Coronavirus

লকডাউন শেষ হলেও করোনা যায়নি, সাবধানবাণী মোদীর

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘মাস্ক ছাড়া বাইরে বেরোচ্ছেন মানে, নিজেকে, নিজের পরিবারের শিশু, প্রবীণ-সহ সবাইকে বিপদে ফেলছেন।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২০ ১৭:৩৫
Share:

জাতির উদ্দেশে ভাষণ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। ইউটিউবের ভিডিয়ো থেকে নেওয়া ছবি।

করোনা কালে জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর সপ্তম ভাষণ। লকডাউন শেষ হলেও করোনা এখনও বিদায় নেয়নি। সতর্কবার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গত কয়েক মাসে দেশবাসীর চেষ্টায় করোনা পরিস্থিতি অনেকটাই শুধরেছ। কিন্তু সেই পরিস্থিতি থেকে ফের নতুন করে করোনার বাড়বাড়ন্ত মেনে নেওয়া যায় না, বললেন প্রধানমন্ত্রী।

Advertisement

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে করোনার সংক্রমণ ধীরে ধীরে কমছে। গতকাল সোমবারই কেন্দ্র নিযুক্ত বিশেষজ্ঞ প্যানেল জানিয়ে দিয়েছে, করোনার শিখর পেরিয়ে এসেছে দেশ। তবে একই সঙ্গে করোনা সংক্রান্ত বিধিনিষেধে বিন্দুমাত্র ঢিলেমি দেওয়া চলবে না বলেও বার্তা দিয়েছেন কমিটির সদস্যরা। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণেও সেই সতর্কবার্তা। তিনি বলেন, ‘‘জনতা কার্ফু থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত দেশবাসী এক লম্বা সফরের মধ্যে দিয়ে এসেছি আমরা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আর্থিক কর্মকাণ্ডেও গতি নজরে আসছে। আমাদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষ জীবনকে গতি দেওয়ার জন্য ঘর থেকে বাইরে বেরোচ্ছেন।’’

দেশ জুড়ে শুরু হয়েছে উৎসবের মরসুম। কিন্তু সেই উৎসবে গা ভাসিয়ে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা পরিস্থিতিকে ফের খারাপ অবস্থায় নিয়ে যাওয়া যাবে না বলে দেশবাসীকে সাবধান করেছেন মোদী। বলেন, ‘‘উৎসবের সময় বাজারে ভিড় লক্ষ করা যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের ভুললে চলবে না যে লকডাউন চলে গেলেও ভাইরাস যায়নি। গত সাত আট মাসে প্রত্যেক ভারতীয়র চেষ্টায় দেশ আজ যে পরিস্থিতিতে রয়েছে, তাকে বিগড়াতে দেওয়া যাবে না। বরং আরও শুধরাতে হবে।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: কাগজ নয়, বিজেপিকে বাইরের রাস্তা দেখাব, সিএএ মন্তব্যে নড্ডাকে তোপ মহুয়ার

ইউরোপ আমেরিকার চেয়ে ভারতের পরিস্থিতি ভাল বলে তুলনা করে প্রধানমন্ত্রীর দাবি, ‘‘সুস্থতার হার ভাল। মৃত্যু হার কম। ভারতে যেখানে প্রতি ১০ লক্ষে সাড়ে ৫ হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, ব্রাজিল-আমেরিকায় সেই হার ২৫ হাজারের কাছাকাছি। প্রতি ১০ লক্ষে মৃত্যু হার ৮৩। কিন্তু ব্রাজিল, আমেরিকা, ইংল্যান্ডের মতো বহু দেশে এই সংখ্যা ৬০০-র বেশি। দেশে ৯০ লক্ষের বেশি বেড রয়েছে। কাজ করছে ১২ হাজার কোয়রান্টিন সেন্টার। করোনা টেস্টিং-এর জন্য চলছে ২ হাজারের বেশি ল্যাব। দেশে টেস্টের সংখ্যা ১০ কোটি পার করে যাবে। করোনার লড়াইয়ে টেস্ট বৃদ্ধি আমাদের শক্তি জুগিয়েছে।’’ কিন্তু এই পরিসংখ্যান দেখে উল্লসিত হওয়ার কারণ নেই বলেও সাবধান করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

আরও পড়ুন: চিনকে চাপে রাখতে তাইওয়ান তাস নয়াদিল্লির, বাড়ছে বাণিজ্যিক যোগাযোগ

এখনও অনেক মানুষ মাস্ক পরছেন না। অনেকে আবার আগে পরলেও কার্যত ভীতি দূরে সরিয়ে মাস্ক পরার অভ্যাস ত্যাগ করেছেন। জাতির উদ্দেশে ভাষণে সেই প্রসঙ্গ তুলে তাঁদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সাবধানবাণী, ‘‘অনেক ভিডিয়ো, ছবিতে দেখা যাচ্ছে, কিছু লোক মাস্ক পরছেন না। তাঁরা হয় ভীতি কাটিয়ে উঠেছেন, নয়তো খুব হাল্কা ভাবে নিচ্ছেন। কিন্তু এটা একদমই ঠিক নয়। আপনারা মাস্ক ছাড়া বাইরে বেরোচ্ছেন মানে, নিজেকে, নিজের পরিবারের শিশু, প্রবীণ-সহ সবাইকে বিপদে ফেলছেন।’’ ইউরোপ-আমেরিকার অনেক দেশে করোনা কমতে কমতেই হঠাৎ করে আবার লাফিয়ে বাড়ছে— দেশবাসীকে সতর্ক করতে এই উদাহরণও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। টেনে এনেছেন সন্ত কবীরের বাণী, পাকা ফসল দেখেই খুশি হওয়া ঠিক নয়। ফসল ঘরে না ওঠা পর্যন্ত উৎফুল্ল হওয়ার কারণ নেই।

মোদীর বক্তব্যে উঠে এসেছে ‘রামচরিত মানস’-এ রোগ-ভোগ নিয়ে হুঁশিয়ারির কথাও— আগুন, শত্রু, পাপ, ভুল ও রোগ— এদের কখনও ছোট মনে করবেন না। এই প্রসঙ্গেই উঠে এসেছে টিকা নিয়ে গবেষণার কথা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘ভারত সহ বিশ্বের বহু দেশে টিকা আবিষ্কারের চেষ্টা চলছে। দিনরাত পরিশ্রম করে টিকা আবিষ্কারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ভারতের বিজ্ঞানীরাও। যতদিন পুরো চিকিৎসা না আসছে, হালকা ভাবে নেবেন না।’’ সোশ্যাল মিডিয়া থেকে প্রচলিত সংবাদ মাধ্যমের সবাইকে এই সাবধানতার বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার আর্জিও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

মোদীর বার্তা:

• দো গজ কি দূরি, সময় সময় সাবান দিয়ে হাত ধোয়া এবং মাস্ক পরা ভুলবেন না

• কিন্তু সতর্কতা কমানো একদমই ঠিক নয়, তা হলে সেই খুশি দুঃখে পরিণত হতে পারে

• উৎসবের সময় আনন্দের সময়, খুশির সময়

• যতক্ষণ না টিকা আবিষ্কার হচ্ছে, ততক্ষণ ঢিলা দেওয়া যাবে না

• অনেকগুলি টিকার কাজ চলছে দেশে

• আমাদের দেশের বিজ্ঞানীরাও জানপ্রাণ দিয়ে লড়ছেন

• বহু দেশ টিকা আবিষ্কারের জন্য কাজ করছেন

• টিকা না আসা পর্যন্ত বিধি নিষেধে কোনও শিথিলতা দেখাবেন না

• আমেরিকা-ইউরোপের বহু দেশের চেয়ে করোনার লড়াইয়ে এগিয়ে ভারত

• জনতা কার্ফু থেকে আজ পর্যন্ত অনেক প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে এসেছি আমরা

• অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডেও গতি এসেছে

• উৎসবের মরসুমে করোনা ধীরে ধীরে কমছে

• তবে আমাদের ভুললে চলবে না, লকডাউন চলে গেলও ভাইরাস যায়নি

• গত কয়েক মাসে দেশবাসীর প্রচেষ্টায় পরিস্থিতি অনেকটা শুধরেছে

• দেশে সুস্থতার হার অনেক বেশি, মৃত্যু হার কমেছে

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন