ললিত কাণ্ডে সুষমা-বসুন্ধরা নিয়ে উভয় সঙ্কটে মোদী

রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে ইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। ললিত মোদী বিতর্ক এই মুহূর্তে এমন একটা জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে যেখানে বসুন্ধরা রাজের ইস্তফা দেওয়ার ব্যাপারে চূড়ান্ত চাপ সৃষ্টি হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর উপর। বসুন্ধরা রাজে দলের সভাপতি অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু অমিত শাহ তাতে রাজি হননি।

Advertisement

জয়ন্ত ঘোষাল

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৫ ১৪:৪২
Share:

রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে ইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। ললিত মোদী বিতর্ক এই মুহূর্তে এমন একটা জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে যেখানে বসুন্ধরা রাজের ইস্তফা দেওয়ার ব্যাপারে চূড়ান্ত চাপ সৃষ্টি হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর উপর। বসুন্ধরা রাজে দলের সভাপতি অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু অমিত শাহ তাতে রাজি হননি। টেলিফোনে নরেন্দ্র মোদীর কাছে বসুন্ধরা ইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। মোদী তাকে পরবর্তী নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করতে বলেছেন। এ দিকে আজ আনন্দপুর সাহিবের ৩৫০ বছর পূর্তির যে উৎসব পালিত হচ্ছে, তাতে অমিত শাহ এবং বিজেপি-র অন্যান্য শীর্ষ নেতারা যাচ্ছেন। সেখানে বসুন্ধরারও যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু একেবারে শেষ মুহূর্তে মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে একটি প্রেস বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে যে, শারীরিক অসুস্থতার কারণে মুখ্যমন্ত্রী ওই অনুষ্ঠানে যেতে পারছেন না।

Advertisement

প্রধানমন্ত্রী এই মুহূর্তে এক উভয় সঙ্কটে। একদিকে বসুন্ধরা শুধু নয়, সুষমা স্বরাজেরও ইস্তফা গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করছেন নাগপুরের আরএসএস-এর শীর্ষ নেতারা। যদি এখনই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা এবং মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সুষমা এবং বসুন্ধরাকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করা হয়, তাহলে মোদীর রাজনৈতিক কর্তৃত্বের যে অবক্ষয় শুরু হয়েছে তা রোধ করা সম্ভব হবে। আবার বিজেপি নেতৃত্বের এই ভয় আছে যে, ব্যবস্থা নিলে বিরোধী পক্ষ রক্তের স্বাদ পাবে। এবং তখন অভিযোগের তর্জনী নরেন্দ্র মোদীর দিকে ধাবিত হবে। যেমন বফর্সের সময় বিদেশমন্ত্রী সোলাঙ্কিকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। অরুণ সিংহকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে বিরোধী আক্রমণ থামেনি। উল্টে শেষ পর্যন্ত সেটা রাজীব গাঁধীর দিকে ধাবিত হয়েছিল। তবে আরএসএস এবং বিজেপি নেতাদের একটি বড় অংশ মনে করছেন ললিত মোদীর ঘটনার সঙ্গে বফর্সের তুলনা করাটা অসমীচিন। বফর্স-এ অনেক আন্তর্জাতিক চরিত্র এবং চক্রান্ত ছিল। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে কেনাবেচার বিষয় ছিল। এ ক্ষেত্রে বিষয়টা অনেকটাই ব্যক্তিগত দুর্নীতি। রাষ্ট্র-আন্তর্জাতিক সংযোগ নেই।

প্রধানমন্ত্রী এখন চাপের মুখে শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা শুরু করেছেন। গতকাল তিনি রাজনাথ সিংহের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তার আগে সুষমা স্বরাজের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। শুক্রবার অমিত শাহের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর বৈঠক হয়েছে। এই বৈঠকটিও বিশেষ ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ অমিত শাহ মোহন ভাগবত-সহ আরএসএস নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সুষমা স্বরাজও মোদীর কাছে ইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু মোদী আপাতত তাঁকেও চুপ করে থাকতে বলেছেন। জানিয়েছেন, যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার তা নেওয়া হবে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস অর্থাৎ রবিবারের পর।

Advertisement

অতীতে প্রতিরক্ষামন্ত্রী কৃষ্ণ মেননকে নিয়ে নেহরু সমস্যায় পরেছিলেন। কিছুদিনের জন্য কৃষ্ণ মেনন ইস্তফা দিয়েছিলেন। পরে নেহরু তাঁকে ফেরত নিয়ে আসেন। মনমোহন সিংহের সময় টুজি কেলেঙ্কারির প্রেক্ষিতে এ রাজাকে ইস্তফা দিতে হয়েছিল। কিন্তু চিদম্বরমের মন্ত্রক বদল করে অর্থমন্ত্রক থেকে সরিয়ে দেওয়া হল। এখন বসুন্ধরার ক্ষেত্রে বেশ কিছুদিন থেকেই আরএসএস তাঁকে সরাতে তৎপর। আরএসএস নেতাদের সঙ্গে বসুন্ধরার প্রতি মুহূর্তে খটাখটি লাগছে। এমনকি মোদী এবং অমিত শাহের সঙ্গেও বসুন্ধরার বেশ ঝগড়াঝাঁটি চলছিল। কাজেই এই পরিস্থিতিতে ললিত মোদীর কেলেঙ্কারির সুযোগ নিয়ে বসুন্ধরাকে সরানোর একটা সুযোগও পেয়ে গিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। রাজস্থানে বিজেপির রাজ্য নেতারাও বসুন্ধরাকে সরানোর বিষয়ে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন দলের ভিতরে।

তবে বসুন্ধরাকে যদি রাজ্য স্তরে সরানো হয় তাহলে সুষমকেও সরানোর চাপ এসে যাবে। সেক্ষেত্রে চিদম্বরমের মতো কি সুষমার দফতর বদল হবে? নাকি এ রাজার মত তাঁকে ইস্তফা দিতে হবে সেটাও একটা বিচার্য বিষয়। শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী যদি এঁদের না সরানোর সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে বিহার নির্বাচনের আগে রাহুল গাঁধী লালু, নীতিশ বাম-সহ সমস্ত বিরোধী দলকে সঙ্গে নিয়ে এক আক্রমণাত্মক আন্দোলন করার সুযোগ পাবেন। নরেন্দ্র মোদী জেটলির ফেরার জন্যও অপেক্ষা করছেন। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত যা-ই হোক, কোনও সন্দেহ নেই সুষমা এবং বসুন্ধরাকে সরানোর ব্যাপারে এই মুহূর্তে নরেন্দ্র মোদীর উপর চাপ কিন্তু এ বার বেড়ে গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন