পিছু হটা নয়, সুর চড়িয়ে হুঁশিয়ারি নরেন্দ্র মোদীর

বিরোধীদের একাংশের দাবি, নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করুন প্রধানমন্ত্রী। চাপ আসছে শরিকদের থেকেও। কিন্তু তিনি যে কোনও ভাবেই নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটবেন না, তা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:২৫
Share:

বিদেশ সফর শেষে রাতে দেশে ফিরলেন প্রধানমন্ত্রী। ছবি টুইটারের সৌজন্যে।

বিরোধীদের একাংশের দাবি, নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করুন প্রধানমন্ত্রী। চাপ আসছে শরিকদের থেকেও। কিন্তু তিনি যে কোনও ভাবেই নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটবেন না, তা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শুধু তা-ই নয়। কালো টাকার বিরুদ্ধে তিনি যে আগামী দিনে আরও বড় অভিযানে নামবেন, সেই হুঁশিয়ারিও দিয়ে রাখলেন মোদী।

Advertisement

শনিবার জাপানে অনাবাসী ভারতীয়দের সঙ্গে আলাপচারিতায় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, যে ভাবে গোটা দেশ কষ্ট সহ্য করেও কালো টাকার বিরুদ্ধে লড়াইকে সমর্থন করছে, তা প্রশংসার। এ নিয়ে বিরোধীদের আক্রমণের জবাব দিতে তিনি আরও বড় দু’টি পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দেন। এক, ৩০ ডিসেম্বর, পুরনো নোট জমা করার শেষ দিনের পরে কালো টাকার বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দুই, তখন কেউ ধরা পড়লে তাঁকে রেয়াত করা হবে না। মোদীর কথায়, ‘‘এ ধরনের লোক যাতে বাঁচতে না পারেন, তার জন্য প্রয়োজনে স্বাধীনতার আমল থেকে সব হিসেব খতিয়ে দেখব। তার জন্য যত লোককে লাগানো দরকার, তা করব।’’

নোট বাতিলের ঘোষণার চার দিন পরে গোটা দেশের যে ছবিটি ধীরে ধীরে ফুটে উঠছে, তাতে অবশ্য মোদীর খুব স্বস্তির কারণ দেখছেন না অনেকেই। গোড়ায় এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানালেও নোট বদল করতে না পেরে আর হাতে টাকা না পেয়ে আমজনতার অসন্তোষ ক্রমশ বাড়ছে। আর সেই অসন্তোষকে সামনে রেখেই একজোট হচ্ছে বিরোধীরা। খোদ সরকার পক্ষই আজ কবুল করেছে, আগামী সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া সংসদের অধিবেশনের আগে ভোগান্তি মিটবে না। অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি এ দিন নোটের জোগান স্বাভাবিক হওয়া নিয়ে যা বলেছেন বা অর্থ মন্ত্রকের বিভিন্ন সূত্র থেকে যা ইঙ্গিত মিলছে, তাতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে মাসখানেকেরও বেশি সময় লেগে যেতে পারে। ফলে অধিবেশন-পর্বের শুরু থেকেই বিপুল চাপে থাকবে বিজেপি। এটি আঁচ করে তৃণমূল আগেই সংসদে আলোচনার জন্য নোটিস দিয়েছে। একই পথ নিয়েছে কংগ্রেসও। কেজরীবাল, মায়াবতী, মুলায়মের বিরোধিতা তো আছেই। সরকারে মোদীর শরিক শিবসেনা, অকালির মতো দলের অসন্তোষকেও কক্ষ সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজে লাগিয়ে মোদীর বিরুদ্ধে একজোট করার চেষ্টা করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়রা।

Advertisement

আজ সকালেই কেজরীবাল ফের সাংবাদিক বৈঠক করে বিজেপিকে তোপ দাগেন। তাঁর অভিযোগ, বিজেপি নিজেদের টাকা আগেভাগেই ব্যবস্থা করে নিয়েছে। কালো টাকাওয়ালা বন্ধুদেরও তা করতে বলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘তা না হলে কেনই বা বিজেপির পঞ্জাবের নেতা প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার দু’দিন আগে টুইটারে নতুন ২ হাজার টাকার ছবি দিলেন? আর কেনই বা জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে ব্যাঙ্কগুলিতে সব থেকে বেশি টাকা ঢুকল? মোদীর বন্ধুরা আগে জানতেন বলেই তাঁরা আগেভাগে টাকা সরিয়ে দিয়েছেন। গোটাটাই ভাঁওতা।’’ কেজরীবালের অভিযোগ উড়িয়ে জেটলি বলেন, ‘‘আগে কেউই জানতেন না এই সিদ্ধান্ত। সেপ্টেম্বরের প্রথম ১৫ দিন বেশি টাকা ব্যাঙ্কে জমা পড়েছে, অর্থ কমিশনের বাড়তি টাকা হাতে আসায়। বিরোধী দলগুলি দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করে গুজব ছড়াচ্ছে।’’

গত কাল দিল্লির পার্লামেন্ট স্ট্রিটের একটি ব্যাঙ্কে গিয়ে আমজনতার লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন রাহুল গাঁধী। মানুষের হেনস্থা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে তীব্র ভাষায় বিঁধেওছিলেন। আজ এক টুইট বার্তায়

তিনি দলের যুব নেতাদের আবেদন করেন, সাধারণ মানুষকে ফর্ম ভরতে, জল দিতে সাহায্য করার জন্য। রাহুলের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বুঝবেন না। তাই কংগ্রেসকেই এই দায়িত্ব নিতে হবে। যা শুনে বিজেপির পাল্টা কটাক্ষ, আসলে আজ প্রধানমন্ত্রী যখন বলেছেন, স্বাধীনতার আমল থেকে সবার ঠিকুজি বের করবেন, তিনি রাহুল গাঁধীকেই আক্রমণ করেছেন। কারণ, স্বাধীনতার পর থেকে তাঁর দলই সবথেকে বেশি সময় দেশ শাসন করেছে। আর একের পর এক দুর্নীতির কারিগরও তাঁরাই।

বিজেপির শীর্ষ নেতাদের মতে, এখন মোদীকে একাধারে দু’টি কাজ করতে হচ্ছে। এক, দ্রুত আমজনতার ভোগান্তি দূর করে নোটের যোগান স্বাভাবিক করা, তাঁদের টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করা। দুই, যে ভাবে সংসদের অধিবেশনের মুখে বিরোধীরা একজোট হচ্ছে, সেটির মোকাবিলা করা। বিজেপির দাবি, যে সব দল মুখে দুর্নীতি দমনের কথা বলে এখন বিরোধিতা করছে, তারা আসলে নিজেদের কালো টাকা নিয়ে চিন্তিত। সে কারণেই চাপ দিয়ে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করাতে চাইছে। অরুণ জেটলি আজ যে কারণে বলেন, ‘‘ভুরি ভুরি আবেদন আসছে ছাড় দেওয়ার দাবি তুলে। কিন্তু আমরা এমন কোনও ছাড় দেব না, যেটি কালো টাকা সাদা করার কল হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন