁটোয়ারা হয়ে যাবে— প্রতিশ্রুতি এমনও ছিল।

কোনও প্রতিশ্রুতিই যে পূরণ হয়নি তা বলাই বাহুল্য। কথা রাখতে পারা যাচ্ছে না বলে অঙ্গীকারবদ্ধ ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ খুব বিচলিত বলেও মনে হচ্ছিল না। তাতে অবশ্য আশ্চর্যও হচ্ছিলাম না। গণতন্ত্রের মহাসড়কের দু’ধারে ভারত এমন অজস্র প্রতিশ্রুতিকে বিলীন হয়ে যেতে দেখেছে। এও হয়তো সেগুলিরই একটা— সাধারণ ভারতবাসী ভাবতেও শুরু করেছিলেন।

বেতার তরঙ্গ ভেসে এল সেই ক্ষণে। প্রধানমন্ত্রীর ‘মনের কথা’য় কান পেতে বোঝা গেল প্রতিশ্রুতিটা এখনও পুরোপুরি মিলিয়ে যায়নি পঞ্চভূতে। নরেন্দ্র মোদী আরও এক বার বোঝানোর চেষ্টা করলেন, তিনি প্রতিশ্রুতির কথা বিস্মৃত হননি। সঠিক আয় এবং সম্পত্তির পরিমাণ স্ব-উদ্যোগে ঘোষণা না করলে বিপদ অপেক্ষা করে রয়েছে— সতর্কবার্তা প্রধানমন্ত্রীর। নির্দিষ্ট সময়সীমার পরে কারো ভাণ্ডার থেকে কালো টাকার হদিশ মিললে পরিণতি সুখকর হবে না বলেও বার্তা এসেছে বেতার তরঙ্গে।

বোঝা গেল, নরেন্দ্র মোদী ভুলে যাননি পুরোটা এখনও। বোঝা গেল, এখনও তিনি ভাবতে শুরু করেননি যে দেশবাসী সব ভুলে গিয়েছেন।

তবে বোঝা গেল না এমন বিষয়ও রয়েছে। কথা তো ছিল কালো টাকার শেষ চিহ্নটুকুও মুছে দেওয়া হবে। কথা তো ছিল এ যাবৎ পুঞ্জীকৃত সব অবৈধ ধন উদ্ধার হবে। কথা তো ছিল কাউকে রেয়াত নয়। তা হলে সেপ্টেম্বরের মধ্যে অঘোষিত আয়-সম্পত্তির হদিশ দিয়ে দিলে যৎসামান্য জরিমানার বিনিময়ে সে সবকে বৈধতা দেওয়ার ব্যবস্থা কেন?

বিপুল জনমতে সওয়ার হয়ে দেশের শীর্ষ পদে আসীন হয়েছেন মোদী। জনমতের আশিরনখ অমর্যাদা তিনি করবেন, এমনটা এখনই ভাবতে চাইছি না।

সবে দু’টো বছর কেটেছে। আরও তিনটে বছর বাকি। যদিও এ কথাও ভুলছি না যে ওই তিনের পাশে আরও একটা তিন বসিয়ে কবির মনে হয়েছিল, ‘‘...কেউ কথা রাখেনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন