মোদীর সঙ্গে সাক্ষাতের এই ছবিটিই ফেসবুকে দিয়েছিলেন বস্তারের জেলাশাসক অমিত কাটারিয়া।
গায়ে নীল-সাদা স্ট্রাইপ শার্ট। চোখে রোদচশমা। গত সপ্তাহে ছত্তীসগঢ় সফরে গিয়ে বস্তারের জেলাশাসক অমিত কাটারিয়ার সঙ্গে হাত মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, ‘‘মিস্টার দবং কালেক্টর, কেমন আছেন আপনি?’’ প্রশংসা করে বলেন, মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকায় কী ভীষণ কঠিন পরিস্থিতিতে কাজ করেন আপনারা।
কিন্তু দিন কয়েকের মাথায় বিজেপি সরকারের কোপে পড়তে হল সেই ‘দুঃসাহসী’ অফিসারকেই। প্রধানমন্ত্রীর সামনে সানগ্লাস পরায় তাঁকে নোটিস ধরানো হয়েছে। এ-ও জানানো হয়েছে, বন্ধগলা (জামার কলারের বোতাম খোলা ছিল) শার্ট না পরে প্রোটোকল ভেঙেছেন তিনি। সরকারের কোপে পড়েছেন দন্তেওয়াড়ার জেলাশাসক কে সি দেবসেনাপতি-ও। গত ৯ মে মোদীকে স্বাগত জানাতে দু’জনেই হাজির ছিলেন বিমানবন্দরে। দেবসেনাপতি পরেছিলেন সাদা শার্ট আর ট্রাউজার। রাজ্য সরকারের বক্তব্য, সে দিন তাঁরা দু’জনেই ছিলেন সরকারি প্রতিনিধি। প্রোটোকল মেনে ‘বন্ধগলা’ পোশাক পরা উচিত ছিল ওই দুই আমলার। যদিও সেই মুহূর্তে কোনও প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়নি তাঁদের। বরং প্রধানমন্ত্রীর সফরের ভাল ব্যবস্থাপনা করায় দুই কর্তাকেই অভিনন্দন জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহ।
বিষয়টি জানাজানি হয় পরে। নোটিস পাঠিয়ে কাটারিয়া ও দেবসেনাপতিকে বলা হয়েছে, সর্বভারতীয় সার্ভিস রুল-এর ৩(আই) ধারা অনুযায়ী প্রত্যেক কর্মীর তাঁর কাজের প্রতি দায়বদ্ধতা বজায় রাখা উচিত। এমন কিছু করা উচিত নয়, যা তাঁর পদ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে।
তবে অনেকেরই বক্তব্য, মোদীর ওই ‘দবং’ মন্তব্যেরই অন্য ব্যাখ্যা করে নড়েচড়ে বসেছে রাজ্য সরকার। তার আগে তাদের কিছুই মনে হয়নি।
সরকারের এই পদক্ষেপ নিয়ে সরব হয়েছেন বিরোধী দলগুলি। কংগ্রেসের এক নেতা বলেন, ‘‘এতে ভুলটা কী হয়েছে! কী প্রচণ্ড গরম।’’ ওই আমলাদের ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তিও জানিয়েছেন, ‘‘ওঁরা সব সময় কোট সঙ্গে রাখেন। কিন্তু মারাত্মক গরম বলে সে দিন পরতে পারেননি।’’
যদিও মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহের যুক্তি, ‘‘যে কোনও অবস্থায় সবাইকে প্রোটোকল মেনে চলতে হবে।’’
কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কি বাড়াবাড়ি হচ্ছে না? জবাবে তিনি বলেন, ‘‘ওঁদের তো শুধুমাত্র সতর্ক করে নোটিস দেওয়া হয়েছে। শাস্তি দেওয়া হয়নি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘এ সব নতুন কিছুই নয়। আগেও এমন হয়েছে। নতুন জেলাশাসকদের তাঁদের কাজের প্রোটোকল সম্পর্কে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।’’ কাটারিয়া ও দেবসেনাপতি, দু’জনেই নতুন আইএএস অফিসার। কাটারিয়া ২০০৪ ব্যাচের আইএএস।
যে দু’জনকে নিয়ে এত হইচই, তাঁরা অবশ্য এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। যদিও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তোলা যে ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন কাটারিয়া, তা ছড়িয়ে পড়েছে ইন্টারনেটে। সেই ছবিতে কাটারিয়ার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রমন সিংহকে দেখিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘উনিও তো কোটের উপরের বোতাম লাগাননি। তা হলে!’’