অমরনাথ হানা নিয়ে প্রবল চাপে কেন্দ্র, শুরু পারস্পরিক দোষারোপও

এ বছর অমরনাথে হামলার আশঙ্কা রয়েছে বলেই গোয়েন্দা তথ্য ছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে। তাই অভূতপূর্ব প্রস্তুতি চালিয়েছিল কেন্দ্র। সেনা, আধাসেনা, জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের ত্রিস্তরীয় সুরক্ষাবলয় ছাড়াও ড্রোন দিয়ে নজরদারি করা হচ্ছিল।

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৭ ০৪:২১
Share:

প্রায় দু’সপ্তাহ অমরনাথ যাত্রা শান্তিতে চলার পরে জঙ্গি হামলায় ৭ তীর্থযাত্রী নিহত হওয়ায় তুলকালাম প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ে। শুরু হয়ে গিয়েছে পারস্পরিক দোষারোপের পালা। মহারাষ্ট্রের দু’জন ও প্রধানমন্ত্রীর রাজ্যের পাঁচ জন বাসিন্দা মারা যাওয়ায় স্বভাবতই তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে ভোটমুখী গুজরাতে। বিরোধীদের দাবি, এই ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর মুখ পুড়েছে। জঙ্গি সমস্যায় দীর্ণ জম্মু-কাশ্মীরে রাজ্যপালের শাসন জারি করা হবে কি না তা নিয়েও আজ এক প্রস্ত আলোচনা হয়েছে সরকারের শীর্ষ স্তরে। সূত্রের খবর, ওই রাজ্যে খুব দ্রুত রাজ্যপাল পদে রদবদল হবে। প্রয়োজনে পরে রাজ্যপালের শাসনও জারি করা হতে পারে।

Advertisement

এ বছর অমরনাথে হামলার আশঙ্কা রয়েছে বলেই গোয়েন্দা তথ্য ছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে। তাই অভূতপূর্ব প্রস্তুতি চালিয়েছিল কেন্দ্র। সেনা, আধাসেনা, জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের ত্রিস্তরীয় সুরক্ষাবলয় ছাড়াও ড্রোন দিয়ে নজরদারি করা হচ্ছিল। কিন্তু হিজবুল জঙ্গি বুরহান ওয়ানির মৃত্যুবার্ষিকীর সপ্তাহেই এই হামলার পরে প্রশ্ন উঠেছে এত প্রস্তুতির পরেও কেন এই ফস্কা গেরো?

ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সকালেই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের জবাবদিহি চান। সূত্রের খবর, ডোভাল প্রধানমন্ত্রীকে জানান এই ঘটনার পিছনে নিরাপত্তাজনিত ত্রুটি যত না রয়েছে, তার চেয়ে বেশি রয়েছে জম্মু-কাশ্মীর সরকারের প্রশাসনিক গাফিলতি। ডোভাল জানান, গুজরাতের ওই বাসটি নথিভুক্ত ছিল না। শুধু বাসই নয়, বাসের যাত্রীদের নামও নিয়মমাফিক অমরনাথ দর্শনার্থীদের তালিকায় ছিল না। কেন্দ্রের মতে, এই ত্রুটির জন্য দায়ী রাজ্য সরকারই। কারণ যাত্রী ও পরিবহণ সংক্রান্ত সমস্ত বিষয় দেখার দায়িত্বে রয়েছে মেহবুবা মুফতি সরকার। কেন্দ্রের দায়িত্ব কেবল তাদের পাহারা দিয়ে নিয়ে যাওয়া। নথিভুক্ত না হওয়া একটি বাস যে ভাবে জম্মু থেকে অমরনাথের পথে বালতাল পর্যন্ত গিয়ে ফের জম্মুর দিকে ফিরছিল, তাতে যে নিরাপত্তার প্রশ্নে বড়সড় গাফিলতির প্রমাণ মিলছে তা মেনে নিয়েছেন জম্মু-কাশ্মীরের উপ-মুখ্যমন্ত্রী নির্মল সিংহ।

Advertisement

আরও পড়ুন: লস্কর না হিজবুলের হাত, ধন্দে গোয়েন্দারা

আজ সকাল থেকেই নর্থ ব্লকে শুরু হয় একের পর এক বৈঠক। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গে বৈঠক করেন ডোভাল। ছিলেন আই বি এবং র-প্রধানও। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জম্মু-কাশ্মীরের অর্থমন্ত্রী হাসিব দ্রাবু ও বিজেপির কাশ্মীর বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত রাম মাধব। পরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয় রাজনাথেরও। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, এ যাবৎ মুখ বন্ধ রেখেছিলেন রাজনাথ। কিন্তু আজ তিনি পাল্টা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক কাশ্মীরের দায়িত্বে রয়েছে নামেই। আসলে গোটাটাই নিয়ন্ত্রণ করেন সাউথ ব্লকে ‘দারোগা’ বলে পরিচিত ডোভালই। রাজনাথ জানান, কাশ্মীর প্রশ্নে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে। কেবল আপৎকালীন পরিস্থিতিতে মন্ত্রকের সঙ্গে আলোচনায় বসলে সমাধানসূত্র খুঁজে পাওয়া মুশকিল।

পারস্পরিক এই তরজার মধ্যেই জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য যে দেশ জুড়ে জনমত তৈরি হয়েছে, তা বুঝতে পারছে কেন্দ্র। কাশ্মীরি সমাজের সব অংশই অমরনাথ হামলার নিন্দা করায় তিনি স্বস্তি পেয়েছেন বলে মন্তব্য করেছিলেন রাজনাথ। তাতে টুইটারে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে। এই চাপ সামলানো যে কঠিন, তা মেনে নিচ্ছেন স্বরাষ্ট্র কর্তারাই।

আতঙ্ক-যাত্রা

বিকেল সাড়ে ৪টেয় শ্রীনগর থেকে জম্মু রওনা দেয় তীর্থযাত্রীদের বাস


৬টা নাগাদ অনন্তনাগের আগে বাতাঙ্গু-তে বাসের টায়ার ফাটে


হাব্বা খাতুন পেট্রোল পাম্পে চাকা পাল্টাতে লাগে প্রায় সওয়া ঘণ্টা


৮টা ১৭। খানবালের পথে এস অটোমোবাইলের সামনে প্রথম বার গুলি। চালক বাস থামাননি


৮টা ২০। আরও আন্দাজ ৭০ মিটার এগোতেই রাস্তার এক ধার থেকে বাসে ফের গুলিবর্ষণ


তাতেও না থেমে চালক বাস নিয়ে যান খানবাল পুলিশ লাইনে

প্রশ্ন:


বাসের নম্বর বা যাত্রীদের নাম কেন নথিভুক্ত করা হয়নি


জম্মু থেকে অমরনাথ ঘুরে জম্মু ফিরছিল বাস। এক বারও কেন সেটি আটকানো হয়নি


হামলকারী কারা? মতপার্থক্য রাজ্য ও কেন্দ্রের

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন