পাকিস্তান প্রশ্নে সরকারের উপর চাপ বাড়াচ্ছে কংগ্রেস

বিরোধী আসনে থেকে পাকিস্তান প্রশ্নে কট্টর অবস্থান নিত বিজেপি। এ বার সনিয়া গাঁধীর কংগ্রেসও বুঝিয়ে দিল, বিজেপির থেকেও কড়া অবস্থান নিতে প্রস্তুত তারা। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা স্তরের বৈঠক নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই মোদী সরকারের সঙ্গে টানাপড়েন চলছিল ইসলামাবাদের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৫ ০৩:০০
Share:

বিরোধী আসনে থেকে পাকিস্তান প্রশ্নে কট্টর অবস্থান নিত বিজেপি। এ বার সনিয়া গাঁধীর কংগ্রেসও বুঝিয়ে দিল, বিজেপির থেকেও কড়া অবস্থান নিতে প্রস্তুত তারা।

Advertisement

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা স্তরের বৈঠক নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই মোদী সরকারের সঙ্গে টানাপড়েন চলছিল ইসলামাবাদের। আজ রাতের দিকে সেই বৈঠক বাতিলের সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলেছে পাক সরকার। কিন্তু কংগ্রেস এই অবস্থায় প্রথম থেকেই প্রশ্ন তুলেছে, যে বৈঠকে কোনও ফল মিলবে না, তা করে আসলে লাভটা কী। পাকিস্তানের সন্ত্রাসে মদতের বিষয়ে মোদী সরকার আগের কট্টর অবস্থান থেকে সরে এসেছে বলেও আজ ফের অভিযোগ তুলেছে কংগ্রেস। দলের নেতা আনন্দ শর্মার যুক্তি, ‘‘মনমোহন-সরকারের কাছেও পাকিস্তান এই বৈঠকের প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু আমরা সাফ জানিয়েছিলাম, ২৬/১১-র হামলার ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে সন্তোষজনক ব্যবস্থা নেওয়া হলে, আলোচনা হবে। মোদী সরকার সেই অবস্থান থেকে সরে আলোচনায় বসেছে। কীসের ভিত্তিতে উফায় ভারত আলোচনায় বসতে রাজি হল, সে বিষয়ে দেশ এখনও অন্ধকারে।’’

আজ বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ অবশ্য যুক্তি দিয়েছেন, ২০০৮-এ মুম্বই-হামলার পরে যে আলোচনা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, ২০১০-এ ফের তা শুরু হয়। তবে পাকিস্তানি সেনার হাতে ভারতীয় জওয়ানের মুণ্ডচ্ছেদের ঘটনার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ফের আলোচনায় ইতি টানেন। নরেন্দ্র মোদীও মনে করেন, সন্ত্রাস ও আলোচনা একসঙ্গে চলতে পারে না। মোদী সরকার পাকিস্তানের সঙ্গে কোনও সামগ্রিক আলোচনায় যাচ্ছেও না। ভবিষ্যতে যাতে সেই রাস্তাটা তৈরি হতে পারে, তার জন্য সন্ত্রাস ও হিংসা বন্ধ হওয়া উচিত। উফার বৈঠকে তাই ঠিক হয়েছিল, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা স্তরের বৈঠকটি শুধুমাত্র সন্ত্রাস বন্ধের লক্ষ্য নিয়ে করা হবে। শুধুই সন্ত্রাস নিয়ে আলোচনা হবে সেখানে।

Advertisement

কংগ্রেসের অভিযোগ, পাকিস্তান সুকৌশলে সন্ত্রাস থেকে নজর ঘুরিয়ে ফেলেছে। আলোচনার আগেই পাক মদতে ভারতে সন্ত্রাসবাদী হামলা চলেছে। সীমান্তে গুলি চালিয়ে

পাক সেনা বারবার সংঘর্ষ-বিরতি ভেঙেছে। এখন তারাই সন্ত্রাস থেকে নজর ঘুরিয়ে গোটা বিষয়টিকে কাশ্মীর প্রশ্নে এনে দাঁড় করিয়েছে। আর সব কিছুর জন্য মোদী সরকারের হুরিয়ত বিষয়ক নীতিকেই দায়ী করেছেন আনন্দ শর্মা। তাঁর মতে, ‘‘এমন কিছু ব্যক্তি ও সংগঠন, যারা কাশ্মীরের প্রতিনিধিত্ব করেন না, যারা ভোটে জেতেননি, কোনও দিন জিতবেনও না, তাদেরই কেন্দ্র মাত্রাতিরিক্ত গুরুত্ব দিচ্ছে।’’ কংগ্রেসের বক্তব্য,

এর ফলে পাকিস্তান নয়াদিল্লির কাশ্মীর-দমননীতি নিয়ে অভিযোগ তুলেছে। আগামী মাসে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভাতেও তারা বিষয়টি নিয়ে সরব হবে।

উল্টো যুক্তি সাজিয়েছে সরকারও। কেন্দ্র বলছে, পাকিস্তানকে জানানো হয়েছিল যে, দু’দেশের বৈঠকের পর হুরিয়ত নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসুন পাক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সরতাজ আজিজ। কিন্তু আগেভাগে সেই বৈঠক করলে মনে হবে, দু’দেশের আলোচনায় হুরিয়তকেও অংশীদার করা হচ্ছে। শিমলা চুক্তিতে রয়েছে, ভারত ও পাকিস্তানের বিষয়ে কোনও তৃতীয় পক্ষকে সামিল করা যাবে না। দুই দেশেরই সে বিষয়ে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের যুক্তি, ‘‘দু’দেশের মধ্যে সামগ্রিক বৈঠক হলেই কাশ্মীর প্রসঙ্গ আসতে পারে। আর তা তখনই সম্ভব, যখন সন্ত্রাস বন্ধ হবে।’’

সব মিলিয়ে মোদী সরকারের কূটনৈতিক দক্ষতা নিয়েই আজ প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস। কংগ্রেসের যুক্তি, নরেন্দ্র মোদীর বোঝা উচিত ছিল যে, নওয়াজ শরিফ আলোচনায় বসতে রাজি হলেও পাক সেনা বা আইএসআই-এর মতো অন্য শক্তিগুলি তাতে রাজি হবে না। তাই পাক প্রধানমন্ত্রী আলোচনায় সম্মতি দিয়ে ইসলামাবাদ ফিরতেই সীমান্তে গুলি ছোড়া শুরু হয়ে যায়।

তবে কংগ্রেসের সব অভিযোগেরই পাল্টা জবাব দিয়েছে মোদী সরকার। উফায় নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকে যৌথ বিবৃতি জারি করার পরে শরিফকে যে দেশে প্রবল চাপে পড়তে হয়েছে, তা নয়াদিল্লি ভালই জানে। এ প্রসঙ্গে সুষমার বক্তব্য, ‘‘এ দেশেও কম চাপ সহ্য করতে হয়নি সরকারকে। একের পর এক জঙ্গি হানার পর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা স্তরের বৈঠক ভেস্তে দেওয়ার চাপ এসেছে। তবে মোদী সরকার এতটাই শক্তিশালী যে, এই চাপ হজম করতে সক্ষম। তাই ভারত কোনও ভাবেই এই বৈঠক ভেস্তে দিতে চায়নি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন